আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ইন্টার মিলান ম্যাচের ৮৮ মিনিটে গোল করে বায়ার্ন মিউনিখতে হারাবে তা হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি। গত সপ্তাহে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল প্রথম লেগে স্বাগতিক দর্শকদের হতাশায় ডোবায় সিমিওন ইনজাগির দল। এই ম্যাচের আগে ঘরের মাঠে ২২ ম্যাচে অপরাজিত ছিল বাভারিয়ানরা। ইন্টার ২-১ গোলে বায়ার্ন মিউনিখের মাঠে জিতে সেই রেকর্ড ভাঙে।

সপ্তাহ পেরিয়েছে। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে সান সিরোতে দিতে হবে অগ্নি পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় নামার আগে ইন্টারের ঘরের মাঠে জয়ের ঘোষণা দিয়েছে বায়ার্ন। জার্মানির সেরাা ক্লাবটি আজ দ্বিতীয় লেগে জিততে পারলে টানা ১৪ ম্যাচ পর হারের তিক্ত স্বাদ পাবে ইন্টার। অন্যদিকে ই নেরাজ্জুরিরা যদি জয়ের স্বাদ পায় তাহলে তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার সেমি-ফাইনাল খেলার সুযোগ পাবে ইতালির ক্লাবটি। ইন্টার সেমিতে গেলে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে বার্সেলোনাকে। যাদের বিপক্ষে ২০১০ সালে সেমিফাইনাল জয়ের পর শিরোপাও জিতে ই নেরাজ্জুরিরা, তাতে পূর্ণ হয় ট্রেবল।

ইতিহাস আজ ইন্টারকেই এগিয়ে রাখছে। এর আগে এই প্রতিযোগিতায় ২৩ বার প্রথম লেগ জিতার পর কেবল ২ বার দ্বিতীয় লেগে জয়বঞ্চিত ছিল ক্লাবটি। বায়ার্নের রেকর্ডও খারাপ না। ইতালির মাঠে চারবার খেলে সবকটিতে তারা জিতেছে। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর রেকর্ড হচ্ছে, সেই চার ম্যাচে তারা এক গোলও হজম করেনি। এবারও রেকর্ড ধরে রাখতে আত্মবিশ্বাসী বায়ার্ন।

আরো পড়ুন:

‘ডার ক্লাসিকেরে’ বায়ার্নকে রুখে দিয়েছে ডর্টমুন্ড

কেইনের মাইলফলক ছোঁয়ার রাতে পাত্তা পেল না লেভারকুজেন 

বাভারিয়ান কোচ কোম্পানি বলেছেন, ‘‘দিন শেষে আমাদের জিততেই হবে। সবসময় ম্যাচ জিততে হবে। প্রথম লেগের ফল যাই হোক না কেন। আশা করছি, আজ একটি বিশেষ রাতের অভিজ্ঞতা হবে আমাদের।” দলের একাধিক খেলোয়াড় না থাকায় কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছেন কোম্পানি। ন্যুয়ের, মুসিয়ালা, দেভিসকে ছাড়াই নামতে হবে জার্মান জায়ান্টদের।

উল্টোদিকে প্রায় পূর্ণ শক্তির দল পাবেন ইন্টারের কোচ ইনজাগি। তাই হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ দেখার আশায় ফুটবলপ্রেমীরা। দুই দলের এখন পর্যন্ত কোনো লড়াই অমীমাংসিত থাকেনি। পাঁচবারের দেখায় বায়ার্ন তিনবার, ইন্টার দুইবার জিতেছে। এবার কার মুখে হাসি ফোটে, চ্যাম্পিয়নস লিগের শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কারের জন্য কে এগিয়ে যায় সেটাই দেখার।

ঢাকা/ইয়াসিন/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ য ম প য়নস ল গ ইন ট র ম ল ন ইন ট র র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ