কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ওরফে কানুর বাড়িতে এবার সন্ত্রাসী হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাঁরা গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাঁকে লাঞ্ছিত করেছেন, তাঁদের নির্দেশেই এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের পরিবার।

পরিবারের ভাষ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামে আবদুল হাইয়ের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় আবদুল হাই, তাঁর স্ত্রী, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিরা বাড়িতে ছিলেন। হামলাকারী ব্যক্তিরা বাড়ির গেট ও দরজা-জানালা ভাঙচুর করেন। তবে ঘরে প্রবেশ করতে পারেননি। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারী ব্যক্তিরা পালিয়ে যান।

আরও পড়ুনচৌদ্দগ্রামে মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনা, এলাকা ছাড়তে হুমকি২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই বলেন, ‘যারা আমার গলায় জুতার মালা পরিয়েছিল, তারাসহ একদল দুর্বৃত্ত বৃহস্পতিবার রাতে আমার বাড়িতে অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা চালায়। হামলাকারীদের হাতে রামদা, চায়নিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ছিল। তাঁরা বাড়ির গেট, ঘরের দরজা-জানালায় কুপিয়েছে। ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারলে আমাকে প্রাণেই মেরে ফেলত।’

আজ শুক্রবার দুপুরে আবদুল হাইয়ের ছেলে এবং উপজেলার বাতিসা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার প্রায় সাড়ে তিন মাস হয়েছে। আমার বাবাকে যাঁরা গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত ও মারধর করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও ঘটনার মূল হোতাসহ আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হননি। আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। উল্টো আসামিরা বিভিন্নভাবে আমাদের হয়রানি করাসহ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। মামলা তুলে না নেওয়ার জেরে গতকাল রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।’

হামলাকারী ব্যক্তিরা ৩০–৩৫ জন ছিলেন উল্লেখ করে গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, তাঁর বাবাকে জুতার মালা পরানোর মামলার প্রধান আসামি আবুল হাশেম মজুমদার, স্থানীয় সালাউদ্দিন, আতিক, রাসেল, পেয়ার আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম, আরিফুর রহমানসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব ও ইন্ধন দিয়েছেন। গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনার পর থেকে তাঁর বাবা ফেনীতে অবস্থান করেন। প্রশাসনের আশ্বাসে তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে আসেন ঈদ করতে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল রাতের অন্ধকারে বাড়িঘরে হামলা–ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

অভিযুক্ত আবুল হাশেম মজুমদারসহ অন্যরা ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। এ জন্য তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুনবীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনা: মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে, পরিবারের ক্ষোভ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ওরফে কানুর (৭৮) গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাঁকে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। আবদুল হাই কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, জুতার মালা পরানোয় ১০০ কোটি টাকার মানহানি এবং মারধরের অভিযোগে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা ২৫ ডিসেম্বর থানায় মামলা করেন। মামলায় ১০ জনকে অভিযুক্ত করে অজ্ঞাতনামা ১০–১২ জনকে আসামি করা হয়।

লাঞ্ছিত করার পরদিন পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছিল। তাঁদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২৪ ডিসেম্বর কুমিল্লার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে শুধু একজনকে ২৫ ডিসেম্বর করা মামলায় আসামি করেছেন ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা। ইসমাইল হোসেন মজুমদার নামের ওই আসামিরও জামিন হয়েছে গত ৩০ ডিসেম্বর। এর পর থেকে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বর্তমানে মামলার আসামিদের কেউ পলাতক আবার কেউ জামিনে রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিলাল উদ্দিন আহমেদ আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে যুবলীগ নেতা বাড়িতে অবস্থান করছেন, এমন খবরে সেখানে হামলা চালিয়েছিল অপর পক্ষ। দুর্বৃত্তরা বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির গেট ও দরজা-জানালায় কিছু ভাঙচুর চালালেও ঘরে প্রবেশ করতে পারেনি। এর আগেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।’

ওসি বলেন, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বীর মুক্তিযোদ্ধার নিরাপত্তার বিষয়টি ভালোভাবে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

আরও পড়ুনবীর মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে চৌদ্দগ্রামে বিএনপির বিক্ষোভ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওই ব র ম ক ত য দ ধ ল ঞ ছ ত কর আবদ ল হ ই ড স ম বর পর ব র ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএতে ফুলটাইম ও পার্টটাইম এমবিএ, সিজিপিএ ২.৫০ লাগবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (আইবিএ) ২০২৫-২৬ সেশনে ফুলটাইম ও পার্টটাইম এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

কোর্সের বৈশিষ্ট্য

১. আবেদনকারীকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

২. ভর্তির আবেদন ফি ২০৮০ টাকা।

আবেদনের যোগ্যতা

১. যেকোনো ডিসিপ্লিনে ব্যাচেলর ডিগ্রি, কমপক্ষে সিজিপিএ ২.৫০ থাকতে হবে (৪-এর মধ্যে) অথবা দ্বিতীয় শ্রেণি থাকতে হবে।

২. এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ–৫–এর মধ্যে কমপক্ষে ৩ অথবা দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে পৃথক পৃথকভাবে।

৩. ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেলের ক্ষেত্রে উভয় পরীক্ষায় পৃথক পৃথকভাবে কমপক্ষে জিপিএ–২ থাকতে হবে। বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইটে দেখুন।

৩. কোনো পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ বা ক্লাস গ্রহণযোগ্য নয়।

আরও পড়ুনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা কোর্স, যোগ্যতা এইচএসসি পাস১ ঘণ্টা আগেদরকারি তথ্য

১. বিদেশি নাগরিকত্ব ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারী আবেদনকারীর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে, যদি তাঁর জিআরই বা জিএমএটি স্কোর ৭৫ শতাংশ বা তার বেশি হয়। তবে তাঁকে বোর্ডে উপস্থিত হয়ে সাক্ষাৎকার দিতে হবে।

২. সব বিদেশি সার্টিফিকেট/ডিগ্রির (‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল ব্যতীত) সমতা আইবিএর সমতা কমিটি দ্বারা নির্ধারিত হবে। এই সমতা ব্যতীত একজন আবেদনকারী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্য হবেন না।

৩. ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত নয়—এমন কোনো প্রোগ্রাম থেকে ডিগ্রিধারী আবেদনকারী আবেদন করতে পারবেন না।

ভর্তি পরীক্ষার বিস্তারিত

১. আবেদনের শেষ তারিখ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫।

২. ভর্তি পরীক্ষার তারিখ: ৫ ডিসেম্বর ২০২৫।

৩. ভর্তি পরীক্ষার সময়: সকাল ১০টা।

৪. ভর্তি পরীক্ষার স্থান: আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

# বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট

সম্পর্কিত নিবন্ধ