রাতে বাড়িতে পুলিশের অভিযান, ভোরে ধানখেতে পাওয়া গেল রক্তাক্ত মরদেহ
Published: 31st, October 2025 GMT
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে জমিজমার বিরোধে থানায় করা এক মামলার আসামিকে ধরতে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে আজ শুক্রবার ভোরে বাড়ির পাশে একটি ধানখেত থেকে তাঁর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
মরদেহ উদ্ধার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম আবু সাদাদ সায়েম (৫০)। তিনি উপজেলার কৈচাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। এলাকায় শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালাতেন তিনি।
পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত সাদাদের বাবা মোসলেম উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেনের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর জেরে দুই পরিবারের মধ্যে গত শুক্রবার মারামারির ঘটনা ঘটলে প্রতিপক্ষের লোকজন হালুয়াঘাট থানায় আটজনের নামে একটি মামলা করেন। মামলার ১ নম্বর আসামি ছিলেন সাদাদ। গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হালুয়াঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক মিয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সাদাদ পালিয়ে যান। তাঁকে না পেয়ে ফিরে আসে পুলিশ।
এদিকে পুলিশ চলে যাওয়ার পর সাদাদ বাড়িতে ফিরে না আসায় স্বজনেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে আজ ভোরে বাড়ির পাশের একটি ধানখেতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যায়। তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
সাদাদের বাবা মোসলেম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে তাঁর জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এর জেরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে তাঁরা থানায় মামলা করেন। আগামী রোববার দুই ছেলের জামিন নেওয়ার কথা ছিল। তার আগেই তারা (প্রতিপক্ষ) তাঁর ছেলেকে হত্যা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সাদাদের ছোট ভাই জসিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশের সহযোগিতায় বাদীপক্ষের লোকজন পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করে ধানখেতে ফেলে রেখে যায়। অথচ কোনো আসামি ধরবে না বলে পুলিশ আমাদের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছিল। আমরা আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।’
এ ঘটনার পর দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হালুয়াঘাট থানার এসআই মানিক মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘গতকাল রাতে মামলার আসামিকে ধরতে গেলে আমরা পাইনি। ওই সময় হয়তো আমাদের উপস্থিতি দেখে পালিয়েছিল। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই সত্য নয়।’
হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত সাদাদের শরীরে জখম, ছিলে যাওয়া ও কামড়ের মতো আঘাত আছে। তবে গুরুতর কোনো আঘাত তাঁরা দেখতে পাননি। মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তিনি বলেন, পুলিশ তাঁর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আসামি ধরতে যায়। ঘরে না পাওয়ায় পুলিশ চলে আসে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে তাঁরা প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম উদ দ ন উদ ধ র ধ নখ ত মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
নেত্রকোনায় দুটি লোকাল ট্রেনের চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও জারিয়া রুটে পৃথক দুটি লোকাল ট্রেনের চলাচল বন্ধ আছে কয়েক মাস। বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে আসা-যাওয়ার স্বল্প ভাড়ার এসব ট্রেন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ অন্য যাত্রীরা। ট্রেন দুটি চালুর দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইঞ্জিনসংকটের কারণে ট্রেন দুটি চালু করা যাচ্ছে না।
নেত্রকোনা রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলা থেকে ঢাকা রুটে ২১০ কিলোমিটার রেলপথ আছে। এর মধ্যে মোহনগঞ্জ-ময়মনসিংহ রেলপথের দূরত্ব ৬৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার। ওই পথে হাওর এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামের দুটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া একটি লোকাল ও একটি কমিউটার ট্রেনও চালু আছে। লোকাল ডাউন ট্রেনটি প্রতিদিন ময়মনসিংহ স্টেশন থেকে যথাক্রমে ভোর ৫টা ৪০ এবং বেলা ২টা ১০ মিনিটে মোহনগঞ্জ স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। অন্যদিকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা ও বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মোহনগঞ্জ স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় এটি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, লোকাল ট্রেনটিতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতায়াত করেন। গত ৩১ মে থেকে ট্রেনটির চলাচল বন্ধ আছে।
ময়মনসিংহ শহর থেকে লোকাল ট্রেনে করে নিয়মিত মোহনগঞ্জে যান সরকারি চাকরিজীবী সাদিয়া রহমান। তিনি বলেন, এই ট্রেনে কম খরচ ও সময়ের মধ্যে সহজে কর্মস্থলে যাওয়া-আসা করা যায়। কিন্তু পাঁচ মাস ধরে ট্রেনটি বন্ধ থাকায় ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্কুলশিক্ষক তরিকুল হাসান বলেন, অনেকেই ময়মনসিংহ স্টেশন থেকে পর্যায়ক্রমে শম্ভুগঞ্জ, বিশকা, গৌরীপুর, শ্যামগঞ্জ, হিরণপুর, চল্লিশা, নেত্রকোনার বড় স্টেশন, কোর্ট স্টেশন, ঠাকুরাকোনা, বারহাট্টা, অতিথপুর ও মোহনগঞ্জে সুবিধামতো যাওয়া-আসা করতে পারেন। ট্রেনটি বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।
নেত্রকোনার স্টেশনমাস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, লোকাল ট্রেনটির ইঞ্জিনে সমস্যা হওয়ায় চলাচল বন্ধ আছে। ইঞ্জিনটি মেরামতের জন্য চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে। ইঞ্জিন মেরামত শেষ হলে আবার চালু হবে। তবে কবে নাগাদ ইঞ্জিন মেরামত শেষ হবে, তা তিনি জানেন না।
অন্যদিকে ময়মনসিংহ-জারিয়া রেলপথে চলাচল করা লোকাল ট্রেনটিও প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ আছে। রেলপথটিতে চলাচলকারী যাত্রীরা একইভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন। বন্ধ ট্রেনটি চালুর দাবিতে সপ্তাহখানেক আগে জারিয়া রেলস্টেশন, পূর্বধলা রেলস্টেশন, ময়মনসিংহ স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেন যাত্রীরা।
পূর্বধলা রেলস্টেশন সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ-জারিয়া ৫০ কিলোমিটার রেলপথে একটি কমিউটার ও একটি লোকাল ট্রেন আছে। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে লোকাল ট্রেনটি বন্ধ আছে।
পূর্বধলার বাঘবেড় গ্রামের চাকরিজীবী সুমন্ত শর্মা সরকার জানান, ময়মনসিংহ-জারিয়া রুটে অন্য কোনো আন্তনগর ট্রেন চলাচল না করায় শম্ভুগঞ্জ, গৌরীপুর, শ্যামগঞ্জ, পূর্বধলাসহ আটটি স্টেশনে চলাচলকারী যাত্রীদের অন্যতম ভরসা ওই লোকাল ট্রেন। প্রতিদিনই ট্রেনটিতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। এ ট্রেনে করে পূর্বধলা, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলাসহ পাশের ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন। ট্রেনটি বন্ধ থাকায় যাত্রীদের খুবই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
দুর্গাপুরের বাসিন্দা ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী আল নোমান খান বলেন, ‘ট্রেনটিতে জারিয়া থেকে আমরা ময়মনসিংহ গিয়ে ক্লাস করে আবার চলে আসতাম। ট্রেন বন্ধ থাকায় এখন সময় ও অর্থ দুটোই বেশি লাগছে। আমরা ট্রেনটি নিয়মিত চালুর দাবি জানাই।’
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘মোহনগঞ্জ ও জারিয়া দুটি লোকাল ট্রেনই ইঞ্জিন সংকটের কারণে বন্ধ আছে। ইঞ্জিন পেলে আবার ট্রেনগুলো চালু করতে পারব।’
 কোনো ভাড়াটিয়া শিল্পপতিদের আমাদের দলে প্রয়োজন নেই : সাখাওয়াত
কোনো ভাড়াটিয়া শিল্পপতিদের আমাদের দলে প্রয়োজন নেই : সাখাওয়াত