মার্কিন অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে চীনের প্রতিশোধমূলক শুল্ক
Published: 10th, April 2025 GMT
চীনের প্রতিশোধমূলক শুল্ক কার্যকর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতির দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ করেছে, যা আগে ছিল ৩৪ শতাংশ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে চীনের ওপর কয়েক ধাপে শুল্ক আরোপ করার জবাবেই এই শুল্ক কার্যকর করেছে দেশটি। তবে এ শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনের ওপরই বেশি প্রভাব ফেলবে।
গত বছরের হিসাব অনুযায়ী ইঙ্গিত দেয় উচ্চ শুল্ক চীনা ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও বড় ক্ষতির মুখে ফেলবে। কেননা গত বছর চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি ডলার মূল্যের পণ্য বিক্রি করেছে। একই সময় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো চীনের কাছে যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি করেছে, এটি (চীনের বিক্রি) তার প্রায় তিন গুণ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, বাস্তবতা এর চেয়ে অনেক বেশি জটিল।
তারা বলছেন, এই ধরনের উচ্চ হারের শুল্ক আরোপ করা হলে চীনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে লাভ করা প্রায় অসম্ভব।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকস কনসালটেন্সির লুইস লু বলেন, ইতোমধ্যেই এই অতিরিক্ত শুল্কের প্রভাবে পড়েছে।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য নীতিবিষয়ক অধ্যাপক এসওয়ার প্রসাদ বলেছেন, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বাধ্য হয়ে স্থানীয় ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করছে। কারণ অন্যান্য দেশগুলো ইতোমধ্যে চীনা পণ্যের ঢল থামানোর জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে। চীনের অর্থনীতিতে রপ্তানি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত, তাই নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব হবে অভ্যন্তরীণ ভোক্তা চাহিদা বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। যেহেতু চীনের অর্থনীতি রপ্তানিনির্ভর, তাই এই অতিরিক্ত শুল্কের চাপ সামলানো দেশটির জন্য কঠিন হতে পারে। কারণ চীনের অর্থনীতি বর্তমানে মূল্যহ্রাস বা ডিফ্লেশনের মধ্যে রয়েছে।
এই শুল্কহার চলমান থাকলে চীনের মুদ্রা ইউয়ানের আরও অবমূল্যায়ন হতে পারে। তখন এই দুর্বল ইউয়ান অন্যান্য দেশের তুলনায় চীনা পণ্যকে সস্তা করে তুলবে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের বিষয়টি দেখে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন যে তারা ইতোমধ্যে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের বেশিরভাগ অংশ নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম।
এছাড়া বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কীভাবে আলোচনা শুরু হতে পারে তার কোনো ইঙ্গিতও এখনো পাওয়া যাচ্ছে না।
চীন এরইমধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছে, যেখানে ট্রাম্পকে ‘গুন্ডামি’ কৌশলে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বুধবার দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘(ওয়াশিংটনের) ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি একটি ভুলের ওপরে আরেকটি ভুল, যা মার্কিন পদক্ষেপের একতরফা ধমকানোর প্রকৃতিকে তুলে ধরেছে।’
এর আগে গত চৌঠা এপ্রিল চীন ডব্লিউটিএ’র কাছে একটি আবেদন করেছিল যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কের বিষয়টি নিয়ে আলাপের কথা বলা হয়েছিল।
তাদের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘বেইজিং ডব্লিউটিওর নিয়ম অনুযায়ী তার বৈধ অধিকার এবং স্বার্থকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ব্যবস্থাকে দৃঢ়ভাবে বজায় রাখবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প ব যবস র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলার পর ইউক্রেন–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি সই
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলার পর দেশ দুটি একটি চুক্তিতে সই করেছে। এর ফলে ওয়াশিংটন কিয়েভের মূল্যবান দুর্লভ খনিজসম্পদে প্রবেশাধিকার পাবে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে তার পুনর্গঠনে তহবিল জোগান দেবে।
গতকাল বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে এ চুক্তি সই হয়। এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে জোর দরকষাকষি করে দুই দেশ। চুক্তি সই হওয়ার ব্যাপারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কিছু অনিশ্চয়তা থাকলেও অবশেষে এটি সম্পন্ন হয়।
যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ চুক্তি একটি অগ্রগতি নির্দেশ করছে। গত মার্চে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বৈঠকের পর এ সম্পর্ক তলানিতে নেমেছিল।
চুক্তি সইয়ের ঘোষণা দিয়ে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল’ প্রতিষ্ঠা রাশিয়ার প্রতি একটি বার্তা যে, ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদে এক স্বাধীন, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধ ইউক্রেন গড়ার শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ চুক্তি একটি অগ্রগতি নির্দেশ করছে। গত মার্চে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বৈঠকের পর এ সম্পর্ক তলানিতে নেমেছিল।স্কট বেসেন্ট আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার এ ভাবনা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের; যা একটি টেকসই শান্তি ও সমৃদ্ধ ইউক্রেনের প্রতি উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতিই প্রতিফলিত করে।’
‘স্পষ্ট করে বলতে গেলে, রাশিয়ার যুদ্ধচেষ্টায় অর্থ বা অন্যান্য সহায়তাদানকারী কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তিকে ইউক্রেনের পুনর্গঠন থেকে উপকৃত হতে দেওয়া হবে না’, বলেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী।
ট্রাম্প প্রশাসন এ চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করেনি।
ইউক্রেনের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইউক্রেন পুনর্গঠন তহবিলে’ যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বা সামরিক সহায়তার মাধ্যমে অবদান রাখবে এবং কিয়েভ তার প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে পাওয়া রাজস্বের ৫০ শতাংশ তহবিলে দেবে।
স্পষ্ট করে বলতে গেলে, রাশিয়ার যুদ্ধচেষ্টায় অর্থ বা অন্যান্য সহায়তাদানকারী কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তিকে ইউক্রেনের পুনর্গঠন থেকে উপকৃত হতে দেওয়া হবে না।স্কট বেসেন্ট, মার্কিন অর্থমন্ত্রীমন্ত্রণালয় আরও জানায়, তহবিলের সম্পূর্ণ অর্থ প্রথম ১০ বছর শুধু ইউক্রেনে বিনিয়োগ করা হবে, এরপর ‘লাভ অংশীদারদের মধ্যে বণ্টন করা হতে পারে’। তহবিলে দুপক্ষের সমান সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে। এ চুক্তি শুধু ভবিষ্যতের মার্কিন সামরিক সহায়তায় নজর দেব, অতীতের সহায়তা এতে অন্তর্ভুক্ত নয়।
ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সিরিদেনকো বলেন, ‘আমরা শুধু বিনিয়োগই পেতে যাচ্ছি না; বরং এমন একটি কৌশলগত অংশীদারকেও পাচ্ছি, যারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনে সহায়তা করতে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার ফাঁকে এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল ভ্যাটিকান সিটিতে