যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের জেরে মার্কিন ডলারের মান সর্বনিম্নে নেমেছে। শুক্রবার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এই মুদ্রার মান গত তিন বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ পতন হয়েছে।

বিশ্বে মার্কিন ডলারের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের সূচক (ডিএক্সওয়াই) ও মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার মার্কিন ডলারের মান তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান সাধারণত ডলারের মানের ওপর নির্ভর করে।

মার্কিন ডলারের সূচকে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ডলারের মূল্য কমে ৯৯ দশমিক ০১-এ দাঁড়িয়েছে। যা এক বছরের মধ্যে ডলারের মানের প্রায় ৮ শতাংশ পতনের রেকর্ড।

ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর ডলারের মানের বেশি পতন ঘটেছে। ওই দিন বিশ্বের কয়েক ডজন দেশের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন আমদানি শুল্ক আরোপ করেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপের পর বৈশ্বিক বাজার ব্যবস্থায় ব্যাপক টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার শেয়ার বাজারে ব্যাপক ধস শুরু হয়। যদিও পরবর্তীতে চীন ছাড়া বাকি সব দেশের ওপর আরোপিত এই শুল্ক আগামী তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।

বিদেশি মুদ্রার লেনদেন হয় আলাদা দুটি দেশের মুদ্রায়। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ান ডলার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডলার ক্রয়। যার ফলে এক দেশের মুদ্রার মান আরেক দেশের মুদ্রার মানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। যা ‘এক্সচেঞ্জ রেট’ নামে পরিচিত।

বিশ্বের বেশিরভাগ মুদ্রার মানই ওঠানামা করে। যার অর্থ চাহিদা এবং সরবরাহ অনুযায়ী দাম পরিবর্তন হয়ে থাকে। কিছ মুদ্রার মান স্থির। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ডলার একটি নির্দিষ্ট দামে নির্ধারিত। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মার্কিন ডলারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ডলারের মান নির্দিষ্ট করা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি বাতিল করা হয়

এখন চাহিদা ও সরবরাহ অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ান ডলারের মূল্য ওঠানামা করে। মুদ্রা শক্তিশালী হয় বিভিন্ন কারণে। যার মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পণ্যের চাহিদা ইত্যাদি।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সুপেয় পানির সংকট, কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প

ঝালকাঠির নলছিটিতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে ভয়াবহ পানি সংকট দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি ওঠে না গভীর নলকূপে। পানির চাহিদা মেটাতে জনস্বাস্থ্যের উদ্যোগে প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। কিন্তু ঠিকাদারের অনিয়ম এবং পৌরসভার গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতায় আজও সুফল বয়ে আনেনি প্রকল্পটি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গত ৩০ বছরের হিসাব অনুযায়ী, নলছিটি পৌর এলাকার ১৭টি গ্রামে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬৭৩টি ও বেসরকারিভাবে ২ হাজার ৫০০ গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু বিরূপ প্রভাবে 
উপজেলায় ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পৌর এলাকার বেশির ভাগ নলকূপ অকেজো। এ অবস্থায় ২০১৬ সালের পর থেকে পৌর এলাকায় গভীর নলকূপ বসানো বন্ধ আছে। সচ্ছল পরিবার নিজ খরচে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে চাহিদা 
পূরণ করলেও পানির জন্য হাহাকার করছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
পৌর এলাকায় বসবাসরত ৭০ হাজারের বেশি মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে শহরের নান্দিকাঠিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। ২০১৭ সালে ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার কাজটি পায় ঢাকার মেঘনা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তৎকালীন সহকারী প্রকৌশলী ও স্থানীয় এমপি আমির হোসেন আমুর সহায়তায় নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে প্রকল্পের কাজ করেছেন। বোরিংয়ের কাজে অনিয়ম ও খরচ বাঁচাতে পাইপ সুগন্ধা নদীর গভীরে স্থাপন না করে নদীর চরে স্থাপন করেছেন। এসব অভিযোগে তৎকালীন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল হক ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরও ধীরগতিতে 
প্রকল্পের কাজ করে গোপনে বিল তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে, ওয়াটার প্লান্ট নির্মাণের আগে ২০১৫ সালে পৌর ভবনের পাশে প্রোডাকশন টিউবওয়েলের মাধ্যমে একটি সাপ্লাই ইউনিট নির্মাণ করা হয়। এ দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে গ্রাহকদের মধ্যে দুবার পানি সরবরাহের কথা। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে একবার। কোনো দিন তাও মেলে না। এ ছাড়া ময়লা কাদাযুক্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ দুটি প্রকল্পে বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় হলেও পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের বিশুদ্ধ পানির সংকট কাটেনি; বরং সময়ের সঙ্গে এর মাত্রা আরও বেড়েছে। গ্রাহকের কাছ থেকে বিল নেওয়া হলেও পৌরসভার মোট জনসংখ্যার ৫ ভাগ মানুষের চাহিদাও পূরণ করতে পারছে না প্রকল্প দুটি। 
সরেজমিন পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড ও ১৭টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলাজুড়ে পানির জন্য হাহাকার। সরকারি-বেসরকারিভাবে বসানো প্রায় তিন হাজার গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যেগুলো সচল আছে, তাও টিপটিপ করে পড়ছে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজেও অনিয়ম হয়েছে। সুগন্ধা নদীর পানি নিয়ে শোধনাগারে পরিষ্কার করে গ্রাহকদের মধ্যে দুবার সরবরাহ করার কথা থাকলেও এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। প্রতিদিন একবার  করে পানি সরবরাহ করা হলেও কোনো কোনো দিন তাও মেলে না। আবার যেটুকু পানি পাওয়া যায় তাও কাদা-ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। গ্রাহক কয়েক দফা পৌর প্রশাসক বরাবর অভিযোগ জানালেও কাজ হয়নি। 
সূর্যপাশা এলাকার শারমিন বেগম, অনুরাগ গ্রামের তামান্না আক্তার ও সিকদারপাড়া এলাকার সুমি বেগম বলেন, ২০ বছর আগের টিউবওয়েল। এক কলসি পানি তুলতে আধাঘণ্টা সময় লাগে। বারবার মেরামত করেও কাজ হচ্ছে না। টিউবওয়েলে পানি তুলতে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে খালবিলের ময়লা পানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। 
নলছিটি পৌরসভার মালিপুর এলাকার 
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য কাজটি সমাপ্ত করে পৌরসভাকে হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু পৌরসভার গাফিলতিতে জনগণ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল হক বলেন, গভীর নলকূপে পানি উঠেছে না– এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই পাচ্ছি। নির্বিঘ্নে পানি পেতে হলে সাবমার্সিবল বসাতে হবে। নতুন করে পাইপলাইন সংযুক্ত করে বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ওভারহেড ট্যাঙ্ক যুক্ত করতে হবে। প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা কাজ শেষ হওয়ার পরপরই পৌরসভাকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা ঠিকমতো দেখভাল না করায় এ হাল হয়েছে। 
গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পৌর প্রশাসক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পৌর এলাকার সুপেয় পানির সংকট নিরসনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাদের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে নগরবাসীর পানি, স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংকট কেটে যাবে।
পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আবুল হোসেন বলেন, কাজ শেষে পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই পাইপে লিকেজ দেখা দেয়। পানিতে কাদা আসা শুরু করে। ট্রিটমেন্ট প্লান্টের নদীর সংযোগস্থল শুকিয়ে যায়। এতে পানি পেতে বিঘ্ন ঘটে।
সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, এ প্রকল্প আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর সময় হয়েছে। তাই অনিয়ম-দুর্নীতির  বিষয়ে কিছু্ই বলতে পারব না। তবে পৌরসভাবে কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়ার পর আমাদের দপ্তরের কোনো তদারকি থাকে না। রক্ষণাবেক্ষণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সব দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। দায় তাদেরই নিতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুপেয় পানির সংকট, কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প
  • পুঁজিবাজার অংশীজনদের সঙ্গে বিএসইসির ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • মধ্যপ্রাচ্যকে ‘অতল গহ্বরে’ পতিত হওয়া রোধে ট্রাম্পের পরবর্তী
  • বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, ২৯০০ পদের আবেদন পাঠাতে হবে ডাকযোগে
  • কী হতে পারে ইরানে ইসরায়েলি হামলার পরিণাম
  • ড. ইউনূস-তারেক বৈঠকে বিচার-সংস্কার সেভাবে প্রাধান্য পায়নি
  • আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার
  • পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে ৭ জনকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ 
  • ইসরায়েলের হামলা: নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করল ইরান