ফাহামিদুলের বাদ পড়া এবং কিছু প্রশ্ন
Published: 19th, March 2025 GMT
জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার ইচ্ছাতেই সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ক্যাম্পে ডাকা হয়েছিল ইতালি প্রবাসী ফুটবলার ফাহামিদুল ইসলামকে। তবে দল যখন ক্যাম্প শেষ করে বাংলাদেশে ফিরল (১৮ মার্চ, ২০২৫) তখন দলের সঙ্গে দেখা গেল না ফাহামিদুলকে! সৌদি থেকে ইতালিতে ফেরত পাঠানো হয় এই ১৮ বছর বয়সী মিডফিল্ডারকে।
গোটা দেশ যখন হামজার হোমকামিংয়ে মজে ছিল, তখন জন্ম নেয় বিশাল এই বিতর্কের। হ্যাঁ, বিতর্কই বটে। কারণ, ফাহামিদুলকে স্কোয়াডে না রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন উঠলেও কোন সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি ফুটবল দল সংক্রান্ত কেউই।
আরো পড়ুন:
‘মেসির সঙ্গে’ পরিচয় করিয়ে দিলেন জামাল, ছেত্রীর সঙ্গে তুলনায় দিলেন অন্যরকম উত্তর
আসিফের হুঁশিয়ারি
বাফুফেতে সিন্ডিকেটের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবে সরকার
দলের ম্যানেজার আর কোচের কথার সুর প্রায় একই, ফাহামিদুল দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি, তবে তিনি ভবিষ্যত পরিকল্পনায় আছেন। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, তারা যখন এই উত্তরগুলো দিচ্ছিলেন, মনে হচ্ছিল না তারা নিজেরাই বিশ্বাস করছেন! তাছাড়া অতীতে নর্দার্ন আইরিশ টপ ডিভিশনে খেলা রিয়াসাত ইসলামের সাথেও এক দশক আগে ফাহামিদুলের মতো একই কাজ করা হয়েছিল।
আজ বুধবার (১৯ মার্চ, ২০২৫) দুপুর ১টা নাগাদ যখন ভারত ম্যাচের পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলন চলছিল ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে, তখন বাইরে চৈত্রের তাপ উপেক্ষা করে সারাদেশ থেকে আসা ফুটবল সমর্থকরা করছিল প্রতিবাদ। তাদের মতে, ফাহামিদুলের সাথে যা ঘটেছে তা এক কথায় অন্যায়। এই সমর্থকরা দাবি করছে বহুদিন ধরেই একটা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ ফুটবল।
প্রতিবাদীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য একটা অংশ হচ্ছে ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠী ‘বাংলাদেশ ফুটবল আল্ট্রাসের।’ গতকাল বিকেল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর রাজপথে এই প্রতিবাদী সমর্থকগোষ্ঠীর স্লোগান ছিল, ‘জনে জনে খবর দে, সিন্ডিকেটরে কবর দে।’ আন্দোলনের স্ফূলিঙ্গের মাঝেই দুই একজন জানালেন, সিন্ডিকেটের মানুষদের জন্যই যোগ্য ফুটবলাররা খেলতে পারেন না একাদশে। অনেক সময় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে দারুণ খেলা ফুটবলারদের রাখা হয় না স্কোয়াডেও।
এই আন্দোলনরত ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠীর দাবি, রিয়াসাত এবং ফাহামিদুলের বাদ পড়ার পেছনে সেই সিন্ডিকেটেরই প্রভাব আছে। তাদের পাল্টা প্রশ্ন, প্রস্ততি ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার পড়ও কিভাবে বাদ পড়ে? এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বয়ং বাফুফের পোস্ট করা একটা ভিডিওর প্রসঙ্গ টেনে আনলেন তারা। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সিরি’ডিতে খেলা ফাহামিদুলের ড্রিবলিংয়ের সামনে রীতিমত খাবি খাচ্ছিলেন দেশের স্বনামধন্য ডিফেন্ডাররা।
যদিও বাংলাদেশ দলের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফাহামিদুলের বাদ পড়ার পেছনে কোচের কৌশলগত কারণই বারবার সামনে আসছে। বাদ দেওয়ার কারণ নিয়ে কোচ কাবরেরা বলেন, “তার বয়স ১৮ বছর। সে আমাদের বিবেচেনায় আছে। কিন্তু এই মুহুর্তে জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত না। সে আমাদের সঙ্গে থাকবে ভবিষ্যতে।”
এই বয়সের যুক্তি কতখানি ধোপে টিকে? এই কাবরেরার স্বদেশী লামিনে ইয়ামাল যখন জার্মানিতে ২০২৪ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে স্পেনকে শিরোপা জেতান, তখন তার বয়স মাত্র ১৬! জার্মানির আইন অনুযায়ী শিশু হওয়াতে, স্পেন দলকে গুনতে হয়েছিল মোটা অঙ্কের জরিমানাও।
অন্যদিকে কাবরেরা যখন জামাল ভূঁইয়া ও হামজা চৌধুরীকে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন, তখন প্রেস কনফারেন্স রুমের শেষদিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার স্বদেশী ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সহকারী কোচ ডেভিড গোমেজ। তাকে সামনে পেয়ে প্রশ্ন করার লোভ সামলাতে পারলাম না। প্রস্ততি ম্যাচে ফাহামিদুল হ্যাটট্রিক করেছিল কিনা জানতে চাইলে ব্যাচারা একদম হতবম্ভ হয়ে পড়ে। একদমই আশা করেনি এমন প্রশ্ন। অপ্রস্তুতভাবেই একগাল হেসে জবাব দিলেন, ‘‘আমি না ঠিক মনে করতে পারছিনা। নিশ্চিত না এই ব্যাপারে।’’
ডেভিডের উত্তরটা খুবই অনুমেয় ছিল। এরপর কিছুটা নিপাট ভদ্রলোকের মতোই যোগ করলেন, ‘‘আমি আসলে উত্তর দিতে পারব না। কোড অব কন্ডাক্টের বাইরে যেতে পারব না।’’
জাতীয় দলের ম্যানেজার, কোচ এবং সহকারী কোচ, সবার কথা একই সুতোয় গাঁথা, সব জায়গাতেই আছে সমন্বয়। তবে একটু জিজ্ঞাসু কিংবা অনুসন্ধানী চোখে তাকালেই লক্ষ্য করা যায় অদ্ভুত এক রহস্য, কি জানি এক লুকোচুরি, কোথায় জানি বড্ড বেখাপ্পা। ফাহামিদুলের বাদ পড়াটা কেন জানি বারবার জন্ম দিচ্ছে কিছু অস্বস্থিকর প্রশ্নের।
শেষ করা যাক বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পের শুরুর দিকের এক ঘটনা দিয়ে। এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকার বাবা ক্যামেরনের এবং মা আলজেরিয়ার। তবে এমবাপ্পে বিশ্বজয় করেছেন ফ্রান্সের জার্সিতে। এই উইঙ্গার যখন মোনাকোর সিনিয়র দলে সুযোগ পেলেন, তখন তার বাবা তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ক্যামেরুন জাতীয় দলের ট্রায়ালে। ছোট্ট এমবাপ্পে সহজেই জয় করলেন সবার হৃদয়। তবে ক্যামেরুন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই একজন কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে বসলেন উঠতি তারকার বাবার কাছ থেকে।
তাতেই বেঁকে বসল এমবাপ্পে ও তার পরিবার। তারা ফ্রান্সে ফিরে যায়। এই ব্যাপারটা পরে জানাজানি হলে ক্যামেরুন ফুটবল ফেডারেশন ফেরাতে চান এমবাপ্পেকে। তবে তিনি আর ফিরেননি। গোটা ক্যামেরুনের সৌভাগ্য হলো না, এমন একজন বিস্বয়কর ফুটবলারকে তাদের জার্সিতে দেখার। এরপর ফ্রান্সের নীল জার্সিতে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ জয় করে আগমনী বার্তা জানান দেন এমবাপে। পরের বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে লিওনেল মেসির হাত থেকে প্রায় একাই বিশ্বকাপটা ছিনিয়ে নিচ্ছিলেন, একটুর জন্য হয়নি সেবার।
তবে ক্যামেরুনের ফুটবলে আজীবনের আফসোস থাকবে এমবাপ্পেকে পেয়েও না পাওয়ার গল্প, কিছু হটকারী কর্মকর্তার জন্য। বাংলাদেশের ফাহামিদুলের গল্পটাও কি সেদিকেই যাচ্ছে? এই প্রশ্ন তোলা থাক।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল জ ত য় দল র ফ টবল র এমব প প র জন য ক বর র
এছাড়াও পড়ুন:
মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা
লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে পা রাখেন পিয়া বিপাশা। এরপর অভিনয় করেছেন মিউজিক ভিডিও, নাটক ও সিনেমায়। কিন্তু হুট করেই নাই হয়ে গেলেন। পরে জানা গেল অভিনেত্রী আমেরিকায়। গেল পাঁচ বছর সেখানেই বাস করছেন তিনি। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রবাসজীবনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
পিয়া বিপাশা জানান, একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে তাঁর প্রেম ও ভালোবাসা তৈরি হয়। তারপর তাঁরা বিয়ে করেন। দুজনে মিলে বিয়ে করলেও আনুষ্ঠানিকতা সারেননি। চলতি বছরের শেষ দিকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেওয়ার ইচ্ছা।
পিয়া বিপাশা বলেন, ‘বাংলাদেশে ভালো লাগত না। কারণ, লবিং ছাড়া কাজ হতো না। ভালো একটা সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা আর হয়নি। এরপর আমার মিডিয়ায় কাজ করার ইচ্ছাই নষ্ট হয়ে যায়। আমি আসলে কাজ করতে চেয়েছিলাম টাকা কামানোর জন্য। কাজ না করতে পারলে টাকা কামাব কী করে। তাই সিদ্ধান্ত নিই অন্য কিছু করার।’
বিপাশার কথায়, ‘টাকা রোজগারের জন্য আমি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেছিলাম। কারণ, আমার একটা মেয়ে ছিল। মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকার বিষয় ছিল। পরে দেখলাম, যেভাবে কাজ হয়, আমাকে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমেরিকায় চলে আসার। এখানে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। অনেক টাকাও আয় করছি।’
পিয়া বিপাশা বলেন, ‘সত্যি বলতে এখন আমার এমন অবস্থা, টাকা ইনকাম না করলেও হয়। যতটুকুই করি, আমার মেয়ে ও হাজব্যান্ড ওরাই বলে। আমার এখন আর কোনো স্বপ্ন নেই। যা চেয়েছি, গত পাঁচ বছরে সবই পেয়েছি। টাকাপয়সা, সুন্দর জীবন, প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ভালো স্বামী—সবই আমার হয়েছে। টাকা নিয়ে এখন কোনো চিন্তা নেই আমার—যা আয় করি, তা ব্যয় করার সময় পাই না।’
পিয়া বিপাশা জানান, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে বিভিন্ন পণ্যের যেসব পোস্ট করেন, তার জন্য বেশ ভালো সম্মানী পান। তাঁর দাবি, এই সম্মানী কখনো দুই হাজার ডলার, আবার কখনো তিন হাজার ডলারের মধ্যে।
২০১৩ সালে ‘দ্বিতীয় মাত্র’ নাটকে তাহসান খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। ছোটবেলায় রূপকথার বই পড়তে পছন্দ করতেন। বই পড়ার সময় গল্পের নায়িকার চরিত্রে নিজেকে কল্পনাও করতেন। বড় পর্দায়ও অভিনয় করেছিলেন। ‘রুদ্র: দ্য গ্যাংস্টার’ নামের সেই ছবি মুক্তি পায়। এরপর ‘রাজনীতি’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। পরে সেই ছবিতে পিয়া বিপাশার পরিবর্তে অপু বিশ্বাস অভিনয় করেন।