সাবেক এমপিদের গাড়ি নিলামে ওঠেনি প্রত্যাশার অর্ধেক দরও
Published: 17th, February 2025 GMT
সাবেক কয়েকজন সংসদ সদস্যের (এমপি) আমদানি করা ২৪টিসহ মোট ৪৪ গাড়ি নিলামে উঠেছে। এমপিদের গাড়িগুলো টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার মডেলের। বিলাসবহুল এসব গাড়ির বেশির ভাগেরই দাম শো-রুমে ৮ কোটি টাকার বেশি। নিলামে সর্বোচ্চ তিন কোটি ১০ লাখ টাকা দর উঠেছে মাত্র একটি গাড়ির। সাবেক এমপিদের আমদানি করা ৯টি ল্যান্ড ক্রুজারের দামই দেননি কোনো ক্রেতা। তাদের আনা ২৪ গাড়ির মধ্যে ১৫টিতে আগ্রহী ক্রেতা থাকলেও তারা সংরক্ষিত দামের অর্ধেকেরও কম দর দিয়েছেন।
সোমবার টেন্ডার বাক্স উন্মুক্ত করে এ ঘটনায় হতবাক হন কাস্টমস কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রত্যাশিত দামের চেয়ে অনেক কম দর পাওয়ায় গাড়িগুলো আবার নিলামে তোলা হতে পারে। এসব গাড়ির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সিদ্ধান্ত চাওয়া হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেরও (এনবিআর)।
আমদানি করা পণ্য জাহাজ থেকে খালাস করে বন্দর ইয়ার্ডে রাখার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে সরবরাহ নিতে হয়। এ সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ না নিলে নিয়ম অনুযায়ী সেটি নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করেছিলেন তৎকালীন এমপিরা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। শুল্কমুক্ত সুবিধাও বাতিল করে এনবিআর। তাতে এসব গাড়ি ফেলে যান সাবেক এমপিরা। তাদের ২৪টিসহ এ দফার প্রথম ধাপে মোট ৪৪টি গাড়ি বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এ নিলাম করে। আগ্রহী ক্রেতার সংখ্যা বাড়াতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে এবং ঢাকা-চট্টগ্রামে সরাসরি বাক্সে নিলামের মাধ্যমে দর গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গাড়িগুলো নিলামে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সরাসরি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গত ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সাবেক এমপিদের ২৪টিসহ মোট ৪৪টি গাড়ি নিলামে বিক্রির ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে নিলামের মাধ্যমে প্রস্তাবিত দর নিতে থাকে। ৪৪টির মধ্যে ৩৫টি গাড়ির বিপরীতে ১৪৩টি আবেদন ও দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। এর মধ্যে সাবেক এমপিদের ২৪টি গাড়ির মধ্যে টয়োটা ব্র্যান্ডের ৯টি ল্যান্ড ক্রুজারের জন্য কোনো আবেদন ও দরপ্রস্তাব জমা পড়েনি। বাকি ৩৫টি গাড়ির মধ্যে সর্বোচ্চ দর পড়েছে সাবেক এমপি এস এম কামাল হোসেনের আমদানি করা গাড়ির। এটির দর পড়েছে তিন কোটি ১০ লাখ টাকা। শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে আমদানি করা ২০টি গাড়ির দর উঠেছে দুই লাখ থেকে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকার মধ্যে। অথচ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানি ব্যয় ও শুল্ক মিলিয়ে গাড়িগুলোর সংরক্ষিত দর নির্ধারণ করে ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রথম নিলামে অংশ নিয়ে গাড়ি কিনতে হলে তাকে রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশ বা তার বেশি সর্বোচ্চ দরদাতা হতে হবে। এ হিসাবে প্রতিটি গাড়ি কিনতে ন্যূনতম ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর দিতে হবে। ২৫ শতাংশ করসহ এই গাড়ির সর্বনিম্ন দাম পড়ার কথা ছিল ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
নিলামে অংশ নেওয়া এস এ ট্রেডিং অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো.
চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার সাকিব হোসেন বলেন, সাবেক এমপিদের আনা ২৪টি গাড়ি একবারেই নতুন। আমাদের প্রত্যাশা ছিল নিলামে ভালো দাম মিলবে। প্রত্যাশার অর্ধেক দামও মেলেনি। রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশ কাভার করেছে এমন গাড়ি মাত্র ১৪-১৫টি। নিলামে ওঠা গাড়ির ব্যাপারে তাই আলোচনা হবে নিলাম কমিটির পরবর্তী সভায়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে এনবিআর।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব ক এমপ দ র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’