চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মোট ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধেই গেছে ৬২ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পরিচালন বাজেটের একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ৩৪ শতাংশ গেছে সুদ পরিশোধে। এর মধ্যে দেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৫৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৯ হাজার ২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৪৯ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে শুধু সুদ পরিশোধেই প্রয়োজন হবে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

চলতি অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। সেই বাজেটই অব্যাহত রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ছয় মাসে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বাজেট বাস্তবায়নের হার বরাদ্দের ৩৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। মোট ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। তবে উন্নয়ন ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে। টাকার অঙ্কে ৪০ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ৪৩ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। 
উন্নয়ন ব্যয় গত অর্থবছরের তুলনায় কমলেও বাড়তি সুদ পরিশোধ ব্যয়ের ওপর ভর করে সার্বিক বাজেটে বস্তবায়ন হার গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত ও এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়ন হার ছিল যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৫৩ এবং ২৭ দশমিক ২১ শতাংশ। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি ব্যয়েও সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কাটছাঁট হয়েছে। এতে উন্নয়ন ব্যয় কমেছে। তবে সরকারের নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। তাছাড়া পরিচালন বাজেটে কাটছাঁটের খুব একটা সুযোগ থাকে না। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ব্যয় বাড়ায় পরিচালন বাজেটে ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি। 
ছয় মাসে পরিচালন বাজেটের আওতায় অন্যতম বড় খরচের খাত হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৩১ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩০ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া ছয় মাসে জ্বালানি, সারসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। একই সঙ্গে পাবলিক অর্ডার ও সেফটি খাতে ৩৮ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে ২২ হাজার ৭১০ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষায় ১৩ হাজার ২০৭ কোটি টাকা, কৃষিতে ১৫ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্যে ৬ হাজার ১৯৫‍ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছয় ম স সরক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
  • কমপ্লায়েন্সের অভাবে ধুঁকছে চামড়া খাতের রপ্তানি
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ