চট্টগ্রামে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র বিক্রির অভিযোগে পুলিশের এক কনস্টেবলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। গত শনিবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চাঁদপুর থেকে তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।

রোববার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়টি স্বীকার করা হয়। হেফাজতে নেওয়া পুলিশ কনস্টেবল হলেন মো.

রিয়াদ। তার বাড়ি সাতকানিয়ার কাঞ্চনায়। তিনি চাঁদপুর জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। 

এর আগে তিনি কক্সবাজার র‌্যাবে কর্মরত ছিলেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিন কোতোয়ালী থানা থেকে অস্ত্রটি লুট হয়। গত ৩ মার্চ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে জামায়াতের দুই কর্মী হত্যার পর ঘটনাস্থল থেকে পিস্তলটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, অস্ত্রটি কোতোয়ালী থানা থেকে লুট হওয়া। তবে অস্ত্রটি রিয়াদের হাতে কিভাবে গেল। তার কাছ থেকে জামায়াত কর্মীদের হাতে কিভাবে গেছে, তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

গত ৩ মার্চ সোমবার রাতে সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় মাইকে ডাকাত ঘোষণা দিয়ে গণপিটুনিতে দুই জামায়াত কর্মীকে হত্যা করা হয়। তারা হলেন- নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেক। ঘটনাস্থল থেকে মেইড ইন ব্রাজিল লেখা নাইন এমএম একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। 

গত ৬ মার্চ চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, ‘ঘটনার দিন নেজাম সেখানে গিয়ে অস্ত্র ওপেন করেছিল। হত্যাকাণ্ডের পর সেখান থেকে যে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছিল, সেটি সিএমপি’র কোতোয়ালী থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র।’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশের অনেক অস্ত্র খোয়া গেছে। এ অস্ত্রগুলো কীভাবে তাদের কাছে গেল, সেগুলো আমরা তদন্ত করছি। এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

এরপর সাতকানিয়ার কাঞ্চনার বাসিন্দা পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদের একটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে। গণপিটুনিতে নিহত দুইজনের বাড়িও কাঞ্চনা। তাতে বলতে শোনা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম, অ্যাঙ্কেল। এটি নিবেন। এটিতে ৩০ পিস গুলি দেওয়া যাবে। পার পিস ৩ হাজার টাকা করে দিতে হবে।’ 
আরেকটি রেকর্ডে বলেন, ‘আপনাকে যেটি নিতে বলছি সেটি, আর আমি যেটি ব্যবহার করছি; সেইম। এটি আমি র‌্যাবে যখন গোয়েন্দা শাখায় ছিলাম তখন তুলেছি। আপনার কাছে যে অস্ত্র দিচ্ছি, সেটি আর এটি সেইম। এরকম অস্ত্র সব বাহিনীর কাছে আছে, সরকারি অস্ত্র। এই অস্ত্র সরস, বুঝছেন, আপনি না হলে আপনার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করতে পারেন। এই অস্ত্রের গুলি সহজে পাওয়া যায়।’

অস্ত্রটির জন্য সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে জানিয়ে অডিওতে রিয়াদ আরও বলেন, ‘এই অস্ত্রের গুলি প্রশাসনের সবার কাছে পাবেন। আমিও দিতে পারব। আমাদের বার্ষিক একটি ফায়ারিং হয়, ওইসময় ফায়ার না করে গুলি আপনার জন্য রেখে দেব। এছাড়া আমার অনেক লিংক আছে। ওদের মাধ্যমেও আপনাকে গুলির ব্যবস্থা করে দিতে পারব। আমি বেশি অনুরোধ করছি, কারণ আমার এই মুহূর্তে টাকার দরকার। ১০ হাজার টাকা আপনি আমাকে অতিরিক্ত দেবেন। সাড়ে ৫ লাখ টাকা বরাবর দিতে হবে। ২ লাখ ১০, ২ লাখ ২০ যেসব অস্ত্র ওই সব আমার কাছে নেই। সাড়ে ৫ লাখ টাকা তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।’

তবে অপরপ্রান্তে কার কাছে অডিও রেকর্ডগুলো পাঠিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তাকে হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে রোববার রাতে সিএমপির উপ কমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সোলতানা সমকালকে বলেন, ‘অস্ত্র বিক্রির একটি অভিযোগের ঘটনায় কনস্টেবল রিয়াদকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল ট হওয় র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ