ঈদুল ফিতরের ৯ দিনের ছুটি পেয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কর্মস্থল থেকে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরছেন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। ঘরমুখো মানুষের চাপে উত্তরবঙ্গের গেটওয়ে সিরাজগঞ্জে যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়লেও নেই যানজট।

এদিকে, ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও আরামদায়ক করতে মহাসড়কে পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী এবং হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। 

শনিবার (২৯ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কড্ডার মোড়, মুলিবাড়ি চেকপোস্ট, নলকা, হাটিকুমরুল গোল-চত্ত্বরসহ যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়কে যানজটের দেখা মেলেনি। বাড়িতে যাওয়া মানুষদের অনেককে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলে যাত্রা করতে দেখা গেছে। 

আরো পড়ুন:

দৌলত‌দিয়ায় যা‌ত্রী ও যানবাহ‌নের চাপ বাড়‌লেও নেই ভোগা‌ন্তি

৯ দিনের ছুটি, ফাঁকা হচ্ছে নরসিংদী

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়কসহ জেলার চারটি মহাসড়কে ১ হাজার ৭০ জন পুলিশ সদস্য মাঠে কাজ করছে। এর মধ্যে জেলা পুলিশের ৬৪৮ জন, হাইওয়ে পুলিশের ৩২২ জন ও এপিবিএনের ১০০ জন দায়িত্ব পালন করছেন। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ সেনাবাহিনী মহাসড়কের সার্বিক নিরাপত্তায় রয়েছে। সেই সঙ্গে মহাসড়কে ৪৫টি মোবাইল টিম ও ৫৬টি পিকেট টিম কাজ করছে। যান চলাচল মনিটরিং করতে হাটিকুমরুল গোলচত্বর ও ঝাঐল ওভারব্রিজে দুইটি ড্রোন ক্যামেরা প্রস্তুত রয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহন অপসারণে বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়েছে রেকার।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আব্দুর রউফ বলেন, ‍“ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে মহাসড়কে।”

বগুড়া সেনানিবাসের ১১ পদাতিক ডিভিশনের লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুনায়েদ বিন কবির বলেন, “হাটিকুমরুল থেকে যমুনা সেতু ও চান্দাইকোনা পর্যন্ত মহাসড়কে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে সেনাবাহিনী। মহাসড়কে যেন কোনো ধরনের দুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়, সেজন্য বাহিনীর সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।”

বগুড়া রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশের এসপি (অতিরিক্ত ডিআইজি) শহীদুল্লাহ বলেন, “এখন পর্যন্ত মহাসড়কের কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। ঢাকা-উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহন দুই লেন দিয়েই স্বাভাবিকভাবে চলছে। এবারের ঈদযাত্রায় উত্তরের ঘরমুখো মানুষের সমস্যা হচ্ছে না।”

যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ সেতু দিয়ে ৪৮ হাজারেরও বেশি গাড়ি পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকারও বেশি।  

যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, “যমুনা সেতুর উভয়পাশে ৯টি করে মোট ১৮টি বুথে টোল আদায় করা হচ্ছে।”

ঢাকা/অদিত্য/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন ঈদ উৎসব হ ইওয় য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

ফুলে সাজানো রিকশায় করে প্রধান শিক্ষকের বিদায়

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার নাঠুয়াগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ এম আকতার জাহান বিউটি অবসর গ্রহণ করেছেন। তার কর্মজীবনের শেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আবেগঘন বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন তার সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। তারা বিদায়ী প্রধান শিক্ষককে ফুলে সাজানো রিকশায় করে বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেন। 

এম এ এম আকতার জাহান বিউটিকে বিদায় জানাতে বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুদীপ চন্দ্র শর্মা। সঞ্চলনা করেন সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান।

২০১৮ সালে নাঠুয়াগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এম এ এম আকতার জাহান বিউটি। প্রায় ৩৮ বছরের কর্মজীবনের শেষ দিনেও তিনি শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন।

অনুষ্ঠানে সহকর্মী শিক্ষকসহ আশপাশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক হিসেবে আকতার জাহান বিউটি বিদ্যালয়ে পাঠদান, শিক্ষার পরিবেশ ও শৃঙ্খলায় দৃশ্যমান পরিবর্তন এনেছেন।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সালমা আক্তার বলে, “বিউটি ম্যাডাম আমাদের খুব ভালোবাসতেন, শাসন করতেন, ভালোভাবে পড়াতেন।”

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী উৎসব রায় বলে, “ম্যাডামের পড়ানোর ধরন একেবারে আলাদা ছিল। তিনি আমাদের আদর করতেন, আবার প্রয়োজন হলে শাসনও করতেন। আমরা তাকে খুব মিস করব।”

সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “বিউটি ম্যাডামের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের চিত্রই বদলে গিয়েছিল। তিনি ছিলেন সবার প্রিয়। শৃঙ্খলা, পাঠদান ও শিক্ষার্থীদের ফলাফল সবদিকেই উন্নতি হয়েছে। এমন এক জন শিক্ষককে বিদায় জানানো আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।”

সহকারী শিক্ষক দীপক চন্দ্র রায় বলেন, “তিনি শুধু এক জন শিক্ষক নন, ছিলেন অভিভাবকের মতো। বিদ্যালয়ের যেকোনো সমস্যায় তিনি সবার আগে এগিয়ে আসতেন।”

বামুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “আকতার জাহান বিউটি ম্যাডাম দায়িত্বশীল, সৎ ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছিলেন। তার অবদান দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার শিক্ষাক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুদীপ চন্দ্র শর্মা বলেন, “আখতার জাহান বিউটি ছিলেন আদর্শ শিক্ষক। সব সময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সময়ানুবর্তিতা, আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। এমন এক জন শিক্ষককে বিদায় জানানো যেমন কষ্টের, তেমনি গর্বেরও।”

বিদায়ী বক্তব্যে এম এ এম আকতার জাহান বিউটি বলেন, “চাকরিজীবনে সব সময় চেষ্টা করেছি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের। শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা ও সাফল্যই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আজ তাদের চোখের জল আর ভালোবাসা দেখে বুঝতে পারছি—আমার এই দীর্ঘ কর্মজীবন সার্থক হয়েছে। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”

ঢাকা/সিথুন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ