যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে তেহরানকে অবশ্যই তাদের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করে তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার তিনি এ মন্তব্য করেন। এর মাধ্যমে ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের চাহিদার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এর আগের দিন জ্বালানি উৎপাদনের জন্য সীমিত পরিসরে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেবে বললেও উইটকফের গতকালের বক্তব্য সে অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

গতকাল এক বিবৃতিতে উইটকফ  বলেন, ‘যেকোনো চূড়ান্ত সমঝোতার মাধ্যমে এমন একটি কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে—এর অর্থ হচ্ছে, ইরানকে অবশ্যই তার পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ ও অস্ত্রায়ন কর্মসূচি বন্ধ করে তা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করতে হবে।’ 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক এই দূত আরও বলেন, ‘বিশ্বের স্বার্থেই আমাদের একটি কঠোর, তবে ন্যায্য ও স্থায়ী চুক্তি তৈরি করা জরুরি। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাকে ঠিক সেই কাজটিই করতে বলেছেন।’

উইটকফের আনুষ্ঠানিক পদবি ‘মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ দূত’ হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে এই অঞ্চলের বাইরেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে আলোচনার নেতৃত্ব দেওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ এই দূত গত শনিবার ওমানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত ছিলেন এবং ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক দফা আলোচনা করেন। পরবর্তী দফার আলোচনার দিন নির্ধারিত হয়েছে ১৯ এপ্রিল।

গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র চায়, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ‘বাতিল’ করুক। এর পাশাপাশি হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওমানের সুলতান হাইথাম বিন তারিক আল সাঈদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আলোচনার মাধ্যমে শেষ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘আরও দ্রুত মুছে ফেলব’, ইরানকে আবার হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে আবারও হামলার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইরানের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে এত দ্রুত মুছে ফেলার হুমকি দিয়েছেন যে কেউ আঙুল তোলার আগে সেটা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

গতকাল সোমবার স্কটল্যান্ডে এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দেন ট্রাম্প। সম্প্রতি তেহরান বলেছে, তারা বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে এ বছর তেহরানের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা চলছিল। জুনে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর ওই আলোচনা ভেস্তে যায়।

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে একটি আলোচনার আগে দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার আছে।

এ প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ইরান খুব খারাপ সংকেত দিচ্ছে, খুবই বাজে বার্তা পাঠাচ্ছে।

ট্রাম্পের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও উপস্থিত ছিলেন।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তাদের (ইরান) এটা করা উচিত নয়। আমরা তাদের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি। তারা আবার এটা শুরু করতে পারে। যদি তারা করে, আপনি আঙুল তোলার আগেই আমরা সেটা নিশ্চিহ্ন করে দেব। আমরা এটা আনন্দের সঙ্গেই করব—খোলাখুলিভাবে ও নির্দ্বিধায়।’

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে একটি আলোচনার আগে দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার আছে। এ আলোচনাকে ইরানি কর্মকর্তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ, খোলামেলা ও বিস্তারিত’ বলে বর্ণনা করেছেন।

আমি এখান থেকে ‘স্বৈরশাসক’ খামেনিকে স্পষ্ট করে বার্তা দিতে চাই, আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন, আমাদের লম্বা হাত আরও শক্তিশালী হয়ে আবারও তেহরান অবধি পৌঁছে যাবে। এবার ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছে যাবে।ইসরায়েল কাৎজ, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

গত জুনে ইরানের তিনটি বড় পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এটা ছিল পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তেহরানের প্রথম বড় কোনো কূটনৈতিক আলোচনা। তবে আলোচনা থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি বা সাফল্যের ঘোষণা আসেনি।

ট্রাম্পের গতকালের বক্তব্যের পর আরাগচি বলেন, ইরান কখনোই হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো ভাষায় সাড়া দেবে না। তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, চিকিৎসা ও বেসামরিক কারণে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রয়োজন। যদি ইরান আবারও হামলার শিকার হয়, তাহলে আরও দৃঢ়ভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে তেহরান দ্বিধা করবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের আবার যেকোনো ধরনের হামলা শুরু করার জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

গত সপ্তাহে আল–জাজিরার সঙ্গে কথা বলার সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও বলেছিলেন, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করবে না। তবে আলোচনার দরজা খোলা রাখবে। ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে, সেটি স্থায়ী হওয়া নিয়ে তিনি খুব বেশি আশাবাদী নন বলেও জানান তিনি।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ইরানে আবারও হামলা শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর মধ্যে দেশটির নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে হামলার পরিকল্পনাও রয়েছে।

আরও পড়ুনইসরায়েল কি ইরানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে২৫ জুলাই ২০২৫

গত রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে একটি বার্তা পাঠাতে চান। তাঁর বরাত দিয়ে ইসরায়েলের একটি পত্রিকায় বলা হয়, ‘আমি এখান থেকে “স্বৈরশাসক” খামেনিকে স্পষ্ট করে একটি বার্তা দিতে চাই, আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন, আমাদের লম্বা হাত আরও শক্তিশালী হয়ে আবারও তেহরান অবধি পৌঁছে যাবে। এবার ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছে যাবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের আবার যেকোনো ধরনের হামলা শুরু করার জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

আরও পড়ুনখামেনিকে হত্যার হুমকি দিলেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী: আনাদোলু২৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আরও দ্রুত মুছে ফেলব’, ইরানকে আবার হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প