রোমানিয়ায় বৃত্তি: মাসে স্নাতকে ৬৫, মাস্টার্সে ৭৫ ও পিএইচডিতে ৮৫ ইউরো পাবেন শিক্ষার্থী
Published: 11th, March 2025 GMT
রোমানিয়া প্রতিবছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের সরকারিভাবে নানা বৃত্তি দেয়। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের সরকারি এ বৃত্তির আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশটির শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বৃত্তি দেয়। এ বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীরা স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রির অর্জনের সুযোগ পাবেন। প্রতিবছর সাধারণত জুলাইয়ে রোমানিয়া সরকার বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করে। মেডিসিন ও ফার্মেসি ছাড়া সব বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য এ বৃত্তি দেওয়া হয়। বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার কোনো খরচ বহন করতে হয় না। আবাসন খরচ সরকার বহন করবে। হাতখরচ হিসেবে আনুষঙ্গিকভাবে প্রতি মাসে একজন ব্যাচেলর শিক্ষার্থীকে ৬৫ ইউরো, মাস্টার্সের শিক্ষার্থীকে ৭৫ ইউরো ও পিএইচডি শিক্ষার্থীকে ৮৫ ইউরো দেবে রোমানিয়া সরকার।
প্রতিবছর রোমানিয়ার সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন দেশগুলোর নাগরিকদের উচ্চশিক্ষার জন্য এ বৃত্তি দেয়। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। রোমানিয়ার উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব বুখারেস্ট, বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক স্টাডিজ, বাবেস-বলিয়াই ইউনিভার্সিটি, আলেকজান্দ্রু আইওয়ান কুজা ইউনিভার্সিটি, ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব তিমিশোআরা, ইউনিভার্সিটি পলিটেকনিক অব বুখারেস্ট, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ঘিওরঘি আসাচি ইয়াস ইত্যাদি। একজন শিক্ষার্থী রোমানিয়ায় ব্যাচেলর, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি যেকোনো লেভেলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন।
আরও পড়ুন৪৮ জেলায় ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, এইচএসসি পাস ১৮-৩৫ বয়সীর সুযোগ, ভাতা দৈনিক ২০০০৬ মার্চ ২০২৫রোমানিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত ৯২ হাজার ৪৫ দশমিক ৬ বর্গমাইলের একটি দেশ। আয়তনের দিক থেকে রোমানিয়া ইউরোপের ১২তম বৃহত্তম রাষ্ট্র এবং জনসংখ্যার বিবেচনায় রোমানিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে ষষ্ঠ দেশ। বুখারেস্ট রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সঙ্গে গঠনশৈলীর বিবেচনায় সামঞ্জস্য থাকায় বুখারেস্টকে অনেকে পূর্ব ইউরোপের প্যারিসও বলে থাকেন। দেশটির উল্লেখযোগ্য নগরীর মধ্যে রয়েছে ব্রাসোভ, ইয়াশ, তিমিশোআরা, ক্লুজ নাপোকা, কন্সটান্টা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
রোমানিয়ার দক্ষিণে বুলগেরিয়া, পশ্চিমে সার্বিয়া ও হাঙ্গেরি এবং পূর্বে ইউক্রেন ও রিপাবলিক অব মলদোভার সঙ্গে সংযুক্ত। এ ছাড়া দেশটির দক্ষিণ-পূর্বের প্রায় ২৪৫ কিলোমিটার রেখা বরাবর কৃষ্ণসাগর বা ব্ল্যাক সির উপকূল রয়েছে। রোমানিয়ার অধিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ভাষার নাম রোমানিয়ান। দেশটির ৯২ শতাংশ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। তবে দেশটিতে ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি ভাষার প্রচলন রয়েছে। পূর্ব ইউরোপে প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে রোমানিয়ান একমাত্র ভাষা, যেটি লাতিন ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলির অন্তর্ভুক্ত।
২০০৭ সালে রোমানিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পায়। রোমানিয়ার জাতীয় মুদ্রার নাম রোমানিয়ান লিউ। রোমানিয়া বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক দেশগুলোর মধ্যে একটি। আঙুর, আপেল, শর্ষে ও বিভিন্ন সবজি থেকে প্রস্তুতকৃত তেল থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন ধরনের ফার্মাসিউটিক্যাল, কেমিক্যাল, লৌহ, ইস্পাতশিল্প, মেশিনারিশিল্প, বস্ত্রশিল্প ও মোটর গাড়ি তৈরির কারখানার মতো ভারী ভারী শিল্প রোমানিয়ার অর্থনীতিকে করেছে অত্যন্ত বেগবান।
আরও পড়ুনদেশের আরও তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারি হলো২ ঘণ্টা আগেসুযোগ-সুবিধা—নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা পাবেন রেজিস্ট্রেশন ফি
সম্পূর্ণ টিউশন ফি
বিনা মূল্যে আবাসন
উপবৃত্তি স্নাতকে ৬৫ ইউরো (মাসে)
স্নাতকোত্তরে ৭৫ ইউরো (মাসে)
পিএইচডিতে ৮৫ ইউরো (মাসে)
বৃত্তির মেয়াদ—স্নাতক ডিগ্রির মেয়াদ থাকবে তিন থেকে ছয় বছর
স্নাতকোত্তরে দেড় থেকে দুই বছর
পিএইচডির জন্য থাকবে তিন থেকে চার বছর
আরও পড়ুনতুরস্কে বিলকেন্ট ইউনিভার্সিটির বৃত্তি, আইইএলটিএসে ৬.৫ হলে আবেদন ০৮ মার্চ ২০২৫স্কলারশিপের আবেদন করতে যা প্রয়োজন—
স্কলারশিপের অ্যাপ্লিকেশন ফরম
যে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আগ্রহী, সে ইউনিভার্সিটির আবেদন ফরম
যাবতীয় শিক্ষা সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্টের কপি
জন্মনিবন্ধন বা বার্থ সার্টিফিকেটের কপি
পাসপোর্টের বায়োগ্র্যাফিক্যাল পেজ এবং সেই সঙ্গে প্রথম তিন পৃষ্ঠা
মেডিকেল সার্টিফিকেট
ইউরো পাস ফরম্যাটের সিভি
সম্প্রতি তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
প্রয়োজনে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ বা রোমানিয়ান ভাষার অভিজ্ঞতা সনদ
অধ্যয়নের ক্ষেত্রগুলো—স্থাপত্য, ভিজ্যুয়াল আর্ট, রোমানিয়ান সংস্কৃতি ও সভ্যতা, সাংবাদিকতা, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিজ্ঞান, প্রকৌশল, সামাজিক ও মানববিজ্ঞান, প্রযুক্তিগত অধ্যয়ন, তেল ও গ্যাস, কৃষিবিজ্ঞান ও পশু চিকিৎসা।
অধ্যয়নের ভাষা—স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য শিক্ষার্থীদের রোমানিয়ান ভাষা জানতে হবে। কারণ, দুটি ডিগ্রি দেশটির নিজস্ব ভাষায় পড়ানো হয়। তবে যেসব প্রার্থী রোমানিয়ান ভাষা জানেন না, তাঁদের ভাষা অধ্যয়নের সুযোগ করে দেওয়া হবে। আর পিএইচডি ডিগ্রির জন্য শিক্ষার্থীরা রোমানিয়ান ছাড়া অন্য ভাষা নির্বাচন করতে পারবেন।
আরও পড়ুনউচ্চশিক্ষায় বিদেশে যেতে প্রস্তুতি কেমন, জেনে নিন ধাপগুলো১৪ এপ্রিল ২০২৪আবেদনের যোগ্যতা—ইউরোপীয় সদস্যরাষ্ট্র ছাড়া যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ
প্রার্থীদের রোমানিয়ার নাগরিকত্ব থাকা যাবে না
স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের জন্য ৩৫ বছর এবং পিএইচডির জন্য ৪৫ বছরের বেশি বয়স অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে
আবেদনের পদ্ধতি—আগ্রহী শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের বিস্তারিত, পদ্ধতিসহ বিস্তারিত দেখতে এখানে ক্লিক করুন
আবেদনের শেষ তারিখ: ১২ মার্চ ২০২৫
আরও পড়ুনচীনে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপের সঙ্গে আছে পড়ার শেষে চাকরি ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ২৬ আগস্ট ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট র র জন য প এইচড সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।