বেলার হাসি, অ্যাঞ্জেলের শূন্যতা: রোনালদোর আনন্দ-বেদনার দিন
Published: 19th, April 2025 GMT
সেদিন আবেগের দ্বিমুখী লড়াইয়ে পড়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও জর্জিনা রদ্রিগেজ। তাঁদের ঘর আলোকিত করে জন্মেছে নতুন এক শিশু, কিন্তু মনে আনন্দ ছিল না। সেই নবজাতকেরই যমজ ভাই যে মারা গেছেন। মা–বাবার জন্য এমন দিন কতটা কঠিন!
রোনালদো শুধু আবেগ নয় বুকে পাথরচাপাও দিয়ে রাখতে জানেন। ২০২২ সালের সেই দিনটি পার করার পরদিন ইনস্টাগ্রামে একই সঙ্গে সুখের ও দুঃখের সংবাদটি জানিয়েছিলেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের ছেলেশিশুটি মারা গেছে। যেকোনো মা–বাবার জন্য এটাই গভীরতম দুঃখ। কিছুটা আশা এবং সুখ নিয়ে এই মুহূর্তটি পার করার শক্তি আমরা পাচ্ছি মেয়েশিশুটির জন্ম নেওয়ায়।’
আরও পড়ুনফন ডাইক কি তাহলে এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতনের ডিফেন্ডার৪৯ মিনিট আগে২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর ইনস্টাগ্রামে জর্জিনার সঙ্গে নিজের হাসিমুখের একটি ছবি এবং আলট্রাসনোগ্রামের ছবি পোস্ট করে যমজ সন্তানের অপেক্ষায় থাকার সুখবরটি জানিয়েছিলেন রোনালদো। কিন্তু ভাগ্য পুরোপুরি তাঁদের সহায় হয়নি। কন্যাশিশু বেলা সুস্থ অবস্থায় জন্ম নিলেও পুত্রসন্তান অ্যাঞ্জেল বেবিকে বাঁচানো যায়নি।
বাবা–মা হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই দিনটি রোনালদো ও জর্জিনা কখনো ভুলতে পারবেন না। তিন বছর বয়সী বেলার জন্মদিন ছিল গতকাল। আবার এই দিনটাই অ্যাঞ্জেল বেবির মৃত্যুদিন, বেঁচে থাকলে যার বয়সও হতো তিন বছর। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দিনটি স্মরণ করে একটি ছবি পোস্ট করেন রোনালদো। সবুজ মাঠে বেলার সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে ওঠার সেই ছবির ক্যাপশন, ‘শুভ জন্মদিন আমার ভালোবাসা! আমাদের ভালোবাসা সব সময়ই তোমার সঙ্গে আছে।#অ্যাঞ্জেল বেবি।’
রোনালদোর এই ক্যাপশন আসলে মিশ্র অনুভূতির। একই সঙ্গে বেলাকে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা কিংবা ভালোবাসা জানানোর পাশাপাশি অ্যাঞ্জেল বেবিকেও স্মরণ করেছেন বুকে পাথর বেঁধে। ক্যাপশনে যে ভালোবাসার কথা তিনি বলেছেন সেটা আসলে তাঁর এই দুই সন্তানের ক্ষেত্রে দুরকম অনুভূতির সঙ্গেই মানানসই—একটি আনন্দের আরেকটি দুঃখের।
আরও পড়ুনযাঁরা মেসিকে ‘মেসি’ বানিয়েছেন—কেমন সেই দুই কোচ১২ ঘণ্টা আগেজর্জিনাও নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে রোনালদোর সঙ্গে বেলার একটি ভিডিও পোস্ট করে শুভেচ্ছা জানান জন্মদিনের। অ্যাঞ্জেল বেবিকেও যে মনে রেখেছেন সেটা বোঝা যায় তাঁর ক্যাপশনেই, ‘আজ আমার বাচ্চাদের বয়স তিন বছর হলো। আমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে আমি তোমাদের ভালোবাসি। বাবার সঙ্গে এই ভিডিওটি আমার অন্যতম পছন্দের। অভিনন্দন এবং আমাকে মা হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’
আনন্দ–বেদনার এ দিন কাটিয়ে মাঠে সময়টা ভালো যায়নি রোনালদোর। সৌদি প্রো লিগে গতকাল রাতে আল কাদিশার কাছে ২–১ গোলে হেরেছে আল নাসর। পুরো সময় মাঠে থেকেও গোল পাননি রোনালদো। এই হারে সৌদি লিগ জয়ের দৌড়ে বড় ধাক্কাই খেল আল নাসর। ২৮ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৫৭ পয়েন্ট। সমান ম্যাচ খেলে ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আল ইতিহাদ। হাতে ৬ ম্যাচ রেখে ইতিহাদের চেয়ে ৮ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে তৃতীয় আল নাসর।
অ্যাঞ্জেল বেবিকে রোনালদো ও জর্জিনা প্রতিবছর স্মরণ করেন। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে এলে ম্যাগাজিনকে জর্জিনা বলেছিলেন, ‘এ বছরটা আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন বছর। সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত সবচেয়ে দুঃখে পরিণত হয়েছে এবং এটা সারা জীবনই থাকবে।’
অ্যাঞ্জেল বেবিসহ রোনালদোর মোট ছয় সন্তান। ২০১০ সালে জন্ম নেয় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জুনিয়র। ২০১৭ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রে সারোগেসির মাধ্যমে যমজ সন্তান এভা ও মাতেওয়ের বাবা হন রোনালদো। সে বছরই নভেম্বরে জর্জিনার গর্ভে জন্ম নেয় অ্যালানা। এরপর ২০২২ সালে জন্ম নেয় বেলা। সব মিলিয়ে জুনিয়ররা দুই ভাই ও তিন বোন। পরপারে পাড়ি জমানো অ্যাঞ্জেল বেবিকে ধরলে অবশ্য জুনিয়ররা ছয় ভাই–বোন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক য পশন ই দ নট জন ম ন আনন দ সবচ য় ন বছর
এছাড়াও পড়ুন:
ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে
দেশে রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। একইসাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।
রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর ৩৪ শতাংশ তেলে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রায়। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন ‘এ’–এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়-যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের ড্রামে সংরক্ষিত খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কাও থাকে। এই পুরোনো ড্রামগুলোতে কোনো লেবেল বা উৎস সম্পর্কিত তথ্য না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।
এছাড়াও কর্মশালায় ভোজ্যতেলে গুণগতমানের প্যাকেজিং নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়। সাধারণত সূর্যরশ্মিসহ যেকোন আলোর সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোজ্যতেল বাজারজাত হয় যেসব বোতলে সেগুলোর অধিকাংশই আলো প্রতিরোধী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের গুণগত ও পুষ্টিমান হ্রাস পায়। সে কারণে ভোজ্যতেলের প্যাকেজিংয়ের জন্য আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ উপাদান ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।
কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি এডভোকেসি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং প্রজ্ঞা'র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
ঢাকা/হাসান/সাইফ