ফিলিস্তিনের গাজায় সব ধরনের মানবিক ত্রাণের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। গাজায় ইসরায়েল-হামাসের প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। খবর আল জাজিরার।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আলোচনা চালিয়ে যেতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত উইটকফ একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। ইসরায়েল ওই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। তবে হামাস এই প্রস্তাব মানতে রাজি হয়নি।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “এই পরিস্থিতির আলোকে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আজ সকালে গাজা উপত্যকায় সবধরনের পণ্য প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
আরো পড়ুন:
গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ল
সৌদি আরবে পৌঁছালেন মার্কো রুবিও
১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শনিবার দিবাগত রাত ১২টায় শেষ হয়। পূর্ব আলোচনা অনুযায়ী, প্রথম ধাপ শেষে দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন হবার কথা ছিল। দ্বিতীয় ধাপের মূল সুর ছিল বাকি জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন।
গত ছয় সপ্তাহজুড়ে দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা, দরকষাকষি ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে এসেছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। কিন্তু ইসরায়েলের অসহযোগিতামূলক আচরণে তা আলোর মুখ দেখেনি।
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের পরিবর্তে প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর মডেল নিয়ে আসেন। এই প্রস্তাব মতে, এপ্রিলের মধ্যভাগ পর্যন্ত সাত দিন করে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো হবে এবং এই সময়ের মধ্যে বাকি সব ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পাবেন।
তবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এটি প্রত্যাখান করেছে। তাদের দাবি, সাময়িক যুদ্ধবিরতি নয়, হতে হবে স্থায়ী সমাধান।
এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত ‘সস্তা ব্ল্যাকমেইল’। নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলেও হামাস দাবি করেছে।
হামাস আরো জানায়, ইসরায়েলের পদক্ষেপ ‘যুদ্ধাপরাধ এবং চুক্তির বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট ‘আক্রমণ’। গাজায় ইসরায়েলের এ ধরনের অনৈতিক সিদ্ধান্ত বন্ধে ব্যবস্থা নিতে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল র প রথম ধ প
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ‘অতিশয় বিরক্তিকর’: ট্রাম্প
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার আগে বিপুল পরিমাণে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে ৫ শিশুসহ অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন। কিয়েভে যুদ্ধের এই পর্যায়ে রাশিয়ার এতটা ব্যাপক হামলাকে ‘অতিশয় বিরক্তিকর’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়া যা করছে, আমি মনে করি, তা অতিশয় বিরক্তিকর। আমি মনে করি, এটা সত্যিই জঘন্য।’
ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, কয়েক দিনের মধ্যে তাঁর বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রাশিয়া সফরে যাবেন। বর্তমানে তিনি মধ্যপ্রাচ্য সফরে রয়েছেন।
গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় গ্রহণ করেই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ শুরু করেন ট্রাম্প। এরপর স্টিভ উইটকফ বেশ কয়েকবার মস্কো সফর করেছেন। সফরে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। তখন ইউক্রেনে হামলা কমিয়েছিল রাশিয়া।
কিন্তু জুলাইয়ের মাঝামাঝি যুদ্ধ শেষ করতে রাশিয়াকে ৫০ দিনের সময় বেঁধে দেন ট্রাম্প। সম্প্রতি তা কমিয়ে ১০-১২ দিনে নামিয়ে এনেছেন তিনি। বেঁধে দেওয়া এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার তিনি সেই হুমকি পুনরাবৃত্তি করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে হামলা বাড়িয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনে হামলা বাড়ানো নিয়ে সম্প্রতি বারবার হতাশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
‘শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের ডাকা’
শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, কিয়েভে রাশিয়ার আগের দিনের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আমরা যে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছিলাম, তা শেষ হয়েছে।
জেলেনস্কি বলেন, ‘হামলায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন পর্যন্ত ৫ শিশুসহ ৩১ জন নিহত হয়েছেন। নিহত শিশুদের মধ্যে কনিষ্ঠজনের বয়স দুই বছর।’ তিনি জানান, রাশিয়া জুলাই মাসে ইউক্রেনে ৩ হাজার ৮০০–এর বেশি ড্রোন ও প্রায় ২৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। কিয়েভকে নিশানা করেই অধিকাংশ হামলা চালানো হয়েছে।
এদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জেলেনস্কি লেখেন, ‘(ইউক্রেনে) যা ঘটছে, তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ইউরোপীয় নেতারা এবং অন্যান্য অংশীদাররা স্পষ্টভাবে দেখছেন এবং রাশিয়ার নিন্দা জানাচ্ছেন। বিষয়টি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্যান্য বিশ্বশক্তির যৌথ চেষ্টার মাধ্যমেই রাশিয়াকে থামানো সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আগের দিন বৃহস্পতিবার অনলাইনে আয়োজিত এক সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়াকে যুদ্ধ থামাতে ‘চাপ দিয়ে বাধ্য করা’ সম্ভব। স্নায়ুযুদ্ধকালীন হেলসিংকি চুক্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
বক্তৃতায় জেলেনস্কি বলেন, ‘বিশ্ব যদি রাশিয়ার শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্য স্থির না করে, তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায়, যুদ্ধ শেষ হলেও প্রতিবেশী দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে মস্কো।’
ধ্বংসস্তূপ থেকে সন্তানকে উদ্ধারের অপেক্ষায় থাকা এক মা অপর এক ব্যক্তিকে আলিঙ্গন করছেন। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে, ৩১ জুলাই ২০২৫