মুন্সীগঞ্জ শহরের সড়কে শত শত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। জেলা শহর ও শহরাতলিতে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জেলা শহরে প্রতিদিনই দেখা দিচ্ছে যানজট। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইজিবাইকগুলো শহরের যেখানে সেখানে ইচ্ছেমতো থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায় এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে ঘটছে দুর্ঘটনাও। 

ট্রাফিক পুলিশ বলছে, পৌরসভাসহ প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগে এ সমস্যার যথাযথ সমাধান করা সম্ভব। 

একদিকে শহরের প্রধান প্রধান সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো খানাখন্দভরা এবং কয়েকটি সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ পোহাচ্ছে শহরবাসী। এর মধ্যে সরকারি নিয়ম অমান্য করে বেপরোয়াভাবে মিশুক ও অটোরিকশা চালানোর ফলে শহরবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। 

শহরবাসীর অভিযোগ- ইজিবাইক ছাড়াও ভটভটি, শ্যালো ইঞ্জিন গাড়ি, নসিমন, করিমনও অবৈধভাবে প্রধান সড়কে চলছে। এসব কিছু পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটলেও রহস্যজনক কারণে নিশ্চুপ থাকতে দেখা গেছে।

শহরের ইদ্রাকপুর এলাকার মো.

রনি বলেন, “একদিকে শহরের প্রধান প্রধান সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো খানাখন্দভরা এবং কয়েকটি সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ পোহাচ্ছে শহরবাসী। 

এর মধ্যে সরকারি নিয়ম অমান্য করে বেপরোয়াভাবে লাইসেন্স বিহীন মিশুক ও অটোরিকশা চালানোর ফলে শহরবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। শহরবাসীর অভিযোগ, ইজিবাইক ছাড়াও ভটভটি, শ্যালো ইঞ্জিন গাড়ি, নসিমন, করিমনও অবৈধভাবে প্রধান সড়কে চলছে। 

এসব কিছু পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটলেও রহস্যজনক কারণে নিশ্চুপ থাকতে দেখা গেছে। এতে মিশুক ও অটোরিকশা চালকরাও লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে কোন প্রকার নিয়ম নীতি ও ট্রাফিক আইন না মেনে বীরদর্পে শহর ও শহরতলিকে যানজটের শহরে রূপান্তরিত করেছে। 

বাগমামুদালী পাড়ার খালেদা আক্তার বলেন, “এসব মিশুক ও অটোরিকশা চালাকরা রাস্তার মাঝখানে যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে। শহরের প্রধান সড়কের বিভিন্ন অংশে সড়কের ওপরই পার্কিং পরিস্থিতি আরও ঝুঁকি ও জটিল করে তুলেছে। বিভিন্ন অটো গ্যারেজগুলোতে তৈরি করা ইজিবাইকগুলো পর্যায়ক্রমে সড়কে যুক্ত হওয়ায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এমন একাধিক কারণে যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।” 

খালইষ্ট এলাকার মিঠু বলেন, “ব্যাটারিচালিত গাড়িগুলো বেপরোয়াভাবে চলছে। অটোরিকশা, স্কুটার চালাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগে, সরকারকে গাড়ির ট্যাক্স দিতে হয়। কিন্তু ইজিবাইকে এর কিছুই প্রয়োজন না হওয়ার সুযোগে ইজিবাইকের চাহিদা বেড়েছে। তাই এসব গাড়ি চালাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নাম্বার প্লেটের আওতায় নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।”

জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির জানান, অননুমোদিত এসব ইজিবাইকের কারণে শহরে চলাচল নাভিশ্বাস হয়ে পরেছে। এদের নিয়ন্ত্রণে পৌরসভাসহ জেলাবাসীর যৌথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তাছাড়া প্রশাসনের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সকলের সমন্বিত পদক্ষেপে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। 

এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জের সদর ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “অটো-মিশুক ইজিবাইকের কারণে যানজট নিরসনে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। এখন শহরের বিভিন্ন স্থানে ইজিবাইক ও মিশুক তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। ফলে অতিরিক্ত ইজিবাইক সড়কে যুক্ত হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সুধী সমাজ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।”

ব্যাটারিচালিত এসব অটো ও মিশুকের কারণে ছাত্রছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ এখন রাস্তায় বের হতে ভয় পায়। তিনি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসন দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মুন্সীগঞ্জবাসী।

ঢাকা/রতন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শহর র য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে