দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি নারীসমাজ। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে চলেছে দিন দিন। তারপরও কর্মক্ষেত্রে নানা বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। সেটা নারীর প্রজাতিগত সত্তার কারণেই। নারীকে কর্মক্ষেত্রে আসতে উৎসাহিত করা হয় ঠিকই। তবে সেখানে টিকে থাকা এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যাওয়ার পথ মসৃণ হয়নি। করপোরেট নারীই হোক বা শ্রমজীবী– কেউই নানা রকমের বৈষম্যের বাইরে নয়। এর মধ্যে রয়েছে– যৌন হয়রানি, শারীরিক, মৌখিক ও মানসিক নির্যাতন, মজুরি ও পদ বৈষম্য।
গত ২২ ডিসেম্বর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বলা হয়, তৈরি পোশাকশিল্প থেকে রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ অর্জিত হয়। ২৫ লাখ ৯০ হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে এ খাতে; যার মধ্যে ৫৭ শতাংশ নারী কর্মী। যদিও এই খাতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু কর্মপরিবেশে তাদের নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত করা যায়নি, তেমনি সম্ভব হয়নি সমতাপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। একটি পোশাক কারখানায় কাজ করা সুমি জানান, সমান কাজ করেও পুরুষ সহকর্মী তাঁর দ্বিগুণ মজুরি পান। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি হয়েছে ঠিকই। এখনও মজুরি বৈষম্য খুব স্পষ্ট। পোশাক কারখানায় নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকলেও, সেখানে একই কাজের জন্য পুরুষের চেয়ে অনেক কম মজুরি পান একজন নারী। আবার কম মজুরির কাজগুলো নারীদের জন্য বরাদ্দ থাকে। তাদের ওপরের পদে নেওয়া হয় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই।’
নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য নিয়ে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন হক সমকালকে বলেন, ‘একটি সমাজে যখন নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য বিদ্যমান তাকে একটি অসুস্থ সমাজব্যবস্থা বলা যায়। একটি সমাজে নারী-পুরুষের যে বৈষম্য, তার মূলে রয়েছে অশিক্ষা ও নেতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সমাজে একজন পুরুষের আয়কে মুখ্য বলে ধরা হয়, নারীর আয় সবসময়ই সেখানে গৌণ বিবেচিত হয়। এ জন্য নারীর মজুরির ক্ষেত্রে আমরা বৈষম্য দেখতে পাই।’
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকরা যখন যুক্ত হন, চাকরিদাতারা শ্রমিকের দুর্বলতার সুযোগ নেন। কর্মঘণ্টা বেশি, মজুরি কম, কথায় কথায় গালাগাল, মৌখিক হয়রানি, নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি মজুরি বৈষম্যও দেখা যায়। টাঙ্গাইলের এক ইটভাটায় কাজ করা নারী শ্রমিক রোকেয়া খাতুন জানান, তিনি পুরুষের মতো বা অনেক ক্ষেত্রে তাদের চেয়েও বেশি কাজ করলেও মজুরি পান ৫০০ টাকা; যেখানে পুরুষ পান ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এ বৈষম্য সুমি বা রোকেয়া মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, আরও অনেক রোকেয়া-সুমি কাজের অপেক্ষায় আছেন। এ নিয়ে সমাজেও তেমন কোনো প্রশ্ন নেই। কারণ সামাজিকভাবেও নারীকে দুর্বল মনে করা হয়।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘মজুরি বৈষম্য হলো, ওই নারী শ্রমিকদের সামগ্রিক যে বৈষম্য– সামাজিক, মতাদর্শিক, কাঠামোগত তারই বহিঃপ্রকাশ। এটিই প্রধান দিক নয়– সামাজিকভাবে মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ, নিরাপত্তাহীনতা এত বেশি থাকে যে তাদের একটা নাজুক অবস্থায় থাকতে হয়। নারীর প্রতি পুরুষের যে দৃষ্টিভঙ্গি, তাতে যে পুরুষতান্ত্রিকতা আছে– এসব মিলেই চাপটা তৈরি হয়।’
পেশায় ব্যাংকার এক নারী জানান, আগে তিনি নারী বস হলে সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে মনে করতেন। তবে তাঁর সে অভিজ্ঞতা ছিল ভীষণ নেতিবাচক। ওই নারী বসও পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবপুষ্ট ছিলেন।
গত তিন বছর ধরে একটি গবেষণা সংস্থায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন তানিয়া (ছদ্মনাম)। তাঁর পদোন্নতি বা বেতন বাড়ার কোনো খবর নেই। এ নিয়ে তাঁর মধ্যে ক্ষোভও ছিল। একদিন সেখানকার এক ক্ষমতাশালী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদোন্নতির বিনিময়ে তানিয়াকে ডেকে তাঁর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর প্রস্তাব দেন। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যিনি নারী তাঁকে জানাতে গেলেন। তিনি ওই নারী কর্মকর্তাকে সব জানালেন। তিনি এর বিরুদ্ধে তো কিছু বললেনই না; বরং ওই পুরুষ কর্মকর্তার সঙ্গে ‘কম্প্রোমাইজ’ করে নিতে বলেন।
প্রতিষ্ঠিত টেলিভিশন চ্যানেলে সিনিয়র সাংবাদিক এক নারীকে একটি প্রোগ্রাম কাভার করার অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়। তিনি আগেই পিরিয়ডের সময় বাইরের প্রোগ্রাম কাভার করার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন। কারণ এ সময় তাঁর তীব্র পেট ব্যথা হয়। তিনি এই দুই-তিন দিন ডেস্কের কাজ করতে চেয়েছেন। এর বিপরীতে তাঁর বস লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। পিরিয়ড নিয়ে তির্যক মন্তব্যও করেছেন। অথচ সেখানকার কেউ প্রতিবাদ করেননি। কারণ তিনি ক্ষমতাশালী।
কয়েক বছর আগে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান প্রতিবেদক এক নারী সহকর্মীকে চাপ ও ভয়ের মুখে কয়েক মাস ধরে যৌন হয়রানি করে আসছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই নারী সাংবাদিক সামনে এসে অভিযোগ করায় তাঁকে কারাগারে যেতে হয়েছিল। তবে এমন মানসিকতা কিন্তু সমাজের সব স্তরেই বিরাজমান।
২০০৯ সালের ১৪ মে উচ্চ আদালতের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দীকি সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ একটি দিকনির্দেশনামূলক নীতিমালা দেন। এ নীতিমালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো– ক) যৌন হয়রানি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা, খ) যৌন হয়রানির কুফল সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা, গ) যৌন হয়রানি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ওই রায়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সেল গঠনের আদেশ দেওয়া হয়। অথচ তা অকার্যকর।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) সভাপতি সালমা আলী বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক আইন নারীবান্ধব নয় কিন্তু অনেক আইন আছে, যার প্রয়োগ নেই। যথাযথ প্রয়োগ হলেও তা নারী নির্যাতন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিরোধে ২০০৮ সালে জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন বিএনডব্লিউএলএ’র একজন সদস্য। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে যুগান্তকারী রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের পর এক যুগ পেরিয়ে গেলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নারীর যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনার আশানুরূপ বাস্তবায়ন হয়নি। আইন কমিশনও বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারার কিছু অংশ সংশোধন করেছে। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ জন্য শুধু আইন করলেই সমাধান হবে না। আমরা যে নারীবান্ধব, শিশুবান্ধব পরিবেশ চাই, তার জন্য সামাজিক পরিসরে কাজ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক যৌননিপীড়নবিরোধী কমিটি বানানো হতে পারে একটা ভালো পদক্ষেপ।’
গণঅভ্যুত্থান-পূর্ব বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে তিন দশক নারীরা রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকলেও উত্তরাধিকার বা অভিভাবকত্বের মতো বিষয়গুলোর সুরাহা হয়নি। সব কর্মক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটিও নিশ্চিত করা যায়নি। বিভিন্ন পরিসরে ভূমিকার জন্য নারীকে পদক দেওয়া হলেও সমাজ বা রাষ্ট্রীয় পরিসরে জেন্ডার সমতা আরও বেড়েছে।
গত বছর জুন মাসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) জানায়, বৈশ্বিক লিঙ্গসমতা সূচকে এর আগের বছরের চেয়ে ৪০ ধাপ পিছিয়ে ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হয়েছে ৯৯তম। তবে বড় অর্থনীতির দেশ চীন ১০৬ ও ভারত ১২৯ নম্বরে রয়েছে; পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৫তম। অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সুযোগ, শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি ও অস্তিত্ব এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন– এ চার মাপকাঠিতে নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ পদে নারীর অনুপাত কমেছে। পেশাজীবী ও প্রযুক্তিগত চাকরিতে নারীরা মোট কর্মসংস্থানের মাত্র এক-পঞ্চমাংশের মতো। তবে মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের অংশগ্রহণের ধারাবাহিকতা এবং নারীর সাক্ষরতা বাড়তে থাকার চিত্র এসেছে ডব্লিউইএফের প্রতিবেদনে। মাধ্যমিকে মেয়েদের শিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবার ওপরেই রয়েছে। রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মন্ত্রিসভায় নারীর সংখ্যা ৯ ভাগের এক ভাগ। এ ছাড়া বাংলাদেশে নারী সংসদ সদস্য পুরুষের এক-চতুর্থাংশ।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘নিয়োগকর্তারা প্রায়ই নারীদের কাজে নিতে দ্বিধায় থাকেন। অনেক প্রতিষ্ঠানে এখনও নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নেই। শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার কাজটি অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নারীদের দেওয়া হয়। এটি কর্মসংস্থানের সুযোগকে সীমাবদ্ধ করে। কর্মসংস্থানে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। সুরক্ষার বিষয়গুলো কর্মক্ষেত্রে নারীর কম অংশগ্রহণের কারণ। পরিবহন ব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উচিত এসব বিষয় খেয়াল রাখা।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি বলেন, ‘নারীর জন্য সমাজ যেসব কাজ স্বাভাবিক বলে বিবেচনা করা হয়, সেগুলো প্রধানত ঘরের কাজ। নির্দিষ্ট কিছু বাইরের কাজও করা চলে। যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, স্বনিয়োজিত অনেক ধরনের কাজ– মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজ। পুরো বিশ্বেই এ ধরনের কাজ নিম্নআয়ের। কৃষিতে নারী ও পুরুষের শ্রম মজুরির পার্থক্য আছে। এখন ২৫ শতাংশের মতো কম মজুরি পান নারীরা। নারীকেই পরিবারের জন্য অধিকতর সময় দিতে হয়। ফলে নারী অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে আসতে বাধ্য হচ্ছে। এটাও বড় কারণ নারীর কম মজুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে।’
গত অক্টোবরে বিশ্বব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়েছে, যদি শুধু উৎপাদন খাতে আরও বেশি সংখ্যক নারী কাজ পান, তাহলে বাংলাদেশে উৎপাদন ২১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এতে আরও বলা হয়, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বাংলাদেশে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৭ শতাংশেই স্থির হয়ে আছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকসের (বিএলএস) তথ্য অনুযায়ী আগামী দশকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত (স্টেম) বিষয়ে কর্মসংস্থান অন্যান্য পেশার তুলনায় ২০২৯ সালের মধ্যে 8 শতাংশ বাড়বে। তবে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ঘটলেও এসব বিষয়ভিত্তিক পেশায় নারীর প্রবেশগম্যতা পুরুষের তুলনায় অনেক কম। বাংলাদেশে স্টেম বিষয়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব মাত্র ১৪ শতাংশ। এটি জেন্ডার বৈষম্যের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের বৈষম্যকেও বিশেষভাবে নির্দেশ করে, যা এসডিজি অর্জন ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বড় প্রতিবন্ধকতা। আবার যারা স্টেম বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন, তাদের অনেকেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে নানা রকম আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা নারীদের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করে।
সমাজে নারীর প্রতি যে বৈষম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান, তা পাল্টাতে হবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ার বড় ভূমিকা রয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সবকিছু আইন দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়। এ জন্য সমাজ ও মানসের পুনর্গঠন প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা জরুরি। পাবলিক পর্যায়ে এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া আবশ্যক; যা রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও যুক্ত থাকবে। একটি শিশু যেন ছোটকাল থেকেই সমতার চিন্তা নিয়ে বড় হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে একটি গণতান্ত্রিক ও সমতাপূর্ণ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে আমাদেরই।
লেখক
জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক
সমকাল
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর য ন হয়র ন কর মকর ত র জন ত ক পর ব শ ওই ন র ক জ কর র জন য অন ক ক আম দ র গ রহণ ক ষমত আরও ব
এছাড়াও পড়ুন:
মে মাসে বিজিবির অভিযানে ১৩৩ কোটি টাকার চোরাচালান জব্দ
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গত মে মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ১৩৩ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিজিবি।
বিজিবি জানায়, জব্দ করা চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ১ কেজি ৫১২ গ্রাম স্বর্ণ, ১০ হাজার ৫৪৪টি শাড়ি, ৫ হাজার ১৪০টি কাপড়, ৩ হাজার ৪৭২টি তৈরি পোশাক, ১৯ হাজার ৩১৪ মিটার থান কাপড়, ২ লাখ ৫২ হাজার ২৯টি কসমেটিকস সামগ্রী, ৫ হাজার ৪৪৩টি ইমিটেশন সামগ্রী, ২৪ লাখ ৭১ হাজার ৫৫১টি আতশবাজি, ১৭ হাজার ৫২৩ ঘনফুট কাঠ, ৩ হাজার ১৫১ কেজি চা পাতা, ৯২ হাজার ৪৮৭ কেজি সুপারি, ৫৩ হাজার ৪০ কেজি চিনি, ২০ হাজার ৪৪২ কেজি সার, ২৯ হাজার ৯৮৫ কেজি কয়লা, ১০০ কেজি সুতা/কারেন্ট জাল, ৩৪১টি মোবাইল, ১৭ হাজার ৬৫টি মোবাইল ডিসপ্লে, ৬ হাজার ৫৪০টি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ১৫,১১২টি চশমা, ৬ হাজার ৫৪৩ কেজি বিভিন্ন প্রকার ফল, ৫ হাজার ৯৬০ কেজি ভোজ্য তেল, ১০১০ লিটার ডিজেল/অকটেন, ১ হাজার ৫২৬ কেজি পিঁয়াজ, ৮ হাজার ৮২৬ কেজি রসুন, ২০ হাজার ৬৪২ কেজি জিরা, ১১ হাজার ২৩৬ প্যাকেট বিভিন্ন প্রকার বীজ, ৫০ হাজার ১৯১ কেজি ফুচকা, ৯ হাজার ১৭৯ কেজি মাছ, ৫০ হাজার ৬০৩ পিস চিংড়ি মাছের পোনা, ৯৩৪ কেজি কফি, ২ লাখ ২৫ হাজার ৩৪৩ পিস চকোলেট, ১ হাজার ১৩১টি গরু/মহিষ, ৪টি কষ্টি পাথরের মূর্তি, ১৩টি ট্রাক/কাভার্ডভ্যান, ১৫টি পিকআপ, ৪টি প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস, ৯২টি নৌকা, ২৬টি সিএনজি/ইজিবাইক, ৭২টি মোটরসাইকেল এবং ২২টি বাইসাইকেল।
আরো পড়ুন:
ঘাস খেতে খেতে সীমান্তের ওপারে ১০ গরু, ফেরত দিল বিএসএফ
ঠাকুরগাঁও সীমান্ত দিয়ে আরো ২৩ জনেকে ঠেলে দিল বিএসএফ
উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ২টি দেশীয় পিস্তল, ৫টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ৯মি.মি. পিস্তল, ২টি শট/পাইপ গান, ৫টি ম্যাগাজিন, ৪টি ককটেল, ২৪টি গুলি এবং ১টি হ্যান্ড গ্রেনেড।
এছাড়া গত মাসে বিজিবি বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে। জব্দ করা মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ৯৬৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১০ কেজি ৯৩৫ গ্রাম হেরোইন, ২৩ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১ কেজি ৪১০ গ্রাম কোকেন, ১০ হাজার ৫২১ বোতল ফেনসিডিল, ৮ হাজার ৯৮৩ বোতল বিদেশি মদ, ৭১.২৫ লিটার বাংলা মদ, ৮১৩ বোতল ক্যান বিয়ার, ১ হাজার ৯১৩ কেজি ৬৩০ গ্রাম গাঁজা, ২ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ প্যাকেট বিড়ি ও সিগারেট, ৩০ হাজার ১১৫টি নেশাজাতীয় ট্যাবলেট/ইনজেকশন, ৫৪ ঞাজার ৩৪৭ বোতল ইস্কাফ সিরাপ, ৫ বোতল এলএসডি, ২০ হাজার ৪৯৩টি এ্যানেগ্রা/সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ৭৩৭টি এমকেডিল/কফিডিল এবং ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬০৪ পিস বিভিন্ন প্রকার ওষুধ ও ট্যাবলেট।
সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪৫ জন চোরাকারবারি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৭১৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ১০ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৩৯০ জন মিয়ানমার নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/এমআর/এসবি