মুন্সীগঞ্জ শহরজুড়ে অটো-মিশুকের দৌরাত্ম্য, ভোগান্তিতে শহরবাসী
Published: 24th, April 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জ শহরের সড়কে শত শত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। জেলা শহর ও শহরাতলিতে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জেলা শহরে প্রতিদিনই দেখা দিচ্ছে যানজট। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইজিবাইকগুলো শহরের যেখানে সেখানে ইচ্ছেমতো থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায় এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে ঘটছে দুর্ঘটনাও।
ট্রাফিক পুলিশ বলছে, পৌরসভাসহ প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগে এ সমস্যার যথাযথ সমাধান করা সম্ভব।
একদিকে শহরের প্রধান প্রধান সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো খানাখন্দভরা এবং কয়েকটি সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ পোহাচ্ছে শহরবাসী। এর মধ্যে সরকারি নিয়ম অমান্য করে বেপরোয়াভাবে মিশুক ও অটোরিকশা চালানোর ফলে শহরবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
শহরবাসীর অভিযোগ- ইজিবাইক ছাড়াও ভটভটি, শ্যালো ইঞ্জিন গাড়ি, নসিমন, করিমনও অবৈধভাবে প্রধান সড়কে চলছে। এসব কিছু পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটলেও রহস্যজনক কারণে নিশ্চুপ থাকতে দেখা গেছে।
শহরের ইদ্রাকপুর এলাকার মো.
এর মধ্যে সরকারি নিয়ম অমান্য করে বেপরোয়াভাবে লাইসেন্স বিহীন মিশুক ও অটোরিকশা চালানোর ফলে শহরবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। শহরবাসীর অভিযোগ, ইজিবাইক ছাড়াও ভটভটি, শ্যালো ইঞ্জিন গাড়ি, নসিমন, করিমনও অবৈধভাবে প্রধান সড়কে চলছে।
এসব কিছু পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটলেও রহস্যজনক কারণে নিশ্চুপ থাকতে দেখা গেছে। এতে মিশুক ও অটোরিকশা চালকরাও লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে কোন প্রকার নিয়ম নীতি ও ট্রাফিক আইন না মেনে বীরদর্পে শহর ও শহরতলিকে যানজটের শহরে রূপান্তরিত করেছে।
বাগমামুদালী পাড়ার খালেদা আক্তার বলেন, “এসব মিশুক ও অটোরিকশা চালাকরা রাস্তার মাঝখানে যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে। শহরের প্রধান সড়কের বিভিন্ন অংশে সড়কের ওপরই পার্কিং পরিস্থিতি আরও ঝুঁকি ও জটিল করে তুলেছে। বিভিন্ন অটো গ্যারেজগুলোতে তৈরি করা ইজিবাইকগুলো পর্যায়ক্রমে সড়কে যুক্ত হওয়ায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এমন একাধিক কারণে যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
খালইষ্ট এলাকার মিঠু বলেন, “ব্যাটারিচালিত গাড়িগুলো বেপরোয়াভাবে চলছে। অটোরিকশা, স্কুটার চালাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগে, সরকারকে গাড়ির ট্যাক্স দিতে হয়। কিন্তু ইজিবাইকে এর কিছুই প্রয়োজন না হওয়ার সুযোগে ইজিবাইকের চাহিদা বেড়েছে। তাই এসব গাড়ি চালাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নাম্বার প্লেটের আওতায় নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।”
জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির জানান, অননুমোদিত এসব ইজিবাইকের কারণে শহরে চলাচল নাভিশ্বাস হয়ে পরেছে। এদের নিয়ন্ত্রণে পৌরসভাসহ জেলাবাসীর যৌথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তাছাড়া প্রশাসনের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সকলের সমন্বিত পদক্ষেপে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জের সদর ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “অটো-মিশুক ইজিবাইকের কারণে যানজট নিরসনে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। এখন শহরের বিভিন্ন স্থানে ইজিবাইক ও মিশুক তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। ফলে অতিরিক্ত ইজিবাইক সড়কে যুক্ত হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সুধী সমাজ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।”
ব্যাটারিচালিত এসব অটো ও মিশুকের কারণে ছাত্রছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ এখন রাস্তায় বের হতে ভয় পায়। তিনি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসন দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মুন্সীগঞ্জবাসী।
ঢাকা/রতন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শহর র য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আন্তরিক হোন
মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার এবং এর নিচের সড়কগুলো ঢাকা শহরের প্রবেশমুখে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ফ্লাইওভারটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল যানজট নিরসন করা; অপরিকল্পিত নকশা, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং আইন না মানার কারণে সেটিই হয়েছে এখন গলার কঁাটা। পদ্মা সেতু থেকে পাওয়া মূল্যবান সময়টুকু ঢাকার প্রবেশপথেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। রাজধানীর উপকণ্ঠে এই যানজট কেবল সময়ের অপচয় নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতির ওপরও ফেলেছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব।
প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ফ্লাইওভার শনির আখড়া থেকে চানখাঁরপুল পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করলেও এর তিনটি অংশ স্থায়ী যানজটের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে—উঠে আসার অংশ, সায়েদাবাদ অংশ এবং শেষে নামার সময় গুলিস্তান টোল প্লাজা ও চানখাঁরপুল অংশ। গুলিস্তান টোল প্লাজার ধীরগতি এবং সায়েদাবাদে সৃষ্টি হওয়া জট মূলত ফ্লাইওভারের সুফলকে ম্লান করে দিচ্ছে। কিন্তু এই জটের মূল কারণ নিছক বেশি যানবাহন নয়, বরং ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতা।
নগর–পরিকল্পনাবিদদের মতে, আধুনিক পরিবহনব্যবস্থায় অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণকে উৎসাহিত করা হয় না, কারণ এটি নিচের রাস্তার ট্রাফিক পরিচালন ক্ষমতাকে অনেক ক্ষেত্রেই কমিয়ে দেয়। হানিফ ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে ফ্লাইওভারের ওপর চাপ কমাতে নিচের সড়কগুলোর দিকে নজর দেওয়া হয়নি। ফলে নিচের যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ সড়কটি সংস্কারের অভাবে বেহাল এবং রাস্তাজুড়ে গর্ত, পানি আর ধুলার রাজত্ব। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যানবাহনের চাপ গিয়ে পড়ছে ফ্লাইওভারের ওপর, যেখানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে নামার মুখে।
তবে এই অব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বিপজ্জনক দিকটি হলো সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক নৈরাজ্য। ধারণক্ষমতা ৭০০-৮০০ বাস হলেও সেখানে রাখা হয় আড়াই থেকে তিন হাজার বাস। টার্মিনালের বাইরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শত শত পরিবহন কাউন্টার। দুর্ঘটনা বা অবৈধ কাউন্টারের কারণে যখন একটি লেনের যানবাহন উল্টো সড়কে চলে আসে, তখন যাওয়া-আসা উভয় পথের গতি রুদ্ধ হয়ে যায়।
যাত্রাবাড়ী এলাকার যানজট কেবল ট্রাফিক আইন অমান্য বা রাস্তার দুর্বলতার ফল নয়, এর জন্য দায়ী পরিবহন খাতে জেঁকে বসা প্রভাবশালী সিন্ডিকেটও। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে সায়েদাবাদ টার্মিনালের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
প্রতিদিন লাখো যাত্রীর দুর্ভোগ কমাতে হলে এখন শুধু ফ্লাইওভারের ওপর নয়, নজর দিতে হবে এর নিচেও। নিচের ভাঙাচোরা সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করতে হবে। এর ফলে ফ্লাইওভারের ওপরের চাপ কমে আসবে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, এর আশপাশ এলাকা ও সড়কগুলোকে অবৈধ দখল ও কাউন্টারমুক্ত করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকে নিচের সড়কগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে।