ঋণের বিপরীতে সঞ্চয়ের কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা
Published: 20th, March 2025 GMT
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৩০০ মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। ঋণের বিপরীতে সঞ্চয় হিসেবে ওই অর্থ নেওয়া হয়। তবে ঋণ দেওয়ার আগের রাতে গা-ঢাকা দিয়েছে প্রতারক চক্রটি।
ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে, গত মাসের শেষে দিলওয়ার হোসেন তার এক সহযোগী নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যায়। তারা প্রচার চালায়, পিপলস ট্রাস্ট নামে একটি নতুন সংস্থা প্রতিটি গ্রাম থেকে ৫ জনকে ক্ষুদ্রঋণ দেবে। ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। দুই সপ্তাহ আগে তেলিখাল ইউনিয়নের দক্ষিণ বুরদেও এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে অফিসও চালু করে প্রতারকরা। পরে লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে সঞ্চয় হিসেবে ১০ হাজার টাকা জামানত আদায় করে তারা। প্রথমে ৫ জনের কথা বললেও পরে এক গ্রামে ১০ জনের কাছ থেকেও জামানত নেওয়া হয়। এভাবে উপজেলার রাজারখাল, বাগারপাড়, ঘোড়ামারা, কাঁঠালবাড়ী, মেঘারগাঁও, ইসলামপুর, খাগাইল, বর্নী, কলাবাড়ীসহ কয়েকটি গ্রামের ৩০০ মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা সংগ্রহ করে তারা। তবে গত রোববার টাকা দেওয়ার আগে শনিবার রাতেই অফিস ফেলে প্রতারকরা লাপাত্তা।
ইসলামপুরের পিয়ারা বেগম বলেন, এনজিওর দু’জন ঋণ দিচ্ছে শুনে প্রথমে সন্দেহ হয়েছিল। তবে অন্যরা বলেছিল, ব্যাংক তো; পালিয়ে যাবে না। পরে এক লাখ টাকা পেতে ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় দেন। গত রোববার ঋণের টাকা দেওয়ার কথা ছিল। আগের রাতেই অফিসে তালা দিয়ে পালিয়েছে। বাড়ির মালিকও ওই লোকদের বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। তিনি জানান, আগামী রোববার উপজেলা নির্বাহী কমকর্তার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেবেন।
প্রবাসফেরত নবী হোসেন সমকালকে জানান, ব্যবসা ও অটোরিকশা কিনতে ২ বছর মেয়াদি ঋণের জন্য তিনিও জামানত দিয়েছিলেন। তবে এভাবে প্রতারিত হবেন, ভাবেননি। স্থানীয় কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ তাঁর।
নভাগী গ্রামের আতাউর রহমান ও তাঁর ভাই-ভাতিজা ৫ লাখ করে ঋণের জন্য দেড় লাখ টাকা জমা দেন। এক পরিবার থেকে দেড় লাখ টাকা পেয়ে ওই বাড়ির এক মেয়েকে ১৩ হাজার টাকা বেতনে চাকরিও দেয় কথিত এনজিও সংস্থার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার দিলওয়ার হোসেন।
এদিকে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া কাগজপত্রে দিলওয়ার হোসেনকে সংস্থাটির কোম্পানীগঞ্জের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে দেখানো হয়। কাগজপত্র অনুযায়ী দি পিপলস ট্রাস্টের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভি-৪৫৬১/ই ৩১৪২টি ৯৬৩১/৬৫। প্রধান কার্যালয় দেখানো হয়েছে ঢাকার সাভার এলাকার রোড ২৬, ব্লক-সি, ট্রাস্ট ভবন, দ্বিতীয় তলা। এ ছাড়া সংস্থাটি জয়েন্ট স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ২০০৫ সালের ৫ মে গ্রহণ করা রেজিস্ট্রেশন নম্বর-২০০৭ দেখানো হয়েছে।
কোম্পানীঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান সমকালকে জানান, ভুক্তভোগীরা থানায় গিয়েছিলেন। তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন। অভিযোগ পেলে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঋণ
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড় সীমান্তে গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু
পঞ্চগড় সীমান্তে গুলিবিদ্ধ যুবক মারা গেছেন। শনিবার (১৪ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাগড়া সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে আহতাবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
নিহতের নাম রাজু ইসলাম (৩৫)। তার বাড়ি হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঝুলিপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। রাজু সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু পারাপারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ঘাগড়া সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫১ এর বিপরীতে ভারতীয় এলাকার কিছু যায়গায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় এলাকাটি ভারতীয় গরু পারাপারের গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে চোরাকারবারিরা। শনিবার মধ্যরাতে এই মেইন পিলারের ৩ নম্বর সাব পিলার সংলগ্ন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন রাজু। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্যাম্পের সদস্যরা তার দুই পায়ে গুলি করে। ঘটনাস্থলের পাশেই রাজুর বাড়ি হওয়ায় গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই রাজু বাড়ি ফেরেন। পরে আহতাবস্থায় পরিবারের সদস্যরা তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। রবিবার দুপুরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু
হবিগঞ্জে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু
এদিকে রাজুর মৃত্যু বিএসএফের গুলিতে নয়, হার্ট অ্যাটাকে হয়েছে বলে দাবি করেছেন নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকেও একই দাবি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে পুলিশ বলছে, প্রাথমিক সুরতহালে মরদেহের পায়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘রাজুর হৃদরোগ থাকলেও তার মৃত্যু বিএসএফের গুলিতে হয়েছে। তার দুই পায়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে।’’
হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, ‘‘খবর পেয়ে রাজুর বাড়িতে পাই। তার দুই পায়ে ক্ষত চিহ্ন দেখেছি। ধারণা করছি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক বছরে ঘাগড়া সীমান্তে এমন পাঁচ জনের মৃত্যু হলো।’’
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা বলেন, ‘‘গত রাতে বর্ডারে কোনো গোলাগুলি হয়নি- এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সেখানে বিজিবির পেট্রোল টিম ছিল, আশপাশে বাড়িঘর ছিল। বিএসএফ গুলি করলে শব্দ শোনা যেত, তারা কেউ কোনো শব্দ শোনেনি। চোরাকারবারি দমনে বিএসএফ অনেক সময়েই ফায়ার করে, আমরা সব সময় এসবের প্রতিবাদ করি। যদিও তারা বিভিন্ন সময় বলে, আত্মরক্ষার্থে ফায়ার করে। এ ক্ষেত্রে ফায়ারের শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যায়। কিন্তু, গত রাতে কোনো শব্দ শোনা যায়নি। আমরা বিএসএফের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারাও জানিয়েছে কোনো ফায়ার হয়নি। এরপরও সৌজন্য সাক্ষাতে এ বিসয়ে আমরা তাদের আরো জিজ্ঞেস করব।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘রাজুর মৃত্যুর খবর পেয়ে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, রাজু হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে জেনেছি, তার পায়ে নাকি গুলির চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু, এ বিষয়ে তারা আমাদের কিছুই জানায়নি।’’
এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শইমী ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘নিহতের দুই পায়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি চিকিৎসক বলতে পারবেন। এছাড়া, মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।’’
এ বিষয়ে জানতে রাজুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঢাকা/নাঈম/রাজীব