ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। তারা গাজায় বর্বর হামলা এবং ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের নিন্দা জানিয়েছেন। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। খবর বিবিসি, আল জাজিরা ও আনাদোলু এজেন্সির।

যুক্তরাষ্ট্র

স্থানীয় সময় শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। ওই সমাবেশে তিনশোর বেশি সংগঠন সমর্থন জানায়। উপস্থিত বিক্ষোভকারীরা ৩ নম্বর স্ট্রিট এনডব্লিউ ও পেনসিলভেনিয়া অ্যাভিনিউ এনডব্লিউয়ের চৌরাস্তায় সমবেত হয়। পরে তারা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সদর দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মিছিল করে। এ সময় ফিলিস্তিনি কর্মী মাহমুদ খলিল ও তুর্কি শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্কসহ আটক ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের মুক্তির আহ্বান জানায়। প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্ট, দ্য পিপলস ফোরাম, ইহুদি ভয়েস ফর পিস এবং অ্যানসার কোয়ালিশনসহ বেশ কয়েকটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এই বিক্ষোভের সহপৃষ্ঠপোষকতা করে। বিক্ষোভকারীরা গাজায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার প্রদর্শন করে। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার বা নির্বাসিত করার নিন্দা জানায়।

মরক্কো
গাজায় ইসরায়েলের চলমান বর্বরতার বিরুদ্ধে মরক্কোয় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল রোববার হাজারো বিক্ষোভকারী মরক্কোর রাস্তায় নেমে আসেন। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিগত কয়েক মাসের মধ্যে মরক্কোয় সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলোর একটি হয় গতকাল। এদিন দেশটির রাজধানী রাবাতের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ঢল নামে।

বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পতাকা পদদলিত করেন। তাঁরা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হামাস নেতাদের ব্যানার বহন করেন। এ ছাড়া তাঁরা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ছবির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি যুক্ত করে বানানো ক্ষোভের পোস্টারও বহন করেন।

বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তা ছাড়া গাজা পুনর্গঠনের জন্য উপত্যকাটি থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আরব দেশগুলো এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। অধিকার গোষ্ঠীগুলো একে জাতিগত নির্মূলের পরিকল্পনা বলে অভিহিত করেছে। বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের ওপর দেশটির কর্তৃপক্ষের দমন–পীড়নেরও নিন্দা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে ফিলিস্তিনের ‘ওয়ার্ল্ড স্টপ ফর গাজা’ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় বিক্ষোভ করছেন ছাত্র-জনতা।

আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মেডিকেলের শিক্ষার্থী ও জনতা ঢাবির টিএসসিতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

বিক্ষোভে ছাত্র-জনতা ইসরায়েলি পণ্য বয়কট ও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে সবাইকে এক হয়ে লড়াই করার জন্য আহ্বান জানান। এ সময় তারা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘দুনিয়ার মুসলিম, এক হও লড়াই করো’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর.

ইসরায়েল নো মোর’সহ নানা স্লোগান দেন। এছাড়া সারাদেশে একই দাবিতে কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ মানুষ।

ফিলিস্তিন
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আজ সোমবার ফিলিস্তিনজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনের জাতীয় ও ইসলামি শক্তিগুলো রোববার এক বিবৃতিতে এ ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধর্মঘট যেন একটি বৈশ্বিক প্রতিবাদে পরিণত হয়, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ অপরাধ, বেসামরিক মানুষ হত্যাসহ চলমান দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া যায়। বিশেষ করে নারী ও শিশুসহ নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যাকাণ্ড এবং ঘরবাড়ি ধ্বংস করে বাস্তুচ্যুত করার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সামনে আনতে হবে।

ইসরায়েলের আগ্রাসন থামাতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা জরুরি।

এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাজুড়ে একই রকম বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি ও ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত মাসে ইসরায়েলের তীব্র বিমান ও স্থল হামলার মধ্য দিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। এর পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মরক্কোর বিক্ষোভকারীরা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এ যুদ্ধে ৫০ হাজার ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ১ লাখ ১৫ হাজার জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল মরক ক গ জ য় ইসর য় ল ইসর য় ল র ত হয় ছ ন গণহত য চলম ন মরক ক

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে

সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।

শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।

পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।

শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহরুখ খান: গণহত্যার সময় বিলিয়নিয়ার হওয়ার অর্থ কী
  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল