ইরানকে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে হবে: মার্কিন
Published: 16th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে তেহরানকে অবশ্যই তাদের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) তিনি এ মন্তব্য করেন। এর মাধ্যমে ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের চাহিদার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর আল জাজিরার।
এর আগের দিন জ্বালানি উৎপাদনের জন্য সীমিত পরিসরে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেবে বললেও উইটকফের বক্তব্য সে অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আরো পড়ুন:
হার্ভার্ডের ২.
ট্রাম্পের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসছেন বুধবার
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে উইটকফ বলেন, “যেকোনো চূড়ান্ত সমঝোতার মাধ্যমে এমন একটি কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে- এর অর্থ হচ্ছে, ইরানকে অবশ্যই তার পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ ও অস্ত্রায়ন কর্মসূচি বন্ধ করে তা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করতে হবে।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক এই দূত আরো বলেন, “বিশ্বের স্বার্থেই আমাদের একটি কঠোর, তবে ন্যায্য ও স্থায়ী চুক্তি তৈরি করা জরুরি। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাকে ঠিক সেই কাজটিই করতে বলেছেন।”
উইটকফের আনুষ্ঠানিক পদবি ‘মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ দূত’ হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে এই অঞ্চলের বাইরেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে আলোচনার নেতৃত্ব দেওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ এই দূত গত শনিবার ওমানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত ছিলেন এবং ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক দফা আলোচনা করেন। পরবর্তী দফার আলোচনার দিন নির্ধারিত হয়েছে ১৯ এপ্রিল।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র চায়, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ‘বাতিল’ করুক। এর পাশাপাশি হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওমানের সুলতান হাইথাম বিন তারিক আল সাঈদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আলোচনার মাধ্যমে শেষ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
এর আগে সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেন, ইরান ৯০ শতাংশে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করলে, তা পারমাণবিক অস্ত্রের তৈরির জন্য ব্যবহার করতে পারে। তাদের ৩.৬৭ শতাংশের বেশি সমৃদ্ধ করার প্রয়োজন নেই।”
তবে, উইটকফ মঙ্গলবারের বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সমস্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ দেখতে চায়।
তেহরান এবং ওয়াশিংটন কয়েক দশক ধরে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা এবং উত্তেজনার মধ্য দিয়ে গেছে। মার্কিন প্রশাসন বারবারই বলে আসছে, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখা তাদের শীর্ষ বিদেশ নীতির অগ্রাধিকার।
যদিও ইরানি কর্মকর্তারা কয়েক দশক ধরে বলে আসছেন যে, দেশটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চাইছে না। তবে তাদের দেশের পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার এবং তৈরি করার অধিকার রয়েছে।
গত মাস থেকে এ নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইউর ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের কত পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে, কোথায় সেগুলোর অবস্থান
ইরানের রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন শহরে আজ শুক্রবার ভোররাতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পারমাণবিক কর্মসূচির মূল কেন্দ্র লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ হামলার আগে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন সময় ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি দ্রুত সম্প্রসারণ করছে—ক্রমবর্ধমান এই আশঙ্কার কারণেই মূলত এসব বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
২০১৫ সালে ছয় প্রভাবশালী দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে ইরানকে পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত রাখার শর্ত দেওয়া হয়। বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর থেকে ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করেছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইরানে মোট সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত ছিল প্রায় ৯ হাজার ২৪৭ দশমিক ৬ কেজি বা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৪৫ গুণ বেশি।
মোট মজুতকৃত ইউরেনিয়ামের মধ্যে ৪০৮ দশমিক ৬ কেজি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করেছে ইরান, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে প্রযোজ্য সমৃদ্ধকরণের চেয়ে সামান্য কম। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে হয়।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্রে একটি হামলা হয়। এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান।ভিয়েনাভিত্তিক সংস্থা আইএইএ-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাত্ত্বিকভাবে ইরানের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণ অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম রয়েছে, আরও কিছু পরিশোধন করলে তা দিয়ে দেশটি প্রায় ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।
তবে ইরান বরাবরই এ কথা অস্বীকার করে আসছে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো অভিপ্রায় নেই বলে জানিয়েছে দেশটি।
নিচে ইরানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনার তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক দল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে:
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র০১. নাতাঞ্জ
তেহরান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত নাতাঞ্জ ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এটি গভীরভাবে সুরক্ষিত (বাংকারযুক্ত) একটি স্থাপনা। কেন্দ্রটির অস্তিত্ব প্রথম সামনে আসে ২০০২ সালে।
নাতাঞ্জের দুটি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে প্রায় ৭০টি সেন্ট্রিফিউজের সারি আছে। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রের কার্যক্রম ভূগর্ভে পরিচালিত হয়। সেন্ট্রিফিউজ হলো এমন যন্ত্র, যা ব্যবহার করে ধাপে ধাপে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হয়।
২০২১ সালের এপ্রিলে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্রে একটি হামলা হয়। এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান।
আজ শুক্রবার ভোররাতে এই কেন্দ্রে হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। কেন্দ্রটির পাশাপাশি সেখানে অবস্থানরত পরমাণুবিজ্ঞানীদেরও নিশানা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
আইএইএ–এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি নিশ্চিত করেছেন, যেসব স্থান লক্ষ্য করে হামলা করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি নাতাঞ্জ।
মধ্য ইরানের পবিত্র শহর কোমের কাছে একটি পাহাড়ের নিচে গোপনে নির্মিত পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্র ফোর্ডো ২০০৯ সালে প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এটি জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে তৈরি করা হয়।ফোর্ডো
মধ্য ইরানের পবিত্র শহর কোমের কাছে একটি পাহাড়ের নিচে গোপনে নির্মিত পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্র ফোর্ডো ২০০৯ সালে প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এটি জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে তৈরি করা হয়।
প্রাথমিকভাবে এটিকে ‘জরুরি’ স্থাপনা হিসেবে বর্ণনা করা হলেও পরে ইরান জানায়, এটি একটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। সম্ভাব্য বিমান হামলা থেকে রক্ষার জন্য মাটির নিচে এটি নির্মাণ করা হয়। এই কেন্দ্রে প্রায় তিন হাজার সেন্ট্রিফিউজ বসানো সম্ভব।
২০২৩ সালে এই কেন্দ্রে ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কণা পাওয়া যায়। ইরানের দাবি, পরিশোধন প্রক্রিয়ায় অনিচ্ছাকৃত তারতম্যের কারণে এমনটি হয়েছে।
আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু কী, কারা জড়িত, নিহত কারা ৮ ঘণ্টা আগেইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র