মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান
Published: 21st, March 2025 GMT
মতপ্রকাশের কারণে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার, সহিংসতা, হেনস্তার মতো ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা নয়টি আন্তর্জাতিক সংগঠন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
গতকাল শুক্রবার লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো এ আহ্বান জানায়। বিবৃতিদাতা মানবাধিকার সংগঠনগুলো হলো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, আর্টিকেল নাইনটিন, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, ফর্টিফাই রাইটস, ফ্রন্ট লাইন ডিফেন্ডার্স, পেন আমেরিকা ও দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)।
বিবৃতিতে সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীসহ সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলার বেশ কিছু ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়েছে, এ ধরনের হামলা বন্ধ এবং এসব ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বিবৃতিতে সংগঠনগুলো বলেছে, বাংলাদেশে গত মাসে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের কারণে মানবাধিকারকর্মী ও সাধারণ নাগরিকেরা গ্রেপ্তার, হেনস্তা ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে লঙ্ঘনের ইতিহাস রয়েছে। মতপ্রকাশের অধিকারের প্রতি সম্মান জানানো হবে—এমন একটি ভবিষ্যৎ গঠনে অতীতের এ ধারা থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসা উচিত।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, সাম্প্রতিক হামলার সব ঘটনায় রাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষ জড়িত না থাকলেও বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের কারণে রাষ্ট্রবহির্ভূত কোনো পক্ষের হামলা থেকেও জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মতপ্রকাশের কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি ও মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার চর্চা অবিলম্বে ও নিঃশর্তে বন্ধ করতে হবে।
সংগঠনগুলো বলেছে, ক্ষমতায় আসার পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে অনেকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে যে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, তা–ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। খসড়া এই আইনেও আগের আইনের বিতর্কিত বিষয় রয়ে গেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বাম সংগঠনগুলোর একটা বড় অংশ এক ছাতার নিচে এসেছে। তারা যে প্যানেল দিয়েছে, তাতে জায়গা পেয়েছেন মূলত জোটে থাকা সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাই। নারী আছেন মাত্র একজন। তবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিতি তৈরি হওয়াকে এই প্যানেলের ‘বড় শক্তি’ বলে মনে করা হচ্ছে।
রাকসুর ২৩ পদের বিপরীতে ১৬টিতে প্রার্থী দিয়েছে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। তাদের প্যানেলের নাম ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’। এই প্যানেলে আছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র গণমঞ্চ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক–সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন শিক্ষার্থী আছেন দুজন। তবে প্যানেলে থাকা দুজন সদস্য সরে দাঁড়িয়েছেন।
এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কোষাধ্যক্ষ কাউছার আহম্মেদ এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী করা হয়েছে ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকারকে।
বাম জোটের নেতারা বলছেন, ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছেন তাঁরা। এর মাধ্যমেই তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত। শিক্ষার্থীদের ‘প্রধান কণ্ঠস্বর’ হিসেবে কাজ করেছেন, করছেন। তাঁদের দাবি, এটাই তাঁদের বড় শক্তি।
প্রার্থীদের প্রায় সবাই জোটের নেতাবামদের এই প্যানেলে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লড়বেন বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ। মহিলাবিষয়ক সহসম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের শ্রেয়সী রায়, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর হাসান শাহরিয়ার খন্দকার আলিফ এবং তথ্য ও গবেষণা সহসম্পাদক পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মো. সজীব আলী।
এ ছাড়া সহবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রিসার্চ চাকমা এবং সহপরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীন ত্রিপুরাকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য মুনতাসির তাসিন, পরিবেশ ও সমাজসেবা–বিষয়ক সম্পাদক পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আজমাইন আতিক ও নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ।
এই প্যানেল থেকে জোটের বাইরে দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সহমিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী ফাহিম মুনতাসির এবং নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন আসাদ সাদিক।
দাবি আদায়ের মাঠে থাকা ‘বড় শক্তি’শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার আন্দোলনে বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সব সময় মাঠে দেখা গেছে। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতেও তাঁরা তৎপর থেকেছেন। সংখ্যায় কম থাকলেও আন্দোলনের জায়গায় পিছিয়ে ছিলেন না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্ম ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও বাম নেতারা ছিলেন সোচ্চার।
শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাদ্য, পরিবহনসংকট, ফি কমানো, নারীদের নিরাপত্তাসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে আসছে বাম সংগঠনগুলো। জুলাই আন্দোলনেও সক্রিয় ছিল তারা। এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একজন।
বাম নেতারা বলছেন, নব্বই–পরবর্তী বাম রাজনীতির ক্রান্তিকাল চলছে। এর পর থেকে আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়ে গেছে। সেই ছায়া পড়েছে প্রগতিশীল রাজনীতিতে। অন্য সংগঠনগুলোতে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাম রাজনীতি করলে সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বাম সংগঠনগুলো যে সব সময় সক্রিয় থেকেছে, এটাকেই রাকসু নির্বাচনে একটা বড় শক্তি মনে করছেন তাঁরা।
বামদের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলন করায় আমরা ক্যাম্পাসে পরিচিত। সে হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষিত। বিগত দিনে আমরা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রধান কণ্ঠ ছিলাম। আমাদের তারা মূল্যায়ন করবে। আমাদের এই লড়াই–ই বড় শক্তি।’