আত্মপ্রকাশের একদিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সংগঠক শ্যামলী সুলতানা জেদনী। বৃহস্পতিবার রাত ১১ টা ৫৬ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে এ তথ্য জানান তিনি।

ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির "সংগঠক" পদ থেকে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে পদত্যাগ করলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৭/৮ মাস ছিলো আমার জীবনের অন্যতম অভিজ্ঞতার সময়কাল। পুরো সময়জুড়ে অনেক কিছু বুঝেছি, জেনেছি , শিখেছি। নানা রকম চিন্তাভাবনার মানুষের সাথে মিশতে পারা এবং তাদের সাথে গল্প করতে পারা নিঃসন্দেহে আমার জীবনের অন্যতম অধ্যায়।জুলাই/অগাস্টের পর আর সবার মতো আমার মনেও নানা আশা-আকাঙ্ক্ষার উদয় হয়েছে যার পুরোটা জুড়ে ছিলো দেশের মানুষের জন্য কিছু করা এবং গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারার পরিবর্তন। কাজেই গণঅভ্যূত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে এর ভীতকে মজবুত করার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছি। যখন মনে হয়েছে , হাতে সময় কম তবে কাজ অনেক ; ঠিক তখনই সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে এই জায়গাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। চলমান সেমিস্টারেও বেশিরভাগ ক্লাস করার সুযোগ হয়ে ওঠে নি। তবে বিশেষ কারণে সবকিছু থেকে আজ ইস্তফা দিতে হচ্ছে।’

গত ৬ মাসে বোধহয় ১২০ দিনও বাসায় থাকতে পারি নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মায়ের হাতের রান্না খেতে পারি নি। কারণ দেশের নানা প্রান্তের মানুষকে পড়ার জন্য, বোঝার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছি। আমাদের সমাজে মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন এখনও আসে নি। কাজেই যখন রাত ২/৩ টায় বাসায় ফিরতাম , গলির মোড়ের দোকানদার থেকে শুরু করে অনেকে আড়চোখে তাকাতো। এইসব উপেক্ষা করে চলার দারুণ ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা অবশ্য আমাকে দিয়েছে। পড়াশোনা/ নিজের শখ/যত্ন বিসর্জন দেয়া বা কারো কোনো ভাবনা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই কিংবা কোনো অনুশোচনা কাজ করছে না। তবে আজ খারাপ লাগছে এই ভেবে যে , গত ৬ মাস আমার মা-কে আমি ঠিকঠাক সময় দিতে পারি নি বরং বেশিরভাগ সময় উপেক্ষা করে গেছি।

জেদনী বলেন, ‘আমার এইটুকু জার্নিতে আমার মা সবচেয়ে বেশি সাপোর্টিভ ছিলো, কি কি করেছে আমার জন্য সেগুলো বলা এখানে মূখ্য বিষয়ও নয় অবশ্য। সবকিছু বাদ দিয়ে এই জায়গাকে আপন করে নেয়ার ফলে যা কিছু হারিয়েছি, তা নিয়ে মা মাঝেমধ্যে বকা দিলেও আজ যখন আমি এখান থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি; ঠিক তখনই আমার মা'র চোখেও পানি দেখেছি!’

ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জন্য শুভকামনা রইলো। ৫৪ বছরের কুৎসিত ছাত্র রাজনীতির অবসান এই প্লাটফর্মের হাত ধরে হোক, এই প্রত্যাশা! আপনারা সুস্থ ছাত্র রাজনীতির ধারা প্রতিষ্ঠা করুন, স্বজনপ্রীতির অবসান ঘটিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার দিকে অগ্রসর হোন। যোগ্য নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেয়া এবং মানুষকে মর্যাদা দেয়ার বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠুন, মানুষের অধিকারের কথা বলুন।’
 
‘যাদের সাথে এতদিন কাজ করেছি কিংবা গল্প করেছি, তাদের জন্যও শুভকামনা রইলো। আপনারা এগিয়ে যান, সাংগঠনিকভাবে আপনাদের সাথে না থাকলেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রতিবাদে আমি আপনাদের সাথে থাকব, অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার লড়াই আজীবন চলবে। আজকের সিদ্ধান্ত আমার জীবনের অন্যতম কঠিন এবং কষ্টের সিদ্ধান্ত। তবে আবুল মনসুর আহমেদ এর একটা লাইনকে আমি ধারণ করি বলি এখানে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে উঠছে না।’

তবে পদত্যাগের বিষয়ে জানতে জেদনীকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশীদ পদত্যাগ করেন। ইতোমধ্যে তিনি পদত্যাগপত্রও জমা দিয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পদত য গ ল দ শ গণত ন ত র ক ছ ত র আম র জ আম র ম র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

জুভেন্টাস-বরুশিয়ার ৮ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে জয় পায়নি কেউ

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম রাতেই যেন ফুটবলপ্রেমীরা এক অসাধারণ ম্যাচের সাক্ষী হলো। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে তুরিনে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে জুভেন্টাস ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ৪-৪ গোলে ড্র করেছে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ডর্টমুন্ডের জয় যখন প্রায় নিশ্চিত, ঠিক তখনই জুভেন্টাসের নাটকীয় প্রত্যাবর্তনে সবাই হতবাক হয়ে যায়।

ম্যাচের নায়ক ছিলেন জুভেন্টাসের সেই খেলোয়াড় যাকে ক্লাব এই গ্রীষ্মে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল, দুসান ভ্লাহোভিচ। ২৫ বছর বয়সী এই সার্বিয়ান ফরোয়ার্ড বদলি হিসেবে নেমে যেন ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। দুটি গোল করার পাশাপাশি ইংরেজ ডিফেন্ডার লয়েড কেলির গোলে সহায়তাও তিনিই করেছেন। নির্ধারিত সময়ের পরও যখন ডর্টমুন্ড ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল, সেই অবস্থায় শেষ মুহূর্তে এই অবিশ্বাস্য ড্র নিশ্চিত করেন ভ্লাহোভিচ।

আরো পড়ুন:

এমবাপ্পের জোড়া গোলে চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়ালের রোমাঞ্চকর জয়

মেসির গোলে, অ্যাসিস্টে মায়ামির জয়

ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলতে থাকে। ৫২তম মিনিটে ডর্টমুন্ডের করিম আদেয়েমি বাম পায়ের শটে বক্সের বাইরে থেকে প্রথম গোলটি করে দলকে এগিয়ে দেন। এরপরই জুভেন্টাসের তরুণ তারকা কেনান ইলদিজ ডান দিক থেকে নেওয়া এক শটে বল জালে জড়িয়ে সমতা ফেরান। কিন্তু জুভেন্টাস সমর্থকদের এই আনন্দ খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। কারণ, মাত্র এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে আদেয়েমি আবার মাঠে ঝলসে ওঠেন এবং তার পাস থেকে ফেলিক্স এনমেচা বক্সের বাইরে থেকে ডর্টমুন্ডের দ্বিতীয় গোলটি করে বসেন।

ম্যাচের এমন টানটান উত্তেজনার মধ্যেই ৬৭তম মিনিটে ইলদিজ দুর্দান্ত একটি পাস বাড়িয়ে দেন ভ্লাহোভিচের দিকে। ভ্লাহোভিচ ডান পায়ের শটে সহজেই গোল করে স্কোর ২-২ করেন। এরপর আবার ডর্টমুন্ড এগিয়ে যায়। ৭৪তম মিনিটে ইয়ান কৌটো এবং ৮৬তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে বেনসেবাইনি গোল করেন। লয়েড কেলির হ্যান্ডবলের কারণে এই পেনাল্টি পেয়েছিল ডর্টমুন্ড। যখন মনে হচ্ছিল, ডর্টমুন্ড ৪-২ গোলে জয়ী হতে চলেছে, ঠিক তখনই ভ্লাহোভিচ জুভেন্টাসকে বাঁচিয়ে দিলেন।

ম্যাচের ৯০+৩ মিনিটে ডর্টমুন্ডের জয় যখন প্রায় নিশ্চিত, তখন পিয়ের কালুলুর ক্রস থেকে ভ্লাহোভিচ ৯০+৪ মিনিটে সরাসরি শটে গোল করে ব্যবধান ৪-৩ করেন। এবং নাটকীয়তার শেষ এখানেই নয়! ৯৬তম মিনিটে জুভেন্টাসের কেলি গোল করে বসেন এবং ৪-৪ সমতা ফেরান। শেষ পর্যন্ত এই সমতা নিয়েই শেষ হয় ম্যাচ।

দুই দলের এমন গোল উৎসব চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এই নিয়ে সপ্তমবার ঘটল, যেখানে উভয় দলই অন্তত চারটি করে গোল করেছে।

এবারের লিগ-পর্বের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, শীর্ষ আটটি দল সরাসরি শেষ ষোলোতে যাবে এবং পরের ১৬টি দল দুই লেগের প্লে-অফ খেলবে। সেই প্লে-অফ থেকে আরও আটটি দল শেষ ষোলোতে সুযোগ পাবে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুভেন্টাস-বরুশিয়ার ৮ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে জয় পায়নি কেউ