বিসিএস থেকে গণিত বাদ দেওয়ার সর্বনাশা চিন্তা কেন
Published: 4th, March 2025 GMT
বহুদিন ধরেই আমাদের বিসিএসে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বেশি সুবিধা পাওয়া নিয়ে অন্যদের ক্ষোভ ছিল। তাঁদের ক্ষোভ আমলে নিয়ে যে বিষয়ে সব থেকে বেশি সমস্যা ছিল, তা বাদ দিয়ে দিচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। বিষয়টি হচ্ছে গণিত। এ যেন মাথাব্যথা তাই মাথা কেটে সমাধান নিয়ে আসা।
১২ ফেব্রুয়ারির প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলছে, বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস পরিবর্তন করে ছয়টি আবশ্যিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে পরীক্ষার নম্বর পুনর্বণ্টন করে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয় সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ন্যূনতম নম্বর ৬০ শতাংশ নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন ছয়টি আবশ্যিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে নম্বর পুনর্বণ্টনের যে সুপারিশ করেছে, তাতে গণিতবিষয়ক কোনো কিছু নেই।
বিসিএসে গণিতকে বাদ দেওয়ার কমিশনের এ সুপারিশ অবাক করল। গণিতের জ্ঞান ছাড়া কীভাবে একজন দক্ষ সরকারি কর্মকর্তা পাওয়া যাবে। আমরা সরকারি চাকরিতে বর্তমানে যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, তা হচ্ছে আধুনিকতার অভাব।
পুরোনো প্রজন্মের মানুষ আধুনিক কিছু শিখতে অপারগ। ফলাফল এখনো তাঁদের ই–মেইল লিখলে ফোনে বলে দিতে হয়, সেই ই–মেইল চেক করার জন্য আলাদা লোক আছে। ওনারা মেইলের উত্তর সরাসরি না দিয়ে টাইপিস্টদের দিয়ে চিঠি লিখে তা স্ক্যান করে অন্য কারও সহায়তা উত্তর দেন। কাজকারবারের এমন প্রক্রিয়া শুনে ক্লান্তি আসছে না? জি, এভাবেই যেখানে তিন মিনিটে মেইল রিপ্লাই দেওয়া যায়, তা তিন দিন লেগে যায়।
সামনে এআইভিত্তিক প্রযুক্তি অফিস ব্যবস্থাপনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে। আর তার জন্য দরকার দক্ষ মানবসম্পদ। আমাদের আগের সরকারি কর্মচারীরা এই আধুনিকতার জন্য প্রস্তুত না হলেও কোটা উঠে যাওয়ার পর যে নিয়োগ হয়েছিল, তারা বর্তমান দুনিয়া নিয়ে বেশ ওয়াকিবহাল।
যখন সবাইকে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে খাপ মিলিয়ে চলতে হবে, তখন গণিত না জানা নিয়োগ আমাদের মোটামুটি আরও ১০০ বছর পিছিয়ে দেবে। গণিত ছাড়া কি চলে? গবেষকেরা বলে থাকেন, যাঁরা গণিতে ভালো, তাঁদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকে। তাঁদের ক্রিয়েটিভিটি এবং যেকোনো কিছু নিয়ে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও বেশি। যে দেশ গণিতে যত ভালো, সেই দেশ তত উন্নত। জাপান, সিঙ্গাপুর বা এ রকম দেশগুলোর গণিত কারিকুলাম দেখলেই তা স্পষ্ট হয়। আমাদের চারপাশে তাকালেও তা স্পষ্ট হয়; যে ব্যক্তি গণিতে ভালো, তাঁকে কীভাবে আলাদাভাবে কদর করা হয়।
আমাদের দেশে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ)-এর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের অধিক মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। এসব ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোথাও কখনো প্রশ্ন উঠে না। তাঁদের পরীক্ষাতে গণিত একটা বড় বিষয়। এই মেধা দিয়েই তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বা দেশের ও শীর্ষ স্থানীয় কোম্পানিতে কাজ করছেন। আইবিএর ভর্তি পরীক্ষায় আর একটা বিষয় আছে অ্যানালিটিক্যাল রিজনিং, যা আসলে সবারই কাজে লাগে।
আমাদের অনেক দিনের দাবি ছিল বিসিএস পরীক্ষার আধুনিকায়ন। আর তা করতে গিয়ে কমিশন যে প্রস্তাব করেছে, তাতে গণিত ও মানসিক দক্ষতা ঠিক কোন হিসেবে বাদ দিল, তা আসলেই প্রশ্নসাপেক্ষ। একজন সরকারি কর্মচারীর মানসিক দক্ষতা কি আমরা দেখব না? উনি দেশ চালাবেন, সেখানে নিজের ডিপার্টমেন্টের আয়–ব্যয়ের হিসাব তাঁদের দেখতে হবে না?
বিশ্বের সঙ্গে দর–কষাকষিতে আমাদের আমলারা চরমভাবে দুর্বল। তাঁরা অর্থনীতির অনেক মারপ্যাচের হিসাব দেখতে পান না। যার প্রমাণ আমরা দেখেছি দেশের ক্ষতি হলেও ট্রানজিটসংক্রান্ত চুক্তি বা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো চুক্তিতে দেশের ক্ষতি করে বিদেশিদের সুবিধা দেওয়া। তাঁরা গণিতে পাস করে এসেও ধরতে পারেননি হিসাবের মারপ্যাচে। সেখানে যাঁরা গণিত ছাড়া পাস করে আসবেন, তাঁদের কী অবস্থা হবে?
এখন কথা আসবে এই গণিত তো বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের সুবিধা দিবে। এখানেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রশ্ন আসে। ভারতসহ আশপাশের দেশগুলোতে শিক্ষাব্যবস্থা এমন, তাদের প্রকৌশলীদের অনেকেই মুখে মুখে অঙ্ক করে ফেলেন।
আমাদের দেশের সবাই তো সাধারণ গণিত এসএসসি পর্যন্ত পড়ে এসেছেন। যেহেতু এইচএসসিতে সাধারণ গণিত নেই, তাই এই পরীক্ষা এসএসসির সাধারণ গণিতের ওপরই হওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক থাকে। কিন্তু আধুনিক বিশ্বের বাস্তবতায় এইচএসসিতেও সাধারণ গণিত নিয়ে আসা এখন দরকার।
বিসিএস নিয়ে কিছু প্রস্তাব অবশ্যই ইতিবাচক। ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা আধুনিকীকরণের আরও সুযোগ আছে। ভূগোল, সমাজ, পরিবেশ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। কিন্তু মানসিক দক্ষতা পরীক্ষার কিছু নেই। যোগাযোগ দক্ষতা, এথিকস, ইন্টিগ্রিটি, লজিক্যাল রিজনিংসহ একটা বিষয় অন্তর্ভুক্তি করার দরকার। আমাদের সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি, অপেশাদারি ব্যবহার, যোগাযোগ অদক্ষতা সর্বজনীন। তাই গণিত ও মানসিক দক্ষতা বিষয় ফিরিয়ে নিয়ে এসে, সঙ্গে এই নতুন বিষয় যুক্ত করে আমাদের বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস আধুনিকীকরণ সম্ভব।
আমাদের দেশের অনেক প্রবাসীই বিদেশে সরকারি কাজে নিয়োজিত আছেন। তাঁদের কাছ থেকে তাঁদের অভিজ্ঞতা নেওয়া যেতে পারে। আমাদের শিক্ষা গবেষকেরাও এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে।
আমাদের প্রয়োজন ভবিষ্যতের বাংলাদেশ যাঁদের হাত দিয়ে চলবে খুঁজে বের করা এবং তার জন্য যা যা সংস্কার দরকার, তা করার এখনই উপযুক্ত সময়। যদি না পারি, সামনে আসা ‘এআই’–এর জগৎ বা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বা মধ্যম আয়ের বাংলাদেশে হওয়ার লক্ষ্য সবকিছুতেই আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ব।
সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট
ই-মেইল: [email protected]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ র র অন ক র জন য ব স এস দরক র সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে শুরু হচ্ছে। আবেদন করা যাবে আগামী ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। এ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে ১৩ নভেম্বর থেকে। গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন যেসব শিক্ষার্থী
২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি বা সমমান এবং ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন ভর্তির জন্য। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি) ও ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এ-লেভেল, ও-লেভেল ও বিদেশি সনদধারীদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিয়মে সরাসরি ডিন অফিসে বা ই–মেইলে আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
যেসব শিক্ষার্থী গত দুই শিক্ষাবর্ষে (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল বা স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়েছেন, তাঁরা এই শিক্ষাবর্ষে নতুন করে ভর্তি হতে পারবেন না। তবে পূর্ববর্তী ভর্তি বাতিল করে নতুন শিক্ষাবর্ষে আবেদন করতে পারবেন। একই সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী দ্বৈত ভর্তি হলে তাঁর উভয় ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে।
আবেদন ফি ৪০০ টাকা
ভর্তি ফি হিসেবে প্রাথমিক আবেদন ফি ৪০০ টাকা, যার মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ ২৫০ টাকা এবং কলেজের অংশ ১৫০ টাকা। ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন ফি ৭২০ টাকা জমা দিতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে অনলাইনে নিশ্চয়ন করবে। তবে নিশ্চয়ন ছাড়া কোনো আবেদনকারীকে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। আবেদন ফি ১৯ অক্টোবরের মধ্য জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ বিমানে ইন্টার্নশিপ, দৈনিক হাজিরায় সম্মানী ৬০০ টাকা৪ ঘণ্টা আগেআবেদনকারীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিটি কলেজের জন্য আলাদাভাবে কোর্সভিত্তিক মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে। একই মেধা নম্বরপ্রাপ্ত হলে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ (৪০: ৬০ অনুপাতে) এবং প্রয়োজনে মোট নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। এরপরও সমতা থাকলে বয়স কম শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভর্তি কার্যক্রম ধাপে ধাপে প্রথম মেধাতালিকা, দ্বিতীয় মেধাতালিকা, কোটার মেধাতালিকা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। তবে এবারও তৃতীয় রিলিজ স্লিপে আবেদন করার সুযোগ থাকবে না।
বিস্তারিত দেখুন এখানে
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, সুযোগ পাবেন ৪৮ জেলার যুবরা১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫