সালমানকে হুমকি, একজনকে খুঁজে পাওয়ার পর যে তথ্য দিল পুলিশ
Published: 15th, April 2025 GMT
সালমান খানকে হুমকি দেওয়া যেন এখন ‘ডাল-ভাত’ হয়ে গেছে। বোমা মেরে সালমানের গাড়ি-বাড়ি উড়িয়ে দেবেন, তার আবাসনে হামলা চালাবেন বলে গত সোমবার হোয়াটস্অ্যাপে এক বার্তা পায় মুম্বাইয়ের ওরলি পরিবহন বিভাগের দপ্তর।
এরপর থেকে খোঁজ শুরু করে পুলিশ। চব্বিশ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই সেই ঘটনায় একজনকে খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। তার নাম ময়াঙ্ক পান্ডে। হোয়াটস্অ্যাপের মাধ্যমে তার ফোন থেকেই সালমানকে হুমকির বার্তা পাঠানো হয়।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে আজ দুপুরে পুলিশ জানিয়েছে, ময়াঙ্ক পান্ডে মানসিকভাবে অসুস্থ। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে একটি আইনি নোটিশ জারি করা হয়েছে। তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। যখনই পুলিশের প্রয়োজন হবে তখনই তাকে হাজির হতে বলা হয়েছে।
বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে সালমানের শত্রুতা নতুন নয়। ‘হাম সাথ-সাথ হ্যায়’ সিনেমার শুটিং চলাকালীন কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার অভিযোগ উঠেছিল অভিনেতার বিরুদ্ধে। তারপর থেকেই বিভিন্ন সময়ে সালমানকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। গত বছর সালমান ঘনিষ্ঠ বাবা সিদ্দিকি খুন হওয়ার পর অভিনেতার নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়।
তবে তার আগেই সালমানের বাড়ির সামনে গুলি চলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিল বিষ্ণোই গ্যাংয়েরই কয়েকজন সদস্য। মাঝে আবার সালমানকে শর্তও দেওয়া হয়েছিল বিষ্ণোই গ্যাংয়ের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছিল, তার কাছে দুটি রাস্তা রয়েছে। একটি হল কোনও এক বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মন্দিরে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া, অথবা বেঁচে থাকার জন্য ৫ কোটি টাকা দেওয়া। এই সময়ে সিকান্দার সিনেমার শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন বলিউডের ভাইজান।
‘সিকান্দার’- সিনেমার প্রচারের সময় প্রাণনাশের হুমকি নিয়ে মুখ খোলেন সালমান। বলেন, ‘ঈশ্বর, আল্লাহ সব উপরে। যতদিন লেখা আছে, ততদিনই আছ। শুধু এটুকুই। কখনও কখনও এত মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হয়, শুধু তাই সমস্যা হয়ে যায়।’
লাগাতার হুমকি পাওয়ার জন্য সালমানের বাড়ির সামনে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার। পাশাপাশি বর্তমানে অভিনেতা ওয়াই প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পাচ্ছেন।
এরই মধ্যে রোববার সালমান খানকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মুম্বাই ছাড়তে দেখা গেছে। তার নিরাপত্তারক্ষী শেরাকে রীতিমতো উদ্বিগ্ন দেখা গেছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।
আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা।
আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।
আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।
অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।
আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।
এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।
এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।
বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।
লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল