Prothomalo:
2025-07-31@21:47:25 GMT

রাশিয়া হাসছে, ইউরোপ কাঁদছে…

Published: 25th, February 2025 GMT

সবাই আশা করেছিল, নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে আচরণ করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলে তিনি রাষ্ট্রনায়কোচিত, গঠনমূলক ও সুসংহত আচরণ করবেন। ২০ জানুয়ারি অভিষেকের সময় তিনি নিজেকে একজন ‘শান্তি স্থাপনকারী ও ঐক্যবাদী’ বলে দাবি করায় সেই আশা আরও দৃঢ় হয়েছিল। কিন্তু এর পর থেকে প্রতিদিনই এমন সব ঘটনা তিনি ঘটাচ্ছেন যে এই আশা বড় ভুল বলে প্রমাণিত হচ্ছে।

যাঁরা বিশ্বাস করেন যে যুক্তরাষ্ট্র ন্যায়, গণতন্ত্র ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের পক্ষে দাঁড়ায়, তাঁদের জন্য গত সপ্তাহটি ছিল সবচেয়ে হতাশাজনক। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জন্য সপ্তাহটি ছিল প্রচণ্ড মর্মান্তিক।

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে সংলাপ আমাদের মোটেই বিস্মিত করেনি। কেননা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সমমনা দেশ ও রাজনৈতিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা নিয়মভিত্তিক বিশ্ব্যবস্থার চেয়ে অল্পসংখ্যক পরাশক্তি নিয়ে সংগঠিত একটি বিশ্বব্যবস্থায় বিশ্বাস করেন।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আমরা দেখেছি, গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেতাদের চেয়ে স্বৈরাচারী দেশের নেতা, যেমন ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং–উনের সঙ্গে কথা বলতে বেশি পছন্দ করেছিলেন।

কিন্তু আমরা যেটা আশা করিনি সেটা হলো, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির চেয়ে তিনি রাশিয়ার কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্টের প্রতি বেশি সহানুভূতি ও নীতিগত ঐক্য দেখাচ্ছেন।
সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হচ্ছে, ট্রাম্প জেলেনস্কিকে নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় থাকা একজন স্বৈরশাসক বলেছেন, তাঁর গণতান্ত্রিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ প্রতিবেশী দেশে আক্রমণের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত স্বৈরশাসক পুতিনকে তিনি ছাড় দিয়েছেন।

ট্রাম্প যখন সংবাদ সম্মেলনে এগুলো বলেছেন, সেটা তিনি মিথ্যা বলেছেন। এ ধরনের মিথ্যা বলা তাঁর জন্য স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, জেলেনস্কির প্রতি জনসমর্থন মাত্র ৪ শতাংশ। অথচ সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, এই সমর্থন প্রায় ৬০ শতাংশ।

এখন জি–৭–এর অন্য ছয় সদস্যরাষ্ট্রের (জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য, জাপান ও কানাডা) কী করা দরকার? সত্যটা বলার জন্য তাদের আলাদা বিবৃতি দেওয়া দরকার। তা না হলে রাশিয়ার কাছে হাসির আরও কারণ থাকবে, আর আমাদের সবার জন্য থাকবে কান্নার কারণ।

ট্রাম্প আরও মিথ্যা বলেছেন যে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। বাস্তবে এর তিন ভাগের এক ভাগ অর্থ তারা ব্যয় করেছে।

মিথ্যার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইউক্রেন সরকারকে গণতান্ত্রিক ও বৈধতা পেতে হলে সেখানে অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে।

এটা মিথ্যার চেয়েও খারাপ। কেননা, রাশিয়ান প্রপোগান্ডা এটা। সত্য হচ্ছে, ইউক্রেনের পার্লামেন্টে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ভোট স্থগিত করে। কেননা, একটা দেশে যখন যুদ্ধ চলছে এবং দেশটি যখন সামরিক আইনে চলছে, সেখানে ভোট অসম্ভব।

সেই সিদ্ধান্ত ছিল গণতান্ত্রিক। সব রাজনৈতিক দল তাতে সমর্থন দিয়েছিল। তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছিল যে সামরিক আইন তুলে নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ইউক্রেনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

জেলেনস্কির ওপর ট্রাম্পের এই আক্রমণে তাঁর প্রতি ইউক্রনীয়দের সমর্থন আরও দৃঢ় হবে।

ট্রম্পের কথায় রাশিয়ানরাও যে বিস্মিত, সেটা প্রকাশ করতে তাঁরা মোটেও লজ্জা পাচ্ছেন না। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং রাশিয়া সিকিউরিটি কাউন্সিলের সহ-চেয়ার দিমিত্রি মেদভেদেভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘এই কথা যদি তিন মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের মুখ থেকে শুনতাম, তাহলে আমি উচ্চ স্বরে হেসে উঠতাম।’

তিনটি উপসংহারে পৌঁছানো এখন অনিবার্য। প্রথমত, ইউরোপের দেশগুলো ও সব মিত্রকে ইউক্রেনের পাশে শক্ত করে দাঁড়াতে হবে। সেটা শুধু অস্পষ্ট পরিকল্পনা দিয়ে নয়, দ্রুত ও সিদ্ধান্তমূলক একটি পরিকল্পনা নিয়ে তাদের দাঁড়াতে হবে, যাতে শান্তি আলোচনা শুরু হলে নিজেরা একটা শক্ত অবস্থান দেখাতে পারে। ইউক্রেন হলো ইউরোপ। তারা ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য লড়াই করছে।

আমেরিকান ও রাশিয়ান দৈত্যের হাত থেকে তাদেরকে ইউরোপের লোকদেরকেই রক্ষা করতে হবে।

দ্বিতীয় উপসংহারটি হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেকে কেবল সেই পুরোনো আমলের স্তালিন, রুজভেল্ট ও চার্চিলের মতো নেতা বলে ভাবছেন না, তিনি নিজেকে গ্যাংস্টারও ভাবছেন।

ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র এত দিন যে সমর্থন দিয়ে এসেছে, তার বিনিময়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের খনিজ তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু জেলেনস্কি সেটা প্রত্যাখ্যান করায় তিনি ক্ষুব্ধ হন।

এখানে শিক্ষাটা হলো, সব ছোট ও মাঝারি শক্তির দেশকেই আমেরিকান এই গ্যাংস্টারকে মোকাবিলা করতে হবে।

তৃতীয় উপসংহারটি হলো, জি-৭, ন্যাটো ও জি-২০-এর মতো আন্তর্জাতিক জোটে এত দিন কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন সদস্যদেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র যে তাদের সঙ্গে নেই, সেটা ধরেই এই জোটগুলোকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার কথা ভাবতে হবে। এর মানে এই নয় যে আন্তর্জাতিক এসব জোট থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিতে হবে। এর মানে হচ্ছে, অন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের মধ্যে স্বতন্ত্রভাবে আলাপ করতে হবে, যাতে তারা আমেরিকান আচরণের মুখে শক্তিশালী থাকতে পারে।

গত সপ্তাহে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জি-৭-এর বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র স্বক্ষর করতে রাজি হয়নি। এর কারণ হলো, বিবৃতিতি ‘রাশিয়ানদের আগ্রাসন’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা হয়েছিল।

এখন জি–৭–এর অন্য ছয় সদস্যরাষ্ট্রের (জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য, জাপান ও কানাডা) কী করা দরকার? সত্যটা বলার জন্য তাদের আলাদা বিবৃতি দেওয়া দরকার। তা না হলে রাশিয়ার কাছে হাসির আরও কারণ থাকবে, আর আমাদের সবার জন্য থাকবে কান্নার কারণ।

বিল ইমোট দ্য ইকোনমিস্টের সাবেক প্রধান সম্পাদক
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ইউক র ন বল ছ ন র জন য ইউর প দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ