নতুন বাংলাদেশ গড়তে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ, মাস সামনে আনতে হবে। যারা দ্বিতীয় পন্থার খোঁজে আছে, তারা দেশের মানুষের ত্যাগের বিরুদ্ধে কাজ করছে।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ১৬ বছর আন্দোলন করেছি বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার মূল বাহক হচ্ছে নির্বাচন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য মূল বাহক হচ্ছে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার, একটি সংসদ। এই পরিবর্তন করার জন্য আর দ্বিতীয় কোনো পন্থা নেই।’

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে আরেকটি শক্তি অন্যভাবে নির্বাচনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনা একভাবে বাধাগ্রস্ত করেছেন, এরা কিন্তু অন্যভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের নির্বাচন না হতে পারলে মনে হয় তারা খুব খুশি।’

বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি নেতা–কর্মীদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠামাত্র বহিষ্কার করা হচ্ছে। পরে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুই হাজারের কাছাকাছি নেতা–কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা পত্রিকা বা যেকোনোভাবে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। পরে অপরাধের সঙ্গে জড়িত না বলে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের দলে ফেরানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি যারা অপরাধে জড়িত, তারা যে দলেরই হোক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এ ক্ষেত্রে দল–মত বিবেচনা করার দরকার নেই। আমরা নিজেরা সরকারে থাকলেও এটাই করতাম।’

আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে বিএনপি সহযোগিতা করছে, এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে প্রশ্নের উত্তরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির জনপ্রিয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য একটি পক্ষ অপপ্রচার করছে। যারা প্রচার করছে তাদের কোনো আদর্শ নেই। তারা নতুন নতুন বয়ান বাজারে ছড়াচ্ছে। বিএনপি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দল। বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের প্রতিটি স্তরের নেতা–কর্মী জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমি নিজেও কারাগারে গেছি একাধিকবার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমার পরিবারও। সুতরাং আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো প্রতিহিংসা কিংবা প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তবে আমরা চাই শেখ হাসিনাসহ যাঁরা অপরাধে জড়িত তাঁদের বিচার হোক। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি অতি দ্রুত দৃশ্যমান বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার জন্য। বিএনপি বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী না।’

নগর বিএনপির সভাপতি এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র শাহাদাত হোসেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজিমুর রহমান, সাবেক সদস্যসচিব আবুল হাশেম, যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন চৌধুরী, এম এ আজিজ প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র র র জন র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ