ফিলিস্তিনের গাজার আরও হাজার হাজার বাসিন্দাকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। উপত্যকাটিতে চলমান নৃশংস হামলার মধ্যেই আজ মঙ্গলবার উত্তরে সীমান্তবর্তী সব এলাকার ফিলিস্তিনিদের চলে যেতে বলা হয়। ইসরায়েলের ভাষ্য, ওই এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে রকেট ছোড়া হয়েছে।

যেসব এলাকার বাসিন্দাদের চলে যেতে বলা হয়েছে, সেগুলো হলো গাজা নগরীর জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া, বেইত হানুন ও শেজাইয়া এলাকা। জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দের ইসরায়েল বলেছে, ‘নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আপনাদের দক্ষিণে পরিচিত আশ্রয়শিবিরগুলোতে চলে যেতে হবে।’ দক্ষিণে খান ইউনিস ও রাফা এলাকা থেকেও ফিলিস্তিনিদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যুদ্ধবিরতি ভেঙে ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবার হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, তখন থেকে গতকাল পর্যন্ত ইসরায়েলে হামলায় প্রায় ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এর মধ্যে আজ এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৩ জন। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় এখন আর কোনো এলাকা নিরাপদ নয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। সেদিন ইসরায়েল থেকে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে জিম্মি করে তারা। ওই হামলার পরপরই গাজায় নৃশংসতা শুরু করে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় এখনো বন্দী থাকা ৫৯ জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ দিতেই নতুন করে হামলা শুরু করেছে তারা।

এদিকে গাজায় ১৭ মাসের বেশি সময় ধরে চলা হামলায় গতকাল পর্যন্ত ৫০ হাজার ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০৪ জন। এই নৃশংসতার মধ্যে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছে হামাস। তবে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

পৃথক হামলায় দুই সাংবাদিক নিহত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় পৃথক ইসরায়েলি হামলায় দুজন গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন আল-জাজিরার সাংবাদিক। তাঁর নাম হোসাম শাবাত। বয়স ২৩ বছর। তিনি আল-জাজিরা মুবাশ্বেরে কর্মরত ছিলেন। গত সোমবার গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন তিনি।প্রত্যক্ষদর্শীরা আল-জাজিরাকে জানান, বেইত লাহিয়ার পূর্বাংশে হোসাম শাবাতকে বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা হয়।

গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজ্জুম বলেন, এর আগেও অন্য একটি ইসরায়েলি হামলায় হোসাম শাবাত আহত হয়েছিলেন। তা-ও গাজায় সংবাদ প্রতিবেদন করা অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি। তারেক বলেন, কোনো ধরনের পূর্বসতর্কতা ছাড়াই হোসামের গাড়িকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

গতকাল সোমবার দিনের শুরুতে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস এলাকায় আরেকটি ইসরায়েলি হামলায় মোহাম্মদ মানসুর নামের আরেক সাংবাদিক নিহত হন। তিনি ‘প্যালেস্টাইন টুডে’ নামের একটি সংবাদমাধ্যমে কর্মরত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল জ জ র ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ