অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তি ও পঙ্গু হাসপাতালের কর্মীদের মারামারি, বন্ধ ছিল জরুরি বিভাগের সেবা
Published: 10th, March 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) কর্মচারীদের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এর জেরে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রায় ছয় ঘণ্টা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সেবা বন্ধ ছিল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ।
মারামারির ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকাল থেকে পঙ্গু হাসপাতালে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি ছিল। বিকেলে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেন অভ্যুত্থানে আহতরা ব্যক্তিরা। তারপর বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে জরুরি বিভাগে টিকিট বিক্রি এবং চিকিৎসাসেবা শুরু হয়।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মী বলেছেন, গত কয়েক দিন ধরে হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে অভ্যুত্থানে আহতদের দ্বন্দ্ব চলছে। এর জেরে রোববার রাতে ব্লাডব্যাংকের এক কর্মীকে মারধর করেন আহত কয়েকজন ব্যক্তি। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকালে কর্মীরা হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেন। তখন তাঁদের ওপর হামলা করা হয়।
তবে গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা বলেছেন, আন্দোলনে আহত একজনের জন্য রক্ত নিতে অন্য আহত ব্যক্তিরা রোববার রাতে ব্লাডব্যাংকে যান। তখন তাঁদের রক্ত দেওয়া হয়নি। দালাল চক্রের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে রক্ত সংগ্রহ করতে বলা হয়। এ নিয়ে তর্কের এক পর্যায়ে আন্দোলনে আহত একজনকে মারধর করা হয়। সকালে ফিজিওথেরাপি বিভাগে চিকিৎসা নিতে গেলেও আহত একজনকে মারধর করেন হাসপাতালের কর্মীরা। এর জেরে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তাঁদের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন।
আন্দোলনে আহতদের পক্ষে কোরবান শেখ হিল্লোল নামের একজন প্রথম আলোকে বলেন, পঙ্গু হাসপাতালে দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয়। এসব দালাল নির্মূলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কর্ণপাত করছে না। রোববার রাতে রক্ত সংগ্রহ করতে গেলে সেখানেও দালাল চক্রের খপ্পরে পড়তে হয়। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে আহত ব্যক্তিদের ওপর হামলা করা হয়। সোমবার সকালে বহিরাগতদের নিয়ে এসে আহতদের ওপর আবারও হামলা করেন হাসপাতালের কর্মীরা।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো.
যা বললেন হাসপাতালের পরিচালক
আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে পঙ্গু হাসপাতালের কর্মীদের মারামারির ঘটনায় দিনভর পঙ্গু হাসপাতালে উত্তেজনা ছিল। মারামারির ঘটনায় একজন আনসার সদস্যও গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ছাড়া প্রায় ছয় ঘণ্টা জরুরি বিভাগ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন। দিনভর অনেক রোগী হাসপাতালে এসে জরুরি চিকিৎসা পাননি। বিকেলে নরসিংদী থেকে দুই বছরের শিশুকে নিয়ে জরুরি বিভাগের সামনে কয়েকজনকে বসে থাকতে দেখা যায়। ওই শিশুর পরিবারের সদস্য মো. ইয়াসিন জানান, তিন ঘণ্টা ধরে শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালে বসে আছেন তাঁরা। শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ছে। আবার জেগে কান্না করছে। হাসপাতালের কেউ তাঁদের সহায়তা করছেন না।
পরে বিকেল ৫টায় আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে বৈঠকের পর হাসপাতালের পরিচালক মো. আবুল কেনান সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল (রোববার) রাতে ব্লাডব্যাংকে রক্ত সংগ্রহ করাকে কেন্দ্র করে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত কয়েকজনের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মীদের ভুল–বোঝাবুঝি হয়। এতে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এই পরিস্থিতিতে সকালে কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর জেরে মারামারি হয়েছে, যা দুঃখজনক। এ ঘটনায় যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা ও মারামারির ঘটনায় যাঁরা জড়িত তাঁদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, এখানে যে ঘটনা ঘটেছে, এখনো পরিপূর্ণভাবে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের পর কেউ যদি দায়ী থাকে, হাসপাতালের কর্মী হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। আগামী অন্তত ২৪ ঘণ্টা সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেন তিনি।
গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের দাবি—বহিরাগতরা তাঁদের ওপর হামলা করেছে। এ বিষয়ে আবুল কেনান বলেন, ‘আমরা এখানে অবরুদ্ধ একটা অবস্থার মধ্যে ছিলাম। বাইরের অবস্থা সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত নই। ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ এবং অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে সেটি বলতে পারব।’
হাসপাতালে সিন্ডিকেটের বিষয়ে পরিচালক বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতসহ সকলের সহায়তা চাইব, প্রতিষ্ঠানটি দালালমুক্ত হোক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করব কীভাবে এই প্রতিষ্ঠানকে দালালমুক্ত করা যায়, সহায়তা করুন।’
পরিচালক জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আহত হয়ে এখন পঙ্গু হাসপাতালে ১০৬ জন ভর্তি আছেন। এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৮৯১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র ম র র ঘটন পর স থ ত দ র ওপর আহতদ র এর জ র এ ঘটন ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে জমি দখলকে কেন্দ্র করে হামলা, আহত ৪
সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ৪ নং ওয়ার্ড সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং এলাকায় জমি দখলকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় অন্তত চারজন আহত হয়েছে। আহতদের এলাকাবাসী উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ খানপুর হসপিটালে নিয়ে যায়। আহতরা হলেন, আব্দুল সোবহান (৬২), আব্দুল আজিজ (৪৫),রবিন (৩৮) ও মুক্তার হোসেন।
সোমবার সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। উক্ত মারামারির ঘটনায় মুক্তার হোসেন বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ আজিবপুর এলাকার বাসিন্দা বিবাদী আহমাদুল্লাহ (৫০), মোহাম্মাদ হোসেন (৪৫), সফর আলী (৪৫), জাফর হোসেন (৫০) সর্ব পিতা মৃত মমির আলী, সাইফুল ইসলাম (২৬), ফয়সাল হোসেন (২৪) উভয় পিতা মোহাম্মাদ উল্যাহ, রব কাজির ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৮), কামাল হোসেন সহ অজ্ঞাত আরো ২০ থেকে ৩০ জন নুর বানু বেগম (৬৫) এর সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং ছাপাখানা মোড়ে ক্রয়কৃত ৫ শতাংশ জমি দখল করতে যায়।
মানুষের মুখে দখলের কথা শুনে নুর বানু বেগমের ছেলে মুক্তার হোসেন উক্ত জমির সামনে গেলে উক্ত বিবাদীরা মুক্তার কে দেখে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। মুক্তার হোসেন গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে উক্ত বিবাদীরা দেশীয় অস্ত্র এসএসের পাইপ দিয়ে মুক্তারকে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে।
মুক্তার কে মারধর করছে এমন খবর পেয়ে মুক্তারের চাচাতো ভাইরা ঘটনাস্থলে আসলে তাদেরকেও মারধর করে গুরুতর আহত করে উক্ত বিবাদী গং। তাদের ডাক চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে বিবাদীগণ পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় বাদীদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যান।
এলাকাবাসী আহতদের উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ খানপুর হসপিটালে নিয়ে যান। চিকিৎসা শেষে মুক্তার হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এসে বিবাদীদের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
বাদী মুক্তার হোসেন জানান, আমার মা নুর বানু বেগম সিদ্ধিরগঞ্জ ছাপাখানা মোড়ে ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন।আমার মায়ের নামে নামজারি খাজনা সহ যাবতীয় কাগজপত্র রয়েছে। উক্ত বিবাদী গং দীর্ঘদিন যাবত এই জায়গাটি দখল করার পায়তারা করছে।
বিবাদীরা সোমবারে বিকালে আমার মায়ের জমি দখল করতে আসলে আমরা বাধা প্রদান করি। এক পর্যায়ে বিবাদীরা দেশী অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপরে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে।
এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ করেছি। আমি উক্ত বিবাদীগণের কঠিন শাস্তি কামনা করছি প্রশাসনের কাছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার (উপ- পরিদর্শক) এসআই সালেকুজ্জামান বলেন, মারামারির ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।