ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মাটি কাটা বন্ধে তিতাস নদের ওপর অবৈধভাবে নির্মিত চারটি বাঁধ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এতে মাটি কেটে লুট করা বন্ধ হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যৌথভাবে এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে এসব বাঁধ ভেঙে পানি চলাচল স্বাভাবিক করেছে।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত মঙ্গলবার থেকে সেখানে আমাদের অভিযান চলছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে পাউবো, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে চারটি স্থানে অবৈধভাবে নির্মিত বাঁধ এক্সকাভেটর দিয়ে কেটে দেওয়া হয়। ওই দিন রাতে বাঁধগুলো তারা আবার মাটি দিয়ে ভরাট করে জোড়া লাগিয়ে ফেলে। শুক্রবার আবার অভিযান পরিচালনা করে বাঁধগুলো সম্পূর্ণরূপে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। নদে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হয়েছে।’ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।

গত বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে ‘পানি শুকিয়ে মাটি কেটে লুট’ শিরোনামে প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, আখাউড়া উপজেলার তিতাস নদের বনগজ স্টিলের সেতুর উত্তর দিকে কয়েক শ গজ দূরে নদের দুই পাড় বরাবর মাটি দিয়ে দুটি এবং সেখান থেকে আধা কিলোমিটার দূরে আরেকটি বাঁধ দেওয়া হয়। তিনটি বাঁধের মাঝখানের পানি শুকিয়ে খননযন্ত্র দিয়ে রাতের আঁধারে মাটি তুলে ট্রাকে অন্যত্র নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছিল। নদে বাঁধ ও পানি শুকিয়ে ফেলায় পাশের ফসলি জমিতে সেচ দিতে পারছিলেন না স্থানীয় কৃষকেরা। তাঁরা বাঁধ ও মাটি উত্তোলনে বাধা দিলে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কৃষকদের প্রাণনাশের হুমকি দেন।

১২ মার্চ নদের মাটি কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আখাউড়ার ইউএনওর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। এতে মাটি কাটার কাজে সদর উপজেলার উজানিসার গ্রামের আরিফুল মীর, একই গ্রামের নুরুজ্জামান ও আল আমিন ভূঁইয়া জড়িত বলে উল্লেখ করেন। যদিও আরিফুল মীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়ন এলাকায় আওয়ামী লীগের আমলে দলীয় লোকজন প্রকাশ্যে কোটি কোটি টাকার বালু ও মাটি লুটপাট করেছেন। সরকার পতনের কারণে কিছুদিন এসব লুটপাট বন্ধ থাকার পর হাত বদল হয়ে নতুন আরেকটি প্রভাবশালী চক্র নদের তিন স্থানে বাঁধ দিয়ে মাটি লুটের মহোৎসব শুরু করে। মাটি লুটের জন্য তিতাস নদের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ত স নদ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘ঢলন’ প্রথা বহাল, মণ হিসেবেই বিক্রি হচ্ছে আম

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারগুলোয় এখনও ‘ঢলন’ প্রথা বহাল রেখেই মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে আম। কেজি হিসেব করে কমিশনের ভিত্তিতে আম কেনাবেচা করতে নারাজ চাষিরা। সেজন্য মণেই বিক্রি হচ্ছে আম। ফলে মাঠ পর্যায়ে বাস্তাবায়ন হচ্ছে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। 

এরআগে গত বুধবার (১১ জুন) রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ে ‘ঢলন’ প্রথা বাতিল করে প্রতি কেজিতে দেড়টাকা কমিশনের ভিত্তিতে বাজারে আম কেনাবেচার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। 

এদিকে, জেলার সচেতন নাগরিকরা মনে করেন- কেজির হিসেবে কমিশনে আম কেনাবেচার সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। বাজারগুলোয় ঢলনের ওজন কমিয়ে আনতে পারলেই চাষিরা আম বেচে লাভবান হতেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের বড় বাজারের নাম কানসাট। এখানে দীর্ঘদিন ধরে ৪০ কেজির পরিবর্তে অতিরিক্ত ওজনে আমের মণ নির্ধারিত হয়ে আসছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতিমণ ছিল ৪৫ কেজিতে। ২০১৬ সালে ডিজিটাল মিটার চালুর পর তা বেড়ে হয় ৪৬ কেজিতে। এরপর বিভিন্ন সময়ে ৪৮-৫২ কেজিতে মণ ধরে বিক্রি হচ্ছে আম। 

তবে জেলার রহনপুর ও ভোলাহাট বাজারে এই কেজির পরিমাণ আরও বেশি। ওইসব জায়গায় ৫৩-৫৪ কেজিতে মণ ধরেই বিক্রি হয় ফলটি। ফলে এ জেলার চাষিরা ঢলনের ফাঁদে পড়ে ঠকছেন।

এরপরেই বিভিন্ন দাবিদাওয়ার প্রেক্ষিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ পাশের দুটি জেলার চাষিদের নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠকে বসে রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসন। এতে অংশ নেয় বিভাগটির সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদনকারী জেলাগুলোর চাষি ও আড়তদাররা। 

প্রথম দফায় কেজি দরে আম কেনাবেচার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের পরেই আড়তদাররা কেজিপ্রতি তিন টাকা কমিশন চাইলে নতুন করে জটিলতা দেখা দেয়। এ জটিলতা নিরসনে গত বুধবার (১১ জুন) চাষি, ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সমন্বয়ে বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে ঢলন বাদ দিয়ে কেজিপ্রতি দেড় টাকা বা প্রতি মণে ৬০ টাকা কমিশনের আম বেচাকেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরেই মাঠ পর্যায়ের আম চাষিরা কমিশনে আম বিক্রিতে নারাজ। সেজন্য প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মাঠে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

কেজি-কমিশন পদ্ধতিতে আম কেনাবেচা প্রসঙ্গে কানসাট আম বাজারের আড়ৎদার আমিরুল ইসলাম জাকিরের সঙ্গে কথা বলে রাইজিংবিডি। 

তিনি বলেন, “প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা তো কেজি দরেই কমিশনের ভিত্তিতে আম কিনতে রাজি। কিন্তু চাষিরা নিজ থেকেই ৫১-৫২ কেজিতে মণ হিসেব করে আম দিচ্ছেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। সবমিলিয়ে আড়ৎদাররা জানালেন তারা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আম কিনতে প্রস্তুত। কিন্তু চাষিরা সেই সিদ্ধান্ত মানছে না।”

আমচাষিদের ভাষ্য- কেজির হিসেবে আড়ৎদাররা আম কিনতে চাইছেন ঠিকই। কিন্তু তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো দাম নির্ধারণের পাশাপাশি কারচুপি করছেন। দামাদামি করেও খুব একটা পত্তা পড়ছে না। যার কারণেই তারা মণ হিসেবেই আম বিক্রি করছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নশিপুরের আমচাষি আব্দুর রাকিব একটি হিসেব কষে জানালেন, একমণ খিরসাপাত আমের দাম দুই হাজার টাকা। মণেই বিক্রি করতে গেলে এরকমই দাম পাওয়া যাচ্ছে। তবে কেজি দরে বিক্রি করতে গেলে আড়ৎদাররা দুই হাজার টাকাকে ৫৪ দিয়ে ভাগ করে প্রতি কেজি আমের দাম ধরছে মাত্র ৩৭ টাকা। ৪০ কেজি আমের মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৮০ টাকা। এখান থেকে ৬০ টাকা কমিশন কেটে চাষি পান ১ হাজার ৪২০ টাকা। ঘুরেফিরে আমাদেরই ক্ষতি।”

শিবগঞ্জের শাহবাজপুরের আম চাষি মোজাম্মেল হক বলেন, “যেই হিসেবেই আম বেচাকেনা করা হোক না কেন; সব দিক থেকেই আমরা ঠকছি। বর্তমান সময়ে আমের পরিচর্যা করতে যে পরিমাণ খরচ-খরচা হয় তা কখনই উঠে না। বাধ্য হয়ে আম বিক্রি করতে হয়। এছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই।”

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আম গবেষক বলেন, ‘‘কথা যখন উঠেছে আমের ওজন নিয়ে, তাই বাজারগুলোয় ঢলনের ওজন কমিয়ে আনতে পারলেই চাষিরা আম বেচে লাভবান হতেন। আমের মণ ৫২ কেজি থেকে ৪৫ কেজিতে কীভাবে কমানো যায় সেটি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারতো। আলাদা করে কেজি হিসেবে কমিশনের ভিত্তিতে আম কেনাবেচা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।’’

প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলী বলেন, “বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে একটি বৈঠকে ৪০ কেজিতে মণ ও কেজিপ্রতি দেড় টাকা কমিশনে আম কেনাবেচার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে বাজারগুলোয় বিক্রি হবে আম। এর বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।”

ঢাকা/শিয়াম/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ