সময়ের আগে বা স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজন নিয়ে জন্ম নিলে জন্মের পর অন্তত প্রথম আট ঘণ্টা নবজাতককে মায়ের সঙ্গে রাখতে হবে। ত্বকের স্পর্শে রেখে নবজাতককে ঘন ঘন বুকের দুধ পান করাবেন মা। অত্যন্ত সহজ ও সাশ্রয়ী এই চিকিৎসাপদ্ধতিই বাঁচিয়ে দিতে পারে লাখো নবজাতকের প্রাণ। নবজাতককে দ্রুত সুস্থ করে তোলার অত্যন্ত কার্যকর এ পদ্ধতির নাম ‘ক্যাঙারু মাদার কেয়ার’ বা কেএমসি মাতৃসেবা। নামটি এসেছে ক্যাঙারু প্রাণী থেকে। প্রাণীটি নিজের পেটের নিচের দিকে থাকা প্রাকৃতিক থলেতে বাচ্চাদের নিয়ে চলাফেরা করে।

বাংলাদেশ নিওনেটাল ফোরাম (বিএনএফ) আয়োজিত সপ্তম আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ এই চিকিৎসাপদ্ধতির কথা তুলে ধরেন দেশি-বিদেশি নবজাতক ও শিশুবিশেষজ্ঞরা। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘কোয়ালিটি নিউবর্ন কেয়ার অ্যাট ফ্যাসিলিটি অ্যান্ড হোম: আ পাথওয়ে টু হেলদিয়ার ফিউচার’। অনুষ্ঠানটি সহব্যবস্থাপনা করছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল–ইউনিসেফ, সেভ দ্য চিলড্রেন, নোরা হেলথ, প্রজন্ম রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও ওরবিস।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আজ বুধবার থেকে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে নিজেদের প্রবন্ধ ও গবেষণাপত্র উপস্থাপন করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৭২১ জন এবং ৮ জন বিদেশি নবজাতক বিশেষজ্ঞ। উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক নাজমুন নাহার ও অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

অধিবেশনে অসুস্থ নবজাতক এবং জন্মগত জটিলতা থাকা শিশুদের সেবায় বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে বিশেষায়িত নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্রের (স্ক্যানইউ) চিত্র ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা তুলে ধরেন ইউনিসেফের কোয়ালিটি কেয়ার বিভাগের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পায়ে ফিও থান চো। তিনি বলেন, নবজাতকের কম ওজন, শ্বাসজটিলতা এবং সেপসিসের মতো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় স্ক্যানইউগুলো আধুনিকভাবে নকশা করা হয়েছে, যা অনেক শিশুর প্রাণ রক্ষা করবে।

কেএমসি মাতৃসেবা নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন ইউনিসেফের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদ হাসান। পদ্ধতিটির গুরুত্ব তুলে ধরে এই চিকিৎসক বলেন, জন্মের পর মায়ের বুকে শিশুকে এমনভাবে শুইয়ে রাখা হয়, যেন দুজনই একে অপরের ত্বকের স্পর্শে থাকে। জন্মের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা কেএমসি সেবার ফলে বিশ্বব্যাপী নবজাতকদের সেপসিস হওয়ার হার ১৮ শতাংশ কমেছে। এভাবে সারা বিশ্বে অনেক নবজাতকের প্রাণ রক্ষার নজিরের কথা জানান জাহিদ হাসান।

‘বাংলাদেশের নবজাতক স্বাস্থ্যের দৃশ্যপট: এখন কোথায় মনোযোগ দিতে হবে?’ শীর্ষক আলোচনা করেন ইউনিসেফের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিকিৎসক দেওয়ান মো.

এমদাদুল হক। দেশে নবজাতকের মৃত্যু রোধে তাৎক্ষণিক কেএমসি মাতৃসেবার কার্যকারিতা নিয়ে কথা বলেন ইউনিসেফের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার দে।

প্রধান অতিথি জাতীয় অধ্যাপক এম কিউ কে তালুকদার বলেন, নবজাতকের সেবায় দেশের তরুণ চিকিৎসক ও গবেষকেরা অনেক সম্ভাবনাময় কাজ করছেন। তাঁরা নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করছেন, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। দেশের সব মা ও শিশু যেন এই সেবাগুলো পায়, সেই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

সম্মেলনে বাংলাদেশে ইউনিসেফের ডেপুটি প্রতিনিধি ব্রিজেট জব-জনসন বলেন, ‘বাংলাদেশ নবজাতক ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু এখনো প্রতি আট মিনিটে আমরা বয়স এক মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই এক নবজাতককে হারাচ্ছি। এই নবজাতকদের বেশির ভাগই নানা প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য ব্যাধি। যেমন অপরিপক্বতা (সময়ের আগে জন্ম), কম ওজন নিয়ে জন্ম, জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট ও সংক্রমণের কারণে মারা যাচ্ছে।’

ব্রিজেট বলেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থা শক্তিশালী করা, স্ক্যানইউ স্থাপন, কেএমসি মাতৃসেবা সম্প্রসারণ, অক্সিজেন থেরাপি সেবা ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কমিউনিটিভিত্তিক ফলোআপ পরিষেবা প্রসারের মাধ্যমে নবজাতকের পরিচর্যা উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করছে ইউনিসেফ। আর এর সবকিছুই জাতীয় নবজাতক স্বাস্থ্য কৌশলের অধীন পরিচালিত হচ্ছে।

উদ্যোগগুলো আরও প্রসারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ব্রিজেট আরও বলেন, ‘প্রত্যেক মা ও শিশু, বিশেষ করে দুর্গম অঞ্চলেও যেন এসব সেবা পান। মা ও কিশোরীদের সহায়তা, তাঁদের পুষ্টি উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসম্মত গর্ভকালীন বিরতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রতিরোধযোগ্য নবজাতক ও মাতৃমৃত্যু চিরতরে বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের অবশ্যই এই অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স ব স থ য কর মকর ত ন ইউন স ফ র নবজ তকক জন ম র ক এমস

এছাড়াও পড়ুন:

ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে

একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অপ্রত্যাশিত চাপ আর হতাশাকে দূর করেছে একটি সংবাদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিলেছে সহযোগিতা, পরিশোধ হয়ে গেছে বিকেএসপির বকেয়া।

এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা। তাঁদের ওপর থেকে নেমে গেছে বড় ধরনের আর্থিক চাপ।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেএসপি প্রতিমার অভিভাবককে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ের বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সেই চিঠিতেই সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে। অর্থাভাবে যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল প্রতিমার ভবিষ্যৎ, ঠিক সেই সময় ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় তাঁদের পরিবারের সংগ্রামের গল্প।

আরও পড়ুনবকেয়া বেতন চেয়ে বিকেএসপির চিঠি, ফুটবলার প্রতিমার পড়াশোনা বন্ধের পথে ১১ অক্টোবর ২০২৫

প্রতিবেদনটি পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী সহায়তা করেন আরও ১০ হাজার টাকা। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার দেন পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল।

সহায়তা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে। মুঠোফোনে প্রতিমা বলেন, ‘এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিকেএসপির পাওনা ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ভালো আছি, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা আর অনুশীলন করছি।’

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রতিমা মুন্ডা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ