মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ২ মামলা
Published: 21st, February 2025 GMT
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা ও অস্ত্র আইনে বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করে পুলিশ।
চাঁদ উদ্যান এলাকায় বুধবার মধ্যরাতের ওই অভিযানের সময় নিহত দু’জন চিহ্নিত সন্ত্রাসী বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ সময় পাঁচজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
নিহত দুইজন হলেন– মিরাজ হোসেন ও মো.
একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে মোহাম্মদপুর এরই মধ্যে ‘হটস্পট’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার বলেন, ‘বুধবার মধ্যরাতে চাঁদ উদ্যানে লাউতলায় ১২ থেকে ১৫ সন্ত্রাসী অপরাধ সংঘটনের পূর্ব প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ খবর পেয়ে যৌথ বাহিনী সেখানে অভিযানে যায়। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর বেশ কিছুক্ষণ গোলাগুলি হয়। এতে দু’জন নিহত হয়েছে। পাঁচজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ৮-১০ জন পালিয়ে গেছে।’
গোলাগুলিতে পুলিশের কেউ আহত হয়েছেন কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উল্লেখযোগ্য আহত নেই। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জুম্মনের বিরুদ্ধে আটটি ও মিরাজের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার পাঁচজন হলো- ভোলার দুলারহাটে নীলকমল এলাকার মো. হোসেন, লালমোহন উপজেলার মিরাজ, মমিনুল, মেহেদী এবং বরিশালের মুলাদী উপজেলার সেলিমপুর গ্রামের আল আমিন। তারা সবাই চাঁদ উদ্যান ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় ভাড়া থাকে।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চাঁদ উদ্যান এলাকায় ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ১২টার দিকে যৌথ বাহিনীর একটি দল অভিযান চালায়। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা একটি গলির দুই পাশে ঘেরাও করলে সন্ত্রাসীরা একটি একতলা ভবনের ছাদ থেকে আভিযানিক দলটির ওপর অতর্কিত গুলি চালায়। আভিযানিক দলটি আত্মরক্ষার্থে তৎক্ষণাৎ পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ৫ সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ আটক করতে সক্ষম হয়। পরে বাড়িটিতে তল্লাশি চালিয়ে ছাদের ওপর থেকে দু’জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি এবং একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুরে চাঁদ উদ্যান ৬ নম্বর রোডে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাসার সামনে মানুষের জটলা। সবার চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। অপরিচিত কাউকে দেখলেই নিজেদের মধ্যে কানাঘুষা করছেন। প্রশ্ন করলে যতটা পারছেন কম কথা বলে বিদায় দিচ্ছেন। পরিস্থিতি বোঝার জন্য এ প্রতিবেদক দাঁড়ালে এক পর্যায়ে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘এই বাড়িতে দুজন মারা গেছে। তাদের কারণে সাধারণ মানুষ খুব অতিষ্ঠ। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই ক্ষতি করত তারা।’
এই রোডে চারটি টিনশেডের বাড়ি আছে। সর্বশেষ বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় দুটি কক্ষ। সেখানে বেশ কয়েকজন ভাড়া থাকেন। সরু সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হয়। একটি কক্ষে চায়ের দোকানি হাসনাইন হাসানসহ পাঁচজন থাকেন। বাড়ির সামনেই হাসনাইনের দোকান। রাতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘১২টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাসার ভেতরে প্রবেশ করার সময় দুটি গাড়িতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা আসেন। কোথায় যাচ্ছি, জিজ্ঞেস করেন। আমাকে পাশের মুদি দোকানে বসতে বলেন।
দোকানের ভেতরে আসার পর আর কিছু দেখিনি। পরে জানতে পারি পাঁচজনকে আটক করে নিয়ে গেছে যৌথ বাহিনী।’
ঘটনাস্থলে তোলা বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায়, টিনের চালায় রক্তাক্ত অবস্থায় দু’জন পড়ে আছে। তাদের মধ্যে নিহত জুম্মনের হাতের মুঠোয় চাপাতি, মিরাজের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এলাকার অনেকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের একজন স্থানীয় বাসিন্দা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, রাত ১২টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আসেন। গাড়ির শব্দ ও চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় রাস্তা থেকে বারবার বলা হচ্ছিল, ‘অস্ত্র ফেলে দাও, আত্মসমর্পণ করো’। এভাবে অনেক সময় চলে যায়। এর পর গুলির শব্দ শোনা যায়। তার পরও একই কথা– ‘অস্ত্র ফেলে দাও, আত্মসমর্পণ করো’।
যে বাড়িতে অভিযান চলে সেটি তালুকদারের বাড়ি নামে পরিচিত। বাড়ির ভাড়াটিয়া আবুল কালাম বলেন, ‘টিনের ছাপরা বাড়িতে ১১টি পরিবার থাকে। অভিযানের সময় গুলির শব্দ পেয়ে কেউ ঘরের বাইরে যেতে সাহস করেনি।’
চাঁদ উদ্যান ৮ নম্বর রোডে সাদ্দাম মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া মিরাজ। ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায় নিহত মিরাজের পরিবারের সদস্যদের ঘিরে প্রতিবেশীদের ভিড়। তারা মিরাজ সম্পর্কে কিছুই বলতে চাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে মিরাজের ছোট বোন নুসরাত আক্তার নূপুর বলেন, ‘মিরাজ রাত ১০টার পর বাসা থেকে বের হয়। এর পর আর বাসায় ফেরেনি। কয়েকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে রাত ৩টার পর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় পাই।
মিরাজ এর আগে কখনও গ্রেপ্তার হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল মিরাজ। তবে কী কারণে সেটা বলতে পারছি না।’ প্রতিবেশীরা বলেছেন, মিরাজ ও জুম্মন কবজি কাটা আনোয়ার গ্রুপের হয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারত না। কিছু দিন আগে জেল থেকে বের হয়ে আসে তারা। প্রতিদিনই তারা এলাকায় আতঙ্ক ছড়াত।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুনোখুনির কারণে গত কয়েক মাসে বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছে মোহাম্মদপুর। বখাটে ও সন্ত্রাসীদের একাধিক গ্রুপের সদস্যদের প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। সম্প্রতি মোহাম্মদপুর থেকে কবজি কাটা গ্রুপের প্রধান আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যা ব। আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন সময়ে অন্তত সাতজনের কবজি কেটে ‘উল্লাস’ করা হয়েছে। সেসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। র্যা ব বলছে, তিনি ‘শুটার আনোয়ার’ নামেও পরিচিত। জানা গেছে আনোয়ার গ্রুপের কৌশল হলো– যে ব্যক্তির ওপর হামলা করা হবে, তার আশপাশে রাস্তায় কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করা। এর পর তারা যানজট কমাতে সহযোগিতা করার নামে কৃত্রিম ব্লক (বাধা) সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে আনোয়ার এসে ওই ব্যক্তির ওপর হামলা করে। আনোয়ারের সামনে ও পেছনে তার সহযোগীরা থাকে।
চাঁদ উদ্যান ৫ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর বাসায় জুম্মন পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকত। সেখানে গিয়ে জানা গেছে, গত মাসে স্ত্রী ও শিশুসন্তান নিয়ে এই বাসায় ওঠে জুম্মন। ভাড়া নেওয়ার সময় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে আল্লাহ করিম মার্কেটের নিচতলায় এস আলম কম্পিউটারের দোকানে চাকরি করত বলে পরিচয় দিয়েছিল। তবে স্থানীয় আরিফ, রুহুল আমিন, ফারুক হোসেন বলেন, জুম্মন সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। তারা অস্ত্রসহ মহড়া দিত। রুহুল আমিন বলেন, বুধবার বিকেলেও সন্ত্রাসীরা ছুরি-চাপাতি নিয়ে রাস্তায় মহড়া দিয়েছে। এরা প্রতিদিন ছিনতাই করত। এ এলাকার লোকজন সন্ধ্যার পর চলাচল করতে ভয় পায়।
আল্লাহ করিম মার্কেটের নিচতলায় এস আলম কম্পিউটারের দোকানে জুম্মনের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছে সমকাল। দোকানি শামসুল আলম বলেন, এই নামের কেউ কখনও তাঁর দোকানে কাজ করেনি। ছবি দেখানো হলেও তিনি তাকে চিনতে পারেননি।
কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য
স্থানীয়রা জানায়, চাঁদ উদ্যান, লাউতলা, বছিলা ৪০ ফুট, সাতমসজিদ হাউজিং ও সোনা মিয়ার টেক এলাকায় বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে। তারা দিন-রাতে যে কোনো সময় সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করে সব ছিনিয়ে নেয়। পাশাপাশি প্রতিদিনই ১৫-২০ জন একত্র হয়ে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। তাদের ভয়ে লোকজন মুখ খুলতে চায় না। কেউ মুখ খুললেই তার এবং পরিবারের সদস্যদের ওপর চালানো হয় ভয়াবহ নৃশংসতা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র হ ম মদপ র থ ম হ ম মদপ র জ ম মন র উপজ ল র র সদস য পর ব র পর চ ত এল ক র এল ক য় ত র হয় র ওপর র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?