টানা দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়- প্রস্তাবে ভিন্নমত বিএনপির
Published: 20th, April 2025 GMT
কোনো ব্যক্তি দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, সংস্কারপ্রক্রিয়ায় এ প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান বিএনপির। দলটি বলছে, টানা দু’বারের বেশি না পারলেও বিরতি দিয়ে কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলে, সে সুযোগ থাকতে হবে। এটা সংকুচিত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বিএনপির এ অবস্থানের কথা জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের আলোচনার বিরতিতে তিনি এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে দলের অবস্থান স্পষ্ট। জনগণ যদি কোনো ব্যক্তিকে দুই মেয়াদের পর বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী করতে চায়, সেই সুযোগ সংকুচিত করা উচিত হবে না।
তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের মৌলিক অধিকারের পরিসর বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা ভিন্ন মতামত দিয়েছি। বিএনপির অবস্থান হলো, মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হয়। এটার পরিধি বাড়ালে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যয় বাড়বে। তাই আমরা অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত না করে রাষ্ট্র যেটুকু বহন করতে পারবে, সেটুকুই নির্ধারণের পক্ষে জোর দিয়েছি।
ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের বিপক্ষে অবস্থান জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা এটার বিপক্ষে মতামত দিয়েছি। বিএনপি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চায়।
বিএনপির এ নেতা বলেন, সংসদে নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়ে বিএনপি একমত। কিন্তু এখন যেমন আছে, সেটা আগামী সংসদ পর্যন্ত বহাল থাকতে হবে। আগামী সংসদ গঠিত হওয়ার পর তাঁদের (নারীদের) কোন পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) বিষয়েও একমত নয় বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এটা বাস্তবায়ন হলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অনেক বেশি সংকুচিত হবে।
আলোচনায় বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছে। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন- দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র জন ত স ল হউদ দ ন আহমদ র সদস য অবস থ ন ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
বালু ব্যবসার নামে প্রতারণা কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা
নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর এক বালু ব্যবসায়ীর (ঠিকাদার) বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, তাদের কয়েক কোটি টাকা ঠকিয়ে এখন লাপাত্তা এক সময়ের সহযোগী মতিউর রহমান নামের ওই বালু ব্যবসায়ী।
অভিযোগকারীরা জানান, মতিউর তাঁর লাইসেন্স ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করে বিক্রির কথা বলে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন, যা অন্যরা বুঝতে পারেননি। কথা ছিল সেই লাইসেন্সে বালু উত্তোলনের পর তা বিক্রি করে ভাগের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হবে অংশীদারদের। এই কথায় তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি টাকা আদায় করলেও তাদের টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে।
জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার হিড়িক পড়েছে। নদীর বালু তোলা নিয়ে চলছে নানা রকম প্রতারণা। তেমনি একটি প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী। তাদের প্রায় দুই কোটি টাকা বেহাত হয়েছে মা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমানের কারণে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মতিউর রহমান কুশিয়ারা নদীর বালুর অনুমতি পেয়েছেন বলে এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচার করেন। পরে তিনি শেয়ার বিক্রির কথা জানান দেন। যার ভিত্তিতে ১৬টি শেয়ার তিনি বিক্রি করবেন বলে জানান। তিনি এ বিষয়ে প্রথমে যোগাযোগ করেন শেরপুর মুক্তানগর রিসোর্টের মালিক জাবেদ রনি আহমদের সঙ্গে।
আলোচনার পর জাবেদ রনি ও তাঁর বন্ধু ইমরান আহমদের কাছে থেকে ব্যাংক একাউন্ডের মাধ্যমে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা নেন মতিউর। এর বিপরীতে কোনো লাভ বা শেয়ার না দেওয়ায় তারা সিলেট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, মামলায় আসামি মতিউর রহমান, বাদী ইমরান আহমদ ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদের নাম উল্লেখ করেছেন। মতিউর রহমান কুশিয়ারা নদীর বালু উত্তোলনের জন্য জগন্নাথপুর উপজেলার অন্তর্গত খানপুর মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানে জমি লিজ নেওয়ার কথা জানান এবং সেখান থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেয়েছেন বলে অনুমতিপত্র দেখান। তবে বালু উত্তোলনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। তাই ১৬টি শেয়ার (প্রতিটি শেয়ারের বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা) বিক্রি করবেন। তখন বাদী ইমরান ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ আসামির কাছ থেকে চারটি শেয়ার ক্রয় করলে আলোচনা সাপেক্ষে ইমরান আহমদ ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনিকে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য বাবদ পাঁচ লাখ টাকা ছাড় দেন এবং চারটি শেয়ারের দাম একত্রে এক কোটি টাকা নির্ধারণ করেন। সে মোতাবেক ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি ৪ নম্বর সাক্ষীর বাড়িতে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে নগদ তিন লাখ টাকা আসামিকে দেওয়া হয়। যা আসামির ব্যবসায়িক প্যাডে করা চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
পরবর্তী সময়ে বাকি ৯৭ লাখ টাকা বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষী পরিশোধ করার পর আসামি মতিউরের সঙ্গে ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে সম্মত হন এবং চুক্তির শর্তমতে ব্যবসার লভ্যাংশ প্রতি মাস শেষে হিসাব করে চারটি শেয়ারের বিপরীতে ১৬ অংশ বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষীকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আসামি নিজে ও তাঁর লোক মারফত ব্যাংকের মাধ্যমে ও নগদে সর্বমোট এক কোটি ২৯ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। যাতে বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষীর চারটি শেয়ার বাবদ এক কোটি টাকা এবং অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারদের ২৯ লাখ টাকা। কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও ব্যবসার মাসিক হিসাব সম্পর্কে আসামি মতিউর অংশীজনের কোনো হিসাব বুঝিয়ে দেননি। একপর্যায়ে মতিউর রহমান গা-ঢাকা দেন।
ইমরান আহমদ চৌধুরী জানান, বালু ব্যবসায়ী মতিউর প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে এখন আত্মগোপনে রয়েছে। তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
রনি আহমদ বলেন, কয়েক বন্ধু মিলে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা তাঁকে দিয়েছেন। এ ছাড়া নগদে আরও ৫০ লাখ টাকা বিভিন্নজনের কাছে থেকে তাঁকে সংগ্রহ করে দিয়েছেন। সে নারায়ণগঞ্জের একজন ব্যবসায়ীর কাছে থেকে আর ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে যার চুক্তিনামার সাক্ষীও তিনি।
অভিযোগ ও মামলার ব্যাপারে জানতে মা এন্টারপ্রাইজের মতিউর রহমানের মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলিনি।