শরণার্থী সমস্যা, বিশ্বজুড়ে একটি জটিল সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, সমগ্র বিশ্বে প্রায় ৪৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন শরণার্থী নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রহীন ও বিতাড়িত একটি জীবন যাপন করে আসছে। এখানে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো, বিশ্বজুড়ে নানাভাবে বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের আশ্রয় হয়েছে তার দেশের আশপাশে থাকা নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে। এই
প্রবণতার কারণে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া নিম্ন আয়ের দেশগুলো নিজেদের উন্নয়ন সমস্যা মোকাবিলার পাশাপাশি শরণার্থীদের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় নানাভাবে হিমশিম খাচ্ছে। 

শরণার্থীদের পরিচিতির রাজনীতির কারণেও শরণার্থীদের আরও বেশি অবহেলিত ও বৈষম্যপূর্ণ জীবন যাপন করতে হয়। এর সঙ্গে আরও যুক্ত হয় আন্তর্জাতিক মহলের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ। যেমন ইউরোপের ইউক্রেনের বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের সারা বিশ্ব যে দৃষ্টিতে এবং গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে; বাংলাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বসবাসরত শরণার্থীদের সেভাবে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। যে কারণে এসব দেশে শরণার্থীদের নানা রকম সমস্যার মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। সেই জায়গায় প্রত্যাবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আরও অনেক দূরের বিষয় হিসেবে দেখা যায়। 

এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের ষষ্ঠ বিমসটেকের বৈঠকের সময় মিয়ানমার থেকে একটি ইতিবাচক সাড়া আমরা দেখতে পাই, যা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য একটি আশার সঞ্চার করেছে। এই আলোচনায় মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউ প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন, যাদের মিয়ানমার নিজ দেশের বাসিন্দা বলে, তারা যাচাই করে নিশ্চিত হতে পেরেছে। তিনি আরও বলেন যে দ্রুততার সঙ্গে বাকি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভেরিফিকেশন করা হবে। 

মিয়ানমার সরকারের এই ইতিবাচক বক্তব্য একটি অন্যতম মাইলফলক বলে আমরা মনে করতে পারি। যদিও ২০১৮ সালেই মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিষয়ক একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়, যার বাস্তবায়ন আমরা কখনোই দেখতে পাইনি। কিন্তু এবারের পটভূমি ভিন্ন হবে, সেটাই আমরা আশা করি। 

বিগত সরকারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যা মোকাবিলায়, বিশেষ করে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন ব্যর্থতার মধ্যে মিয়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের প্রতিনিধির যৌথ বিবৃতি আমাদের আশাবাদী করে তোলে। এর পেছনে হয়তো গত মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশে ভ্রমণ এবং আমাদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ইফতার ও সভার একটি ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে। 

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এসব জটিল বিষয় মাথায় রেখেই আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা করতে হবে। কেননা, মিয়ানমার রাজি হলেও এখানে আরাকান আর্মিসহ আরও যতগুলো ফ্যাক্টরের কথা আলোচনা করা হলো, সেগুলো সঠিকভাবে কাজ না করলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন অধরাই থেকে যাবে। 

আমাদের মনে আছে, সেই সভায় আমাদের প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘মেহমান’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, যেন রোহিঙ্গারা আগামী ঈদ তাদের নিজ দেশে করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এমন সারা বেশ ইতিবাচক। হতে পারে জাতিসংঘ মহাসচিবের এ ভ্রমণ একটি বড় ভূমিকা রেখেছে এই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে। 

মিয়ানমারের এই বক্তব্য একটি বড় কারণে বেশ ইতিবাচক এবং গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো যেহেতু মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাদের দেশের বাসিন্দা হিসেবে মেনে নিচ্ছে, এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে একটি আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা পাবে। মিয়ানমার সরকারের এই বক্তব্য ইতিবাচক হলেও এর বাস্তবায়ন অনেকগুলো ভূরাজনৈতিক জটিল বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। 

এখন প্রশ্ন হলো, এই ইতিবাচক প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে আমরা কতটা নিশ্চিত হতে পারব যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অন্তত এই ১ লাখ ৮০ হাজার তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে পারবে। সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকারকে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কিছু বিষয়য়ের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।  

প্রথমত, আরাকানে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাবিষয়ক সিদ্ধান্ত কতটা প্রয়োগযোগ্য বা বাস্তবায়নযোগ্য হবে, সেটা একটি বড় প্রশ্ন। কেননা, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং রাখাইনে আরাকান আর্মির একচ্ছত্র আধিপত্য, এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে দেবে কি না, সে বিষয়ের সুরাহা প্রয়োজন। যদিও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে আরাকান আর্মির সঙ্গে তারা রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে। যেখানে আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। 

তবে এটি ভুলে গেলে চলবে না যে মিয়ানমার জান্তার সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধাবস্থার কারণে রাখাইন মূলত এখন আরাকান আর্মির দখলে। সেই জায়গা থেকে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের জান্তার কথা কেন বা কতটা শুনবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। একই সঙ্গে আমাদের এ-ও ভেবে দেখা দরকার যে এটি মিয়ানমারের কোনো রাজনৈতিক চাল কি না? তবে আমি নিশ্চিত, আমাদের নীতিনির্ধারকদের মাথায়ও এই বিষয় রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমারের জান্তা শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় সাধন একটি অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। 

দ্বিতীয়ত, আমরা বেশ অনেকবারই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের এ ধরনের ইতিবাচক আশ্বাস পেয়েছি, কিন্তু তার প্রয়োগ আমরা দেখতে পারিনি। যে কারণে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেওয়ার পর একজন রোহিঙ্গাও এখন পর্যন্ত নিজ দেশে ফেরত যেতে পারেনি। মিয়ানমার সরকারের এ ধরনের আশ্বাসকে আমরা কতটা ইতিবাচকভাবে দেখব, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। কেননা, আমাদের অবস্থা এখন ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়, ঠিক তেমন। তারপরও এই প্রচেষ্টা এবং আশ্বাস রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার ক্ষেত্রে আশাবাদী হতে শেখায়।

তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ফেরত গেলে তারা সেখানে কতটা নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারবে, সেটি বেশ ভালোভাবে ভেবে দেখতে হবে। মিয়ানমারের বিদ্যমান যুদ্ধ পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলতে দেবে কি না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। কেননা, মিয়ানমারে বসবাসরত রোহিঙ্গারাও নানাবিধ নিরাপত্তাঝুঁকিতে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে। মিয়ানমারে একটি নিরাপদ ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিদ্যমান আলোচনা জারি রাখাও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটি ভলান্টারি বা স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের একটি পূর্বশর্ত। 

আমরা জানি, বিগত দশকগুলোতে ঘটে যাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন স্বেচ্ছায় এবং জাতিসংঘের সব নিয়ম মেনে হয়েছে কি না, এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্বের বিষয়টাকে যেন গুরুত্ব দেওয়া হয়, সে বিষয়গুলোর দিকেও পরবর্তী ধাপে নজর দিতে হবে। তাই নিরাপত্তাঝুঁকি ও নাগরিকত্ব বিষয়গুলোর সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকলে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া ফলপ্রসূ না হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এসব জটিল বিষয় মাথায় রেখেই আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা করতে হবে। কেননা, মিয়ানমার রাজি হলেও এখানে আরাকান আর্মিসহ আরও যতগুলো ফ্যাক্টরের কথা আলোচনা করা হলো, সেগুলো সঠিকভাবে কাজ না করলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন অধরাই থেকে যাবে। 

বুলবুল সিদ্দিকী নৃবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র শরণ র থ দ র স ল দ শ সরক র জনগ ষ ঠ র আম দ র প পর স থ ত পরবর ত র জন ত য একট সমস য ন করত

এছাড়াও পড়ুন:

সকালের সবচেয়ে বরকতময় সময় ব্যবহারের ৭ কৌশল

সকাল মানুষের জীবনের একটি মূল্যবান সময়, যা দিনের বাকি অংশের জন্য সুর নির্ধারণ করে। সকাল আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার, শরীর ও মনকে প্রস্তুত করার এবং দিনের লক্ষ্য অর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ।

সামাজিক মাধ্যম, কাজের চাপ এবং পারিবারিক দায়িত্ব আমাদের অনেক সময় কেড়ে নেয়, তাই সকালকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমরা জীবনকে আরও উৎপাদনশীল করতে পারি।

১. আল্লাহর সঙ্গে দিনের শুরু

ফজরের নামাজের ১৫-২০ মিনিট আগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং দোয়া করা জীবনকে আমূল বদলে দিতে পারে। এই সময়টি শান্ত ও পবিত্র, যখন আল্লাহর সঙ্গে কোনো বাধা থাকে না।

কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি রাতে, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আমাদের রব নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?”’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫)।

তাহাজ্জুদের সময় আপনার হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করুন। এতে মানসিক শান্তি বাড়বে এবং দিনের জন্য ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। যদি আপনি নতুন হন, সপ্তাহে এক দিন থেকে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে এটি অভ্যাসে পরিণত করুন।

ফজরের আগে অবশিষ্ট সময়ে কোরআন তিলাওয়াত করুন, কারণ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ভোরে কোরআন পড়া (ফেরেশতাদের) দ্বারা প্রত্যক্ষ করা হয়।’ (সুরা ইসরা. আয়াত: ৭৮)।

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫২. ফজরের পর ঘুম থেকে দূরে থাকুন

ফজরের নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়া অনেকের অভ্যাস, কিন্তু এটি সকালের বরকতময় সময় নষ্ট করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১)।

এই সময়ে বড় বড় কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়, কারণ এতে আল্লাহর বিশেষ বরকত রয়েছে।

আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন। মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১

ফজরের পর ঘুমের প্রলোভন এড়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এই সময়ে পড়াশোনা, কোরআন মুখস্থ করা বা কোনো ব্যক্তিগত প্রকল্পে কাজ করা যায়। এটি দিনের বাকি সময়ে অবসরের জন্য সময় বাঁচায় এবং আগামী দিনে আরও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করে।

বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।

৩. করণীয় তালিকা তৈরি করুন

একটি করণীয় তালিকা তৈরি করা দিনের পরিকল্পনাকে সুসংগঠিত করে। আমরা প্রায়ই মনে মনে কাজের পরিকল্পনা করি, কিন্তু মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা সীমিত। একটি ডায়েরি বা ফোনের নোট অ্যাপে কাজের তালিকা লিখে রাখলে সময় ও শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। সম্পন্ন হওয়া কাজগুলো তালিকা থেকে কেটে দেওয়ার একটা আলাদা আনন্দ আছে।

এই তালিকায় দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যও অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন কোরআনের একটি নির্দিষ্ট অংশ মুখস্থ করা বা একটি নতুন দক্ষতা শেখার পরিকল্পনা। এটি আপনাকে দিনের শুরুতে ফোকাসড রাখবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।

আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।৪. সকালে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন

সকালের মূল্যবান সময় সামাজিক মাধ্যমে বা ফোনে অযথা স্ক্রল করে নষ্ট করা উচিত নয়। অনেকে সকালে ফোন হাতে নিয়ে ‘শুধু একটু দেখে নিই’ ভেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারিয়ে ফেলেন। এটি মানসিক চাপ বাড়ায় এবং সকালের শান্তি নষ্ট করে।

নিয়ম করুন, সকালের নাশতা বা কিছু কাজ শুরু না করা পর্যন্ত ফোন বা সামাজিক মাধ্যমে যাবেন না। সকালে খবর পড়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, এটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে। যখন ফোন ব্যবহার করবেন, তখন ইতিবাচক ও প্রেরণাদায়ক কনটেন্ট দেখুন, যা আপনার দিনকে উজ্জ্বল করবে।

৫. শরীরচর্চা করুন

শরীরচর্চার উপকারিতা আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন অনেকে বাড়ি থেকে কাজ করছেন, শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বাড়িতে কাজ করার ফলে ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা, পেশির সমস্যা বাড়ছে।

সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।

ইউটিউবে হাজারো ধরনের ব্যায়ামের ভিডিও পাওয়া যায়, যা বাড়িতে সামান্য জায়গায় করা যায়। যদি বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে, তবে সকালে ৩০ মিনিট হাঁটুন। লক্ষ্য হলো শরীরকে সচল রাখা এবং শক্তি বৃদ্ধি করা।

আরও পড়ুনসুস্থ জীবন যাপনে মহানবী (সা.)-এর ৯ অভ্যাস২৪ জুলাই ২০২৫সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।৬. পুষ্টিকর নাশতা গ্রহণ

ব্যস্ততার কারণে অনেকে সকালের নাশতা বাদ দেন, কিন্তু গবেষণা বলছে, পুষ্টিকর নাশতা দিনভর মনোযোগ বাড়ায়, অপ্রয়োজনীয় চিনির লোভ কমায় এবং শক্তি জোগায়। নাশতায় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ওটস বা মাল্টিগ্রেইন রুটি, স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অ্যাভোকাডো বা বাদাম, গ্রিক ইয়োগার্ট এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করুন।

সময় কম থাকলে একটি স্মুদি তৈরি করুন—পালংশাক, আপেল এবং হিমায়িত কলা ব্লেন্ড করে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর নাশতা তৈরি করা যায়। এটি দিনের শুরুতে সবুজ শাকসবজি গ্রহণের একটি সহজ উপায়।

৭. নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন

বাড়ি থেকে কাজ করার সময় অনেকে ক্যাজুয়াল পোশাকে থাকেন। বরং সকালে সুন্দর পোশাক পরুন, যা আপনার মেজাজ উজ্জ্বল করবে। একটু পছন্দের সুগন্ধি ব্যবহার করলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১

নবীজি (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং এটি আপনার মানসিক প্রস্তুতি ও দিনের জন্য উৎসাহ বাড়ায়।

সকাল আমাদের দিনের ভিত্তি। ইসলাম আমাদের শেখায় যে সকাল আল্লাহর বরকত নিয়ে আসে। তাহাজ্জুদ, ফজরের পর জাগ্রত থাকা, করণীয় তালিকা তৈরি, স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, শরীরচর্চা, পুষ্টিকর নাশতা এবং নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন—এই সাতটি অভ্যাস আমাদের সকালকে উৎপাদনশীল করবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সূত্র: দ্য মুসলিম ভাইব ডট কম

আরও পড়ুনরহমতের দুয়ারে হাজিরা১৫ জুন ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ