গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ১০ এপ্রিলকে বাংলাদেশের ‘রিপাবলিক ডে’ ঘোষণার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) দাবিকে সমর্থন করেছেন। এই দাবিকে সমর্থন করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতা ঘোষণার মূল ভিত্তি ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার। কিন্তু এই আদর্শগুলো ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় আমলে নেওয়া হয়নি। ফলে গণমানুষের প্রত্যাশা সব সময় উপেক্ষিত হয়েছে এবং মানুষের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘১০ এপ্রিলকে প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণা, একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার সভা ও সংসদ নির্বাচনের দাবি’ শীর্ষক এক আলোচনায় জোনায়েদ সাকি এ কথা বলেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এ সভার আয়োজন করে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাকে আমলে না নিয়ে গোঁজামিল দেওয়া হয়েছিল। সেটার ওপর ভিত্তি করেই আমরা চলছি। আমরা এসব গোঁজামিল থেকে বের হতে চাই। ২৪-এর রক্তক্ষয়ী ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান সে আকাঙ্ক্ষার কথাই বলে।’

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলে যাচ্ছে উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হল এক দল দখল করে। আরেক দলকে দেখতে পাই হাট–ঘাট–বাজারের দখলে। যে যেখানে পারে সেখানে দখল করছে।’

জনগণকে ক্রমাগত ক্ষমতাহীন করে ফেলা হচ্ছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, পুরো সংস্কারপ্রক্রিয়ার মধ্যে জনগণ ব্যাপারটাই যেন নেই। তবে বর্তমান সংস্কার প্রস্তাবের ধরন আগেকার যেকোনো সংস্কারপ্রক্রিয়ার চেয়ে ভালো।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন দেশের প্রথম রাজনৈতিক দল জাসদের রাজনীতি, সংগ্রাম, ত্যাগ, ভাঙন ও লেজুড়বৃত্তিতে ৫৩ বছর

জাসদ তৈরি হওয়ার পটভূমি

১৯৭২ সালের ২০ মে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের মধ্যে বিবদমান দুই গ্রুপ আলাদা প্যানেল দেয়। নির্বাচন ছিল ৩ জুন। বঙ্গবন্ধুর ভাগনে শেখ ফজলুল হক মনি গ্রুপের পক্ষ থেকে শেখ শহিদুল ইসলামকে ভিপি ও মনিরুল হক চৌধুরীকে জিএস পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, সাবেক ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খানপন্থীরা ভিপি পদে জিনাত আলী ও জিএস পদে মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশকে প্রার্থী দেয়। নির্বাচনে ছাত্রলীগের দুটি প্যানেল হওয়ায়, ভোট ভাগ হয়ে যায়। ফলে, ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান ভিপি ও জিএস পদে বিজয়ী হন। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগে পালটাপালটি বহিষ্কার হয়। সিরাজুল আলম খানের সমর্থকরা নূরে আলম সিদ্দিকীকে বহিষ্কার করে শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেন। অন্যদিকে শেখ মনির সমর্থকেরা শাজাহান সিরাজকে বহিষ্কার করে ইসমত কাদির গামাকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। সবশেষে ছাত্রলীগের বিভক্তি চূড়ান্ত হয় জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে।

১৯৭২ সালের ২১-২৩ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সিরাজুল আলম খানের সমর্থনপুষ্টরা পলটন ময়দানে সম্মেলনের স্থান ঠিক করে। আর শেখ ফজলুল হক মনির সমর্থক মুজিববাদপন্থীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের স্থান ঘোষণা করে। উভয় গ্রুপ প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করেন। উভয় গ্রুপই নিশ্চিত ছিল, বঙ্গবন্ধু তাদের সম্মেলনে যাবেন। ২১ জুলাই বঙ্গবন্ধু পলটন ময়দানে না গিয়ে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুজিববাদ পন্থীদের সম্মেলনে যান। তাঁর সেই সিদ্ধান্তে হতবাক হন ছাত্রলীগের সিরাজ গ্রুপের নেতা–কর্মীরা।

মূলত : সেদিনই ছাত্রলীগ চূড়ান্তভাবে বিভক্ত হয়। পল্টনের সম্মেলনে কবি আল–মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয়দের মধ্যে গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর মুজিববাদকে কটাক্ষ করে একটি গান পরিবেশন করেন। গানের একটি লাইন ছিল, ‘একটি টাকা চালের দাম, মুজিববাদের অপর নাম।’(দাসগুপ্ত, স্বপন, ২০২৫)

কে এই সিরাজুল আলম খান ?

জাসদের সুপ্রিম লিডার ছিলেন সিরাজুল আলম খান। পার্টির মধ্যে সবাই তাকে ‘দাদাভাই’ বলে ডাকতেন। ছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’–এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬২ সালে ‘হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন’ রিপোর্টের বিরুদ্ধে ও পাকিস্তানে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির দাবিতে, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র আন্দোলন চলে।

সেই আন্দোলন সিরাজুল আলম খানের মধ্যে ‘স্বাধীনতার বীজ’ বপন করে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলেন। আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলে (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক) স্বাধীনতা আন্দোলনের ‘অঙ্কুর’ সংগঠন হিসেবে সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমদ ও আবুল কালাম আজাদ মিলে ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ নামে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলেন।  

১৯৬৫ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা সিরাজুল আলম খান ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন।

১৯৭২ সালের ১ নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকায় জাসদ প্রতিষ্ঠার খবর ছাপা হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্বাধীন দেশের প্রথম রাজনৈতিক দল জাসদের রাজনীতি, সংগ্রাম, ত্যাগ, ভাঙন ও লেজুড়বৃত্তিতে ৫৩ বছর