২০৫ সদস্যের পূর্ণ কমিটি ঘোষণা, রিফাতের পদত্যাগ
Published: 28th, February 2025 GMT
গণঅভ্যুত্থানের সমন্বয়কদের নতুন ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ আত্মপ্রকাশের পরদিনই ২০৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছে। এতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার। বুধবার আত্মপ্রকাশ ঘিরে মারামারির ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করার কথা জানান আবু বাকের।
কমিটির প্রধান করা হয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরীকে। সদস্য আছেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৌহিদ সিয়াম ও সংগঠক ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাঈম আবেদীন।
কমিটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে জানিয়ে আবু বাকের বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন পাওয়ার পর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি কেন্দ্রীয় কমিটি। আমরা এখানে কাউকে বাদ দিইনি।’ এদিকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন রিফাত রশীদ। তাঁকে কেন্দ্র করেই মারামারি হয়েছিল। রিফাতের পদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল মাশনূন এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নাঈম আবেদীনকে করা হয়েছে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সংগঠক।
সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য সচিব জাহিদ আহসান, মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আবদুল কাদের, সদস্য সচিব মহির আলম, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাঈম আবেদীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নাঈম আবেদীন বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে– এমন ভুল বুঝিয়ে একটি গোষ্ঠীকে আনা হয়েছিল। ভুল বোঝাবুঝির কারণে মব তৈরি হয়েছে। পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩০ জন কমিটিতে যুক্ত হওয়ার বিষয় তাদের জানানো হলে সব ঝামেলার অবসান হয়। এর পরও বুধবারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমরা জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’
আবু বাকের বলেন, ‘আমরা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি চাই না। জুলাইয়ে ৯ দফাতেও আমরা তা জানিয়েছি। আমাদের সংগঠন কখনও লেজুড়বৃত্তি করবে না। অনেক ছাত্র সংগঠনে অছাত্রও থাকেন। এখানে কেন্দ্রীয় সংগঠনে সর্বোচ্চ বয়স ২৮ বছর হবে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে সাত বছর ধরা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করছি। এটি আহ্বায়ক কমিটি, হাজার লোক রাখা সম্ভব নয়। আহ্বায়ক কমিটি ইউনিটভিত্তিক কমিটি প্রস্তুত করবে। পরে কাউন্সিলের ভিত্তিতে কমিটি হবে।’
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নুরুল গণি সগীর ও খান তালাত মাহমুদ রাফি, ঢাকা কলেজের জুবায়ের হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল করিম ও নুরনবী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেহেদী সজিব, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারাবী জিসান এবং ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার তুহিন আহমেদ। যুগ্ম সদস্য সচিব পদে সালাউদ্দিন আম্মার, সানজানা আফিফা অদিতি, আজিজুল হক ও হাটহাজারী মাদ্রাসার আবরার কাউসার এসেছেন। আর সহমুখপাত্র পদ পেয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারদিন হাসান।
এদিকে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কমিটিতে ঢাবির আধিপত্যের অভিযোগ তুলে কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানান। তবে তারা আলোচনার পথ খোলা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। গতকাল রাতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ছাত্র মাহাদী জাহিন বলেন, ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে গেলে আমরা গুলির সামনে দাঁড়িয়েছি। রামপুরা বাড্ডায় শত লাশ পড়লেও কখনও রাজপথ ছাড়িনি। অথচ প্রাইভেটকে উপেক্ষা করে নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের ঘোষণা আসে মধুর ক্যান্টিন থেকে, সেখানে সরকার পতনের কিছুই হয়নি।
ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শাহেল শেখ সেলিম বলেন, তারা বাংলাদেশে সর্বজনীন দল করতে চাইলে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিশ্চিত করে, সবাইকে সমান অধিকার দিয়ে তারপর সর্বজনীন রাজনীতিতে নামতে হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব সরক র কম ট ত ক কম ট স গঠক স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
ইউটিউবে ভুয়া ‘টক শো’র ছড়াছড়ি, বিভ্রান্ত মানুষ
এক পাশে বেগম খালেদা জিয়া, অন্য পাশে শেখ হাসিনা, মাঝখানে খালেদ মুহিউদ্দীন—ইউটিউবে একটি ‘টক শো’তে তিনজনকে এভাবেই দেখা যায়। যদিও বিষয়টি পুরোটাই ভুয়া।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা কখনোই সুপরিচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের টক শোতে (আলোচনা অনুষ্ঠান) যাননি; কিন্তু ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।
সুপরিচিত নবীন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আলোচিত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় বিশ্লেষক, সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’দের নিয়ে এ ধরনের ভুয়া টক শো তৈরি করা হচ্ছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ইউটিউবে এমন ভুয়া টক শো অনেক রয়েছে।
ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।ডিসমিসল্যাব ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে। তারা বলছে, অধিকাংশ ভিডিওতে মূল সাক্ষাৎকারগুলোকে প্রাসঙ্গিকতার বাইরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যা আদতে ঘটেনি। এসব ভিডিও গড়ে ১২ হাজারবার দেখা হয়েছে।
‘ভুয়া টক শোকে উসকে দিচ্ছে ইউটিউব, যেখানে আসল কনটেন্ট জায়গা হারাচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। এতে বলা হয়, ভুয়া টক শোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। অর্থাৎ সেখান থেকে অর্থ আয়ের সুযোগের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইউটিউবের নিজস্ব নীতিমালা ভঙ্গ করে বানানো এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ইউটিউব নিজেও লাভবান হচ্ছে।
ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।
খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বানানো ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার দিকে মুখ করে দুই নেত্রী অনলাইনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ‘ভার্চু৵য়াল টক শো’তে অংশ নিয়েছেন। যেখানে সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে; কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই দর্শক বুঝবেন, ভিডিওটি ভুয়া। খালেদা জিয়ার নড়াচড়া স্বাভাবিক না। শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর তাঁর মুখভঙ্গির সঙ্গে মিলছিল না। খালেদার ভিডিও ফুটেজ বিকৃত বা টেনে লম্বা করা হয়েছে। উপস্থাপকের হাতের অঙ্গভঙ্গি বারবার একই রকম দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে ক্লিপ কেটে জোড়া লাগিয়ে কথোপকথন তৈরি করে এই ভুয়া টক শো বানানো হয়েছে।
এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরীডিসমিসল্যাব জানায়, ভুয়া টক শোটি চলতি মাসের শেষ নাগাদ ফেসবুকে দুই লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটির ওপর একটি লোগো ছিল ‘টক শো ফার্স্ট নিউজ’ নামে, যা একই নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে একই ভিডিওটি আরও ১ লাখ ৩৫ হাজারবার দেখা হয়েছে। ওই চ্যানেলে এমন বেশ কিছু ক্লিপ ছিল, যা একইভাবে বিকৃত বা সাজানো হয়েছিল।
প্রবাসী সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউবে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে একটি চ্যানেলে টক শো উপস্থাপনা করেন। সম্প্রতি তাঁর ছবি, ফুটেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লিপ যুক্ত করে প্রচুর ভুয়া টক শো তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাব এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। তারা ইউটিউবে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন টক শো’ লিখে খোঁজ করে অন্তত ৫০টি চ্যানেল চিহ্নিত করেছে। খালেদ মুহিউদ্দীন ছাড়াও এসব চ্যানেলে অন্যান্য উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বক্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চে খুঁজে পাওয়া এসব চ্যানেলের মধ্যে ২৯টি চ্যানেল অন্তত একটি বিকৃত টক শো প্রচার করেছে।
ডিসমিসল্যাব বলছে, চিহ্নিত ২৯টির মধ্যে ২০টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। বাকি চ্যানেলগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তৈরি। পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।পর্যালোচনা করা ভিডিওগুলোতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ (নেপথ্যের দৃশ্য) বদলানো, ফুটেজ কাটাছেঁড়া বা জুম করা এবং মূল প্রসঙ্গ বিকৃত করা হয়েছে। অধিকাংশ ভিডিও ইউটিউব, টেলিভিশন শো, ফেসবুক লাইভ এবং অডিও রেকর্ডিং থেকে ক্লিপ জোড়া লাগিয়ে তৈরি। অনেক ক্ষেত্রে, মূল বক্তার ফুটেজে এমন ভয়েসওভার (কথা) জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে নেওয়া এবং যার সঙ্গে কথোপকথনের কোনো সম্পর্ক নেই; কিন্তু বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘ড. ইউনূস চীন সফরের পরপরই পদত্যাগ করলেন’। যেখানে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করা হয়। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে জানতে পারে যে তাদের অনুমতি ছাড়া লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির আলাদা আলাদা ফুটেজ জোড়া লাগানো হয়েছে।
ডিসমিসল্যাব বলছে, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের নেতা ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের ফুটেজও এসব ভুয়া টক শোতে ব্যবহার করা হয়েছে।
পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।ভুয়া টক শোর বিষয়ে ডিসমিসল্যাবকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, তিনি দর্শকদের তাঁর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের আধেয়র ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান।
ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভুয়া টক শোগুলোতে বক্তব্য তুলে ধরা হয় মূলত রাজনৈতিক দল ও সরকারকে নিয়ে। ভুয়া টক শোগুলোর ৪০ শতাংশেই অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।
বেশিবার দেখা হয়েছে, এমন পাঁচটি ভুয়া টক শো খুঁজে বের করেছে। এসব টক শোতে প্রচার করা হয়েছে অশনিবার্তা, আলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক আলোচনা নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। পাঁচটি টক শো দুই থেকে ছয় লাখ বার দেখা হয়েছে।
নিজের নিয়মই মানছে না ইউটিউবইউটিউবের স্প্যাম ও প্রতারণামূলক আচরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমন শিরোনাম, থাম্বনেইল বা বিবরণ ব্যবহার করা যাবে না, যার সঙ্গে ভিডিওর প্রকৃত বিষয়বস্তুর মিল নেই এবং যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করে। এসব ভুয়া টক শোতে এ নীতি মানা হয়নি।
ইউটিউবের ছদ্মবেশ ধারণ নিষেধাজ্ঞা নীতিমালায় বলা আছে, অন্য কারও আসল নাম, ব্যবহারকারী নাম, ছবি, ব্র্যান্ড, লোগো বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমতি ছাড়া সাংবাদিক, টক শো উপস্থাপক ও কনটেন্ট (আধেয়) নির্মাতাদের ফুটেজ ব্যবহার করায় এগুলো ইউটিউবের কপিরাইট নীতিমালাও লঙ্ঘন করতে পারে।
ডিজিটাল মিডিয়া–বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ইউটিউব এ ধরনের ভুয়া ভিডিওকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে। এতে গুণগত সাংবাদিকতা পিছিয়ে পড়ে।
২০২২ সালে একটি খোলাচিঠিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছিল, ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মকে অপব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে—যেখানে অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ছড়ানো, মানুষকে প্রতারিত করা, এমনকি সংগঠিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ পর্যন্ত করছে।
মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট বা আধেয় বন্ধ করতে প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতি মনে করিয়ে দিয়ে তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে।