জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) রংপুরে এক ইফতার পরবর্তী দলীয় আলোচনা সভায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, তাঁকে ঢাকা থেকে একজন আজ ফোন করে বলেছেন, তিনি ঢাকায় ফিরলে গ্রেপ্তার হতে পারেন।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির রংপুর মহানগর ও জেলা কমিটি এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের নিয়ে ইফতার–পরবর্তী এক আলোচনা সভায় জি এম কাদের এই আশঙ্কার কথা জানান। চার দিনের সফরে গতকাল শুক্রবার রংপুরে আসেন জি এম কাদের।

জি এম কাদের বলেন, ‘আমাকে ঢাকা থেকে একজন আজ বলেছে, উনি কতটুকু রিলায়েবল জানি না, ঢাকায় গেলে আপনাকে অ্যারেস্ট (গ্রেপ্তার) করা হবে; আপনি বরং রংপুরে থাকেন। রংপুরের লোকের সামনে আপনাকে অ্যারেস্ট করতে সরকার সাহস পাবে না। আমার অন্তর থেকে এই জিনিসটাকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছি। আমি অ্যারেস্ট হওয়ার জন্য ভয় করি না।’

রংপুর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ইফতার–পরবর্তী আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিএম কাদের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্রদের নেতৃত্বের নানা দিক নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তব্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির মতো রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে জি এম কাদের অভিযোগ করেন।

জি এম কাদের বলেন, ‘ওনাদের (ছাত্রদের নতুন দল) মধ্যে একটা সুন্দর বন্দোবস্ত চিন্তা করেছেন, আমরা একটা দল করব। সরকারের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এই দলকে ক্ষমতায় আনতে হবে। ক্ষমতায় আসতে হলে প্রতিযোগী কম হতে হবে। প্রতিযোগী কে আছে, আওয়ামী লীগ। সে তো গর্তে ঢুকে গেছে। গর্ত থেকে যেন না বেরোতে পারে। সেকেন্ড (দ্বিতীয়) প্রতিযোগী জাতীয় পার্টিকে তো কোনো দিক দিয়ে প্যাঁচানো যাচ্ছে না। ওই যে প্রচারণা চালিয়েছিল এত দিন দোসর, দোসর, দোসর করে এদের বাদ দাও।’

‘দোসর’ বলে প্রচারণা করে জাতীয় পার্টিকে রাজনীতি থেকে বের করে দেওয়ার একটি বন্দোবস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘সবাই জানে, আন্দোলনে ওনারা (জাতীয় পার্টি) ছিল, তার পরও কেন আমাদের রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। আমাদের মিটিং-মিছিলে বাধা দেওয়া হবে। আমাদের পার্টি অফিসে হামলা করা হবে। আমাদের ইফতার মাহফিলে হামলা করা হবে। আমরা যেন জনগণের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই, জনগণ যেন আমাদের ভুলে যায়, আমাদের নেতারা যেন হতাশ হয়ে যান, এটা ছিল উদ্দেশ্য। এখনো এই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা।’

ছাত্র নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষমতার লোভ এসেছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমি জিনিসটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছি, তাঁরা কেন হঠাৎ বন্ধু থেকে শত্রু বানাচ্ছে। পরে বুঝতে পারলাম, যে রোগটা আমাদের সকলের হয়, বাংলাদেশের সব নেতার হয়েছে, সেই রোগটা আমার তরুণ বন্ধুদের মধ্যে হয়ে গেছে। কী সে রোগ? আমরা ছোটবেলায় শুনেছি, জিনের আসর পড়ে, ভূতের আসর পড়ে। এদের হয়েছে ক্ষমতার আসর। ক্ষমতার নেশা তাঁদের পেয়ে বসেছে। ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে এবং এই ক্ষমতার স্বাদ দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য তাঁরা এ ধরনের পলিসি গ্রহণ করছে।’

পুলিশের মতো সেনাবাহিনীতেও তাঁরা হাত করতে চায় মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, ‘পুলিশের মতো যদি আজকে সেনাবাহিনীও হয়ে যায়, ওনারা যেভাবে করছেন, একে ধরবেন, ওকে মারবেন, নিজস্ব কিছু লোক সেট করবেন, তাহলে বাংলাদেশের মানুষের কোনো ধরনের কোনো নিরাপত্তা থাকবে না। রাস্তাঘাটে চলাচল করতে পারবে না। পুলিশ নষ্ট করেছে, সেনাবাহিনী নষ্ট করবে। তাঁরা ক্ষমতায় যাবে এভাবে। যাতে সবকিছু তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকে।’

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের অতিরিক্ত মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। সভা সঞ্চালনা করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ইয়াছির।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ষমত র আম দ র ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩