Samakal:
2025-11-03@08:56:07 GMT

টানা ৭২ ঘণ্টা যুদ্ধ করি

Published: 25th, March 2025 GMT

টানা ৭২ ঘণ্টা যুদ্ধ করি

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া বাজারের পাশে বানার নদীতীরে বধ্যভূমিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তিম লাল স্মৃতি স্মারক। এই বাজারেই ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্তিশালী ক্যাম্প। এই ক্যাম্পে নিরীহ বাঙালিদের ধরে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করত পাকিস্তানি সেনারা। পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতো শত শত নারী। দিন-তারিখ ঠিক মনে নেই, তবে শুক্রবার ছিল। আর শুক্রবারই এই অত্যাচারের ইতি টানতে টানা ৭২ ঘণ্টা যুদ্ধ করে এই ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেয় আমার মুক্তিযোদ্ধারা। এখন অবহেলায় পড়ে থেকে বধ্যভূমিটি, একপাশে জমেছে ময়লার ভাগাড়। নতুন প্রজন্মের অনেকের স্মৃতিতে এই যুদ্ধ ধূসর হলেও এখনও তা অটল সত্তরোর্ধ্ব আমার মতো রবীন্দ্র চন্দ্রের কাছে। রোজ একবার এই জায়গাটায় এসে দাঁড়াই। আজ বাড়িতেই সারাদিন, শরীরটা খুব একটা ভালো না, তাই সারাদিন বাড়িতেই। কদিন পরেই ২৬ মার্চ, কত স্মৃতি এসে ভিড় করছে চোখের কোণে।
আমার মায়ের নাম কিরণ বালা, আমার বয়স যখন ছয়-সাত, তখন মা মারা যান। মাকে হারিয়ে অনাদরে শৈশব কাটে আমার, সেই থেকে ঘরছাড়া। লজিং পড়াতাম পার্শ্ববর্তী শিবগঞ্জ এলাকায়। আলামিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে, মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। বন্ধুরা মিলে রেডিওতে রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের ভাষণ শোনার পর সিদ্ধান্ত নিলাম মুক্তিযুদ্ধে যাব। দুই চাচাতো ভাইকে সাথে নিয়ে রাতের আঁধারে বাড়ি ছাড়ি। চলে যাই টাঙ্গাইলের সখিপুরের গহিন গজারি বনে, মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন এক ক্যাম্পে।
জায়গাটার নাম বয়ড়াতলী, সেখানে কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগদান করার পর শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং। চাচাতো দুই ভাই সুকুমার চন্দ্র দত্ত ও সুবোধ চন্দ্র দওকে নিয়ে আমাদের তৎকালীন কোম্পানি কমান্ডার আলী হোসেন লাল্টুর নেতৃত্বে ৪১ দিনের ট্রেনিং শেষ করি। এর মধ্যেই কানে আসে কত পরিচিত মানুষের মৃত্যু সংবাদ, কত ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ফেলার খবর। তার মধ্যে সবচেয়ে কষ্ট দেয় পাকিস্তানি সেনারা একটি বাড়িতে আগুন দিলে সবাই দৌড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু ঘরে একজন বৃদ্ধ ছিল। বেরোতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ঘরেই পুড়ে মারা গেছে। তাই মনে মনে বিষিয়ে ছিলাম প্রতিশোধ নেওয়ার। হঠাৎ খবর আসে, আমাদের প্রথম যুদ্ধ করতে যেতে হবে রাঙ্গামাটিয়া। রাঙ্গামাটিয়া ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দিতে হবে। এরপর সিদ্দিকালি বাজার আমাদের নতুন ক্যাম্প থেকে কমান্ডারের নির্দেশে অ্যাম্বুশে চলে যাই ৭৫ জন মুক্তিযোদ্ধা।
আমাদের সাথে ভারী অস্ত্র বলতে দুটো এলএমজি আর থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও গ্রেনেড ছিল। এলএমজি চালাত সেনাবাহিনীর লোক। শক্তিশালী হাতিয়ার। চারটি কোম্পানিতে থাকা প্রায় আড়াইশ মুক্তিযোদ্ধা চারদিক থেকে অ্যাম্বুশ করে ফায়ার শুরু করলাম। শুরু হলো তুমুল গোলাগুলি। এর মধ্যে খবর আসে, মিলিটারিদের একটি গাড়ি গোলাবারুদ ও সৈনিকসহ অন্যত্র সরে পড়ছিল। পশ্চিমদিকে সন্তোষপুর দিয়ে যাবে গাড়িটি। ঠিক তখন দুটো এলএমজিসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা মিলে আমরা ওত পেতে থাকি, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।  গুলির মুখে পড়ে মিলিটারিরা যেখান থেকে কেউ বেঁচে ফিরতে পারেনি। ব্রাশফায়ারে এদিক-ওদিক ছিটকে পড়ে। এরপর চলল টানা ৭২ ঘণ্টা যুদ্ধ। টানা যুদ্ধ চলাকালে বোমা মেরে রাঙ্গামাটিয়া ব্রিজটি ভেঙে ফেললাম আমরা। এতে আরও বেকায়দায় পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। এদিকেও যেতে পারে না, ওদিকেও না। পরে খবর পেলাম, আমাদের সঙ্গে থাকা গোলাবারুদ ও রসদ ফুরিয়ে গেছে। কোম্পানি কমান্ডারের নেতৃত্বে আমরা পিছু হটি। আমাদের ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয় রাঙ্গামাটিয়ার যুদ্ধে। অবশ্য অন্তত ৩০০ পাকিস্তানি সেনাও মারা যায়। পরে তাদের ট্রাক ভরে লাশগুলো নিয়ে যায় ওরা। এত লাশ এই এলাকায় মানুষ আগে কখনও দেখেনি। কিন্তু এর পরে আরও পাকিস্তানি সেনা এসে সমস্ত গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছিল। রণাঙ্গনে চারটি বড় ধরনের যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে সম্মুখে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছি।
সব শেষে কেশরগঞ্জ বাজার যুদ্ধ ছিল আরও রক্তক্ষয়ী। গুলি করতে করতে নদীর কাছে চলে আসি আমি আর আমার বন্ধু। হঠাৎ করেই আমার সহযোদ্ধার পায়ের ওপর গুলি লাগে। পরে আমি কাঁধে করে সরিয়ে নিয়ে ওর জীবন বাঁচিয়েছিলাম। সেই বন্ধু এখনও বেঁচে আছে। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর ৭ মাচের্র ভাষণ আমাদের উজ্জীবিত করেছে, আন্দোলিত করেছে। রণাঙ্গনে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা আমাদের মুক্তির পথ দেখিয়েছিল, উদ্বেলিত করছিল।
একমাত্র দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে একটা স্বাধীন দেশ উপহার দিতেই যুদ্ধে যাওয়া আমাদের। স্বাধীনতার এত বছর পরে এসেও প্রশ্ন জাগে, কতটা স্বাধীন হলাম আমরা? 
নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে লালন করে দেশকে গড়তে হবে।

অনুলিখন
কবীর উদ্দিন সরকার হারুন
ফুলবাড়িয়া প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য দ ধ কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

মার্কস অলরাউন্ডার: ময়মনসিংহ ও দিনাজপুরসহ ৯ জেলায় কবে কোথায় প্রতিযোগিতা

বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে এখন চলছে প্রতিভার উচ্ছ্বাস ‘মার্কস অলরাউন্ডার’। ‘দেখাও যত প্রতিভা তোমার’ স্লোগানে আয়োজিত দেশের অন্যতম বড় প্ল্যাটফর্মটি শিশু-কিশোরদের নিজেদের সম্ভাবনা প্রকাশের মঞ্চ হয়ে উঠেছে। বরাবরের মতো এবারের আয়োজনটিও পাচ্ছে দর্শক ও অংশগ্রহণকারীদের দারুণ সাড়া। প্রতিযোগিতাটি তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হবে—আঞ্চলিক, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে। এরই মধ্যে অনেক স্থানে প্রতিযোগিতার আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্র ও শনিবার (৭ ও ৮ নভেম্বর) ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঠাকুরগাঁও, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী ও পঞ্চগড় অঞ্চলের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। নিম্নলিখিত প্রতিটি ভেন্যুতে সকাল আটটা থেকে শুরু হবে প্রতিযোগিতা।

তারিখ: ৭ নভেম্বর, শুক্রবার

ভেন্যু: কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া।

যে এলাকার শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে: কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলা।

ভেন্যু: কলেজিয়েট গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাসপাতাল রোড, দিনাজপুর সদর, দিনাজপুর।

যে এলাকার শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে: দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলা।

ভেন্যু: ময়মনসিংহ সরকারি কলেজ, আকুয়া, ময়মনসিংহ।

যে এলাকার শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে: ময়মনসিংহ সদরের একাংশ (আকুয়া, সানকিপাড়া, কলেজ রোড, কাচিঝুলি, পুলিশ লাইনস, নয়াপাড়া, মাসকান্দা, দিগারকান্দা ও সুতিয়াখালী), মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া, ত্রিশাল, ভালুকা ও গফরগাঁও থানা।

তারিখ: ৮ নভেম্বর, শনিবার

ভেন্যু: ঝিনাইদহ নিউ একাডেমি স্কুল, ঝিনাইদহ সদর, ঝিনাইদহ।

যে এলাকার শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে: ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা।

ভেন্যু: ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ময়মনসিংহ।

যে এলাকার শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে: ময়মনসিংহ সদরের একাংশ (টাউন হল, কাচারি, চরপাড়া, ব্রিজ মোড়, গাঙ্গিনাপাড়, পণ্ডিতপাড়া, মেছোয়া বাজার, ছোট বাজার ও বড় বাজার), গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, তারাকান্দা, ফুলপুর, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া থানা।

ভেন্যু: নীলফামারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, পিটিআই রোড, নীলফামারী সদর, নীলফামারী।

যে এলাকার শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে: নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলা।

প্রতিযোগিতার গ্রুপ ও বিষয়—

প্লে থেকে চতুর্থ শ্রেণি—জুনিয়র স্কুল (গান, নাচ, অভিনয়, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, গল্প বলা); পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি—মিডল স্কুল (গান, নাচ, অভিনয়, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা) এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—হাইস্কুল ও কলেজ (গান, নাচ, অভিনয়, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা।)

ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, যশোর, মাগুরা, নোয়াখালী, ফেনী, সিলেট, নাটোর, পাবনা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, খুলনা, বাগেরহাট, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, টাঙ্গাইল, লালমনিরহাট, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, জামালপুর, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের ১০০টি স্থানে আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের সব স্কুল-কলেজ (প্লে গ্রুপ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) এবং সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে।

পুরস্কার

মার্কস অলরাউন্ডারে তিনটি গ্রুপ থেকে সেরা তিন অলরাউন্ডারের প্রত্যেকে পাবে ১৫ লাখ টাকার শিক্ষাবৃত্তি। আর বিভিন্ন পর্যায়ের বিজয়ীরা পাবে মোট এক কোটি টাকার বেশি উপহার ও শিক্ষাবৃত্তি।

গ্র্যান্ড ফিনালেতে তিনটি গ্রুপের ফার্স্ট রানার্সআপ এবং সেকেন্ড রানার্সআপের প্রত্যেকে পাবে পাঁচ লাখ এবং তিন লাখ টাকার শিক্ষাবৃত্তি। তিনটি গ্রুপের ছয়টি বিষয়ের প্রতিটিতে সেরা ৩ জন করে মোট ৫৪ জন সেরা পারফরমারের প্রত্যেকে পাবে যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক। জাতীয় পর্যায়ে তিনটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়নদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাবে একটি করে কম্পিউটার।

আয়োজকদের মতে, মার্কস অলরাউন্ডার শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়। এটি বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের প্রতিভা, মেধা, সংস্কৃতি ও আত্মবিশ্বাস বিকাশের একটি অন্যতম বড় প্ল্যাটফর্ম। আঞ্চলিক থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত এই আয়োজন অংশগ্রহণকারীদের জন্য হয়ে উঠেছে শেখার, নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার এবং ভবিষ্যতের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ।

বিস্তারিত জানতে এবং রেজিস্ট্রেশন করতে ভিজিট করতে হবে। ফোন করা যাবে (সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা) ০৯৬১৪৫১৬১৭১ নম্বরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নভেম্বরে বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির
  • মাহিদুল ও মজিদের সেঞ্চুরি, ৮ রানের জন্য পাননি মুমিনুল
  • মাহিদুল-মজিদের সেঞ্চুরির দিনে মুমিনুলের ৮ রানের আক্ষেপ
  • দেশজুড়ে বৃষ্টি ও তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস
  • দিনে ঢাকায় মিছিল, রাতে বাড়িতে ফিরতেই নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ৩ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
  • জুলাই সনদ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে: মামুনুল হক
  • এনসিএল: তিন সেঞ্চুরি ও মিরপুরে উইকেটের মিছিল
  • রংপুরকে পেয়েই আবার নাঈমের সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি মাহফিজুল ও সাদিকুরেরও
  • মার্কস অলরাউন্ডার: ময়মনসিংহ ও দিনাজপুরসহ ৯ জেলায় কবে কোথায় প্রতিযোগিতা
  • রাতে বাড়িতে পুলিশের অভিযান, ভোরে ধানখেতে পাওয়া গেল রক্তাক্ত মরদেহ