আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ৪ ঘণ্টার সংঘর্ষে শ্রীমঙ্গল আতঙ্কের শহরে পরিণত হয়েছে। চাঁদ রাতের এ ঘটনায় ঈদের জমজমাট বাজার মুহূর্তে সব তছনছ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ৫৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। 

ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর রাত ৩টা পর্যন্ত। এ দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যৌথবাহিনী শহরে টহল দিচ্ছে।

জানা যায়, শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার গদারবাজার এলাকার খাস ভূমিতে জেলা বিএনপি নেতা, সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধু বিনা লাভের দোকানের নামে ও কয়েকজন ফল ব্যবসায়ী দখলদারিত্ব কায়েমের চেষ্টা করছিলেন। অন্যদিকে একই স্থানে ইজিবাইক চালকরা সেখানে তাদের স্ট্যান্ড গড়ে তোলার লক্ষ্যে যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাতেন। চাঁদ রাত সাড়ে ১১টার দিকে একজন চালক বিনা লাভের দোকানের পাশে একটি ইজিবাইক রাখেন। এ সময় দোকানের সেলসম্যান বাধা দেন। তখন দুইজনের মাঝে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের আনহার মেম্বার বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে সাবেক মেয়রসহ ৪০-৫০ জন যুবক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ উপস্থিত হলে উপস্থিত সকলের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অপরদিকে ইজিবাইক শ্রমিকদের পক্ষে পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকা থেকে কয়েকশ লোক যোগ দিলে উভয় পক্ষের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ফলে শ্রীমঙ্গল শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা রাত তিনটা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পরে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ ৫৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ দিকে মৌলভীবাজার জেলার পাইকারি ও সস্তা দরে কেনা-বেচার জন্য শ্রীমঙ্গলের বিপণী বিতান ও মার্কেটের উপচে পড়া ভিড় মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যায়। 

পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর সাবেক মেয়রের বাসা ও কয়েকটি বাসা-বাড়িতে যৌথ অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

ওসি (তদন্ত) মোবারক হোসেন জানান, আহতদের অনেকে শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। আটককৃতদের মাঝে সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধু, তার ছেলে মুরাদ হোসেন সুমন, আলকাছ কাউন্সিলর ও মেয়রের চাচাত ভাই সেলিম মিয়া নাম জানা গেছে। 

শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আমিনুল ইসলাম সরকার ১৪ জনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে সোমবার সাড়ে ১১টার দিকে জানান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখনও কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ দেয়নি। 

তিনি আরও জানান, রোববার দিবাগত রাতের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ৫৬ রাউন্ড ফাঁকা রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আহত পর স থ ত র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ