শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় নারীর ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অর্জন রয়েছে। তবে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের বিচারে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের তুলনায় এদেশ পিছিয়ে রয়েছে। তাই নারী-পুরুষের বৈষম্য নিরসনে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে বিশেষ মনোযোগ জরুরি। 
গতকাল বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ: সাম্প্রতিক ধারার পর্যালোচনা’ শীর্ষক অনলাইন মতবিনিময় সভায় এমন মত
দেন আলোচকরা।

মূল নিবন্ধে উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা কর্মকর্তা অরণী হক বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের ২৭ থেকে ৩৪ শতাংশ জেন্ডার সমতা বিধানের জন্য ব্যয় করা হলেও অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে তা কাঙ্ক্ষিত প্রভাব রাখতে পারেনি। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীরা মূলত যুক্ত হয়েছেন নিম্ন বেতন এবং মজুরির কাজে। তাই ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে নারীর গড় মজুরি ৯ শতাংশ কমে গেছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উম্মে ফারহানা বলেন, চাকরি থেকে যে বেতন পাওয়া যায়, তার তুলনায় চাকরি পেতে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয় বলে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নারীরা অনেক সময় চাকরি খোঁজেন না। অতিদরিদ্র পরিবারের কমবয়সী নারীরা অনেক সময় ফসলের মাঠে বেশি মজুরিতে কাজের সুযোগ উপেক্ষা করে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। মাঠে কাজ করে গায়ের রং কালো হয়ে গেলে বিয়ে হবে না– এমন মনে করায় তারা এমন সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.

ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা।

বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, অর্থনীতির উদীয়মান খাতগুলোতে শুরু থেকেই নারীর বেশি বেশি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা দরকার। নারী উদ্যোক্তারা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, সেগুলো দূরীকরণের ওপরও জোর দেন তিনি। গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, যথাযথ বিনিয়োগ ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশেও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে বেগবান করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
প্যানেল আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম এবং ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সদস্য সচিব জাহিদ রহমান। সমাপনী বক্তব্য দেন উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কুষ্টিয়ায় এবার ২৫০টি মন্দিরে দুর্গাপূজা, বেড়েছে ২২টি মন্ডপ

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ার মন্ডপগুলোতে চলছে নানা প্রস্ততি। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকেরা। গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলায় বেড়েছে ২২টি পূজা মন্ডপ। সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। জেলায় ২৫০টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। আবার কোথাও শুরু হয়েছে রঙের কাজ। আপন মনে প্রতিমাগুলো ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পীরা। এখন শেষ সময়ের পূজার প্রস্ততি নিচ্ছেন আয়োজকেরা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ। প্রতিমা শিল্পীরা ৫টি থেকে ১০টি পর্যন্ত প্রতিমা তৈরি করেছেন।

প্রতিমা শিল্পী কুমারেশ দাস ও মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল জানান, শেষ সময়ে প্রতিমা শিল্পীদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে চাহিদাও বেশি।

এদিকে সকলের সহযোগিতায় অনাড়ম্বরভাবে দুর্গোৎসব পালন করতে চান আয়োজকরা।

হরিবাসর সার্বজনীন পূজা মন্দিরের উপদেষ্টা বিপ্রজিৎ বিশ্বাস বলেন, “আশা করছি প্রতিবছরের মতো এবছরও উৎসব মুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রশাসনের সহযোগিতা ও আশ্বাসে আমরা আমাদের পূজার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি।”

মিলপাড়া সাবর্জনীন পূজা মন্দিরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী বাগচী বলেন, “প্রত্যেক ধর্মকে সন্মান জানানো প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমাদের উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এলাকার সকলেই আমাদের পাশে থাকেন। আশাকরি এবারও তার ব্যত্যয় হবে না।”

কুষ্টিয়া মহাশ্মশান মন্দিরের পুরোহিত পলাশ চক্রবর্ত্তী বলেন, “আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হবে। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী এবং ২ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয়া দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এবার পৃথিবীতে দশভূজার আগমন হবে হাতিতে চড়ে আর কৈলাশে ফিরবেন দোলায়।”

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলায় ২৫০ মন্দিরে শারদীয়া দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮১টি, খোকসা উপজেলায় ৫৯টি, কুমারখালী উপজেলায় ৫৯টি, মিরপুর উপজেলায় ২৮টি, ভেড়ামারা উপজেলায় ১১টি ও দৌলতপুর উপজেলায় ১২টি মন্ডবে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এ বছর গত বছরের তুলনায় ২২টি মন্ডপে পূজা বেড়েছে।

কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়দেব বিশ্বাস বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর ২২টি পূজা বেশি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশাসনের সাথে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়েছে। এছাড়া ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ মন্ডপের তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে।”

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, “প্রতিটা পূজা মন্দিরে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পূজা মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হবে।”

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জানান, যার যার ধর্মীয় উৎসব স্বাধীনভাবে ও উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করা তাদের অধিকার। কোন প্রোপাগান্ডা ও গুজবে কান দেওয়া যাবে না। বর্তমান সরকারের মবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। মব সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ