অকালে চুল পেকে যাওয়া কিসের ইঙ্গিত
Published: 10th, March 2025 GMT
চুল কেন পাকে
সাধারণত ২০-৩০ বছর বয়সের আগে চুল পাকলে অকালে চুল পাকা বলে ধরা হয়। চুল পাকে মূলত মেলানিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে। এই মেলানিন একধরনের প্রাকৃতিক রঞ্জক, যা আমাদের ত্বক, চুল ও চোখের রং নির্ধারণ করে। ব্রিটিশ জার্নাল অব ডার্মাটোলজিতে প্রকাশিত ২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৫-৬৫ বছর বয়সে ৭৪ শতাংশ মানুষেরই চুলে পাক ধরে। আর এ সময়ের মধ্যে পেকে যায় মাথার ২৭ ভাগ চুল। তবে ব্যক্তিভেদে তারতম্য তো হয়ই। প্রশ্ন হলো অকালে কেন চুল পাকে? এর পেছনে লুকিয়ে থাকা কারণগুলো কী?
১.বংশগত কারণ
অকালে চুল পাকার একটি বড় কারণ জিনগত প্রভাব। ডার্মাটোলজির ক্লিনিক্যাল অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও ‘ফরগেট দ্য ফেসলিফট’ বইয়ের লেখক ডরিস ডে বলেন, ‘আপনার মা–বাবার চুল অল্প বয়সে পেকে গেলে আপনার ক্ষেত্রেও তেমনটা হওয়ার আশঙ্কা বেশি।’ এ ছাড়া ২০১৬ সালে নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি নির্দিষ্ট জিনের কারণে অকালে চুল পেকে যায়।
২. অটোইমিউন রোগের প্রভাবকিছু নির্দিষ্ট রোগ অকালে চুল পাকার কারণ হতে পারে। অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়াটা নামের এক অটোইমিউন রোগের কারণে চুলের নির্দিষ্ট অংশ পড়ে যেতে পারে। আবার সেখানে নতুন চুল গজালে, তা সাদা বা ধূসর হয়ে গজাতে পারে। ন্যাশনাল অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়াটা ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাথার নির্দিষ্ট অংশে গোলাকার এবং মসৃণ চুলহীন অংশ তৈরি হয়। অনেক সময় পুরো মাথার বা শরীরের সব চুলও ঝরে যেতে পারে। ডরিস ডে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই রোগ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা চুলের ফলিকলগুলোর ওপর আক্রমণ করে। ফলে চুল পড়ে যায়। নতুন চুল গজালে তা সাদা হয়ে যায়।’ হঠাৎ চুল পড়া বা টাক পড়ার সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই কোনো চর্মবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন৩০ বছরেই টাক পড়ছে? প্রতিকার জেনে নিন২৮ জানুয়ারি ২০২৫৩. দূষিত পরিবেশের প্রভাবপরিবেশের দূষণও অকালে চুল পাকার একটি বড় কারণ হতে পারে। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের তথ্যমতে, বায়ুদূষণ এবং বিষাক্ত পদার্থ চুলের মেলানিন উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। এতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয়, যাতে অকালে চুল ধূসর হয়ে যায়। এ ব্যাপারে ডক্টর ডে বলেন, ‘চুল একবার ফলিকল থেকে বেরিয়ে গেলে তা মৃত কোষে পরিণত হয়। তাই ফলিকলের স্তরে পৌঁছানো বিষাক্ত উপাদানগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে। যদিও পরিবেশগত বিষয়ের প্রভাবও রয়েছে, তবে মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের প্রভাব আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
৪. অতিরিক্ত চাপের প্রভাবপ্রচণ্ড চাপ কি সত্যিই অকালে চুল পাকার কারণ হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আছে ভিন্নমত। তবে ডরিস ডে মনে করেন, স্ট্রেস জিনগত প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চুলের পরিবর্তনের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। মার্কিন মুলুকের দায়িত্ব নেওয়ার সময় বারাক ওবামার চুল ছিল গাঢ় কালো, কিন্তু পাঁচ বছর পর তা সম্পূর্ণ ধূসর হয়ে গিয়েছিল। শুধু চাপের কারণে অকালে চুল পাকে না বটে; তবে জিনগতভাবে অকালে চুল পাকার প্রবণতা থাকলে অতিরিক্ত মানসিক চাপ তা আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। মানে আপনার মা–বাবার অল্প বয়সে চুল পাকলে এবং আপনি বেশি মানসিক চাপে থাকলে আপনার চুল অকালে পেকে যেতে পারে।
আরও পড়ুনমাথার চুল পড়ে যাচ্ছে? ব্যবহার করুন রোজমেরি তেল, দেখুন জাদু১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫৫. ধূমপানের প্রভাবআপনি ধূমপান করুন বা ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে থাকুন—উভয় ক্ষেত্রেই অকালে চুল পাকার ঝুঁকি বাড়ে। ইন্ডিয়ান ডার্মাটোলজি অনলাইন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে অকালে চুল পাকার হার আড়াই গুণ। কারণ, ধূমপানের ফলে প্রচুর ফ্রি-র্যাডিক্যাল উৎপন্ন হয়, যা চুলের মেলানিন উৎপাদন ব্যাহত করে। তাই চুলের স্বাভাবিক রং ধরে রাখতে ধূমপান ত্যাগ করা জরুরি। যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের আশপাশে থাকাও ক্ষতিকর।
৬. হরমোনের পরিবর্তনবয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে নানা হরমোনের পরিবর্তন হয়। এসব হরমোন চুলের রং, ঘনত্ব ও টেক্সচারে প্রভাব ফেলে। মোটামুটি ৩০ বছর বয়সের পর থেকে অনেকেই এসব পরিবর্তন লক্ষ করতে শুরু করেন। বিশেষজ্ঞরা এখনো নিশ্চিত নন যে কীভাবে ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন এবং কর্টিসল হরমোন চুল পাকার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। তবে এটি শুধু বয়সের বিষয় নয়। ৫০ বছর বয়সেও অনেক নারীর মাথায় সাদা চুল দেখা যায় না। তার মানে জিন, পরিবেশ এবং হরমোন—এই তিনটি একত্রে চুল পাকার সময় নির্ধারণ করে।
৭. বয়সের কারণআপনি চাইলেও চুলের স্বাভাবিক বয়সজনিত পরিবর্তন এড়াতে পারবেন না। চুলের রং নির্ধারণকারী মেলানিন উৎপাদন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের তথ্যানুসারে, ৩০ বছর বয়স পার হওয়ার পর প্রতি ১০ বছরে চুল পাকার হার ১০-২০ শতাংশ বেড়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে এটি ধীরে হয়, আবার কারও কারও বেলায় তুলনামূলক দ্রুত চুল পেকে যায়। তবে সবার চুলই একসময় পেকে যায়, শুধু আগে আর পরে।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর বয়স পর ব শ হরম ন আপন র বয়স র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।