হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানিতে আলোচকরা বিশ্বনেতাদের সমালোচনা করেছেন। তারা মনে করেন, বিশ্বনেতাদের সতর্ক দৃষ্টির সামনেই ইসরায়েল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। মানুষ হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞকে তারা অপরাধ বলে স্বীকারই করে না। কোনো দেশ, সংস্থা এমনকি জাতিসংঘই যদি ইসরায়েলি নিকৃষ্ট হামলার প্রতিবাদ করে, তাহলে তাদের দখলদারদের রোষানলে পড়তে হয়। এমনকি আইসিজেও ইসরায়েলের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।

বিবিসি বলেছে, গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিভাগের প্রধান জেন ডাঙ্গর আইসিজেতে দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বিশ্বের নজরদারির অধীনে, ফিলিস্তিনিরা নৃশংসতা, অপরাধ, নিপীড়ন, বর্ণবাদ এবং গণহত্যার শিকার হচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাচ্ছে না।  

মানবাধিকার সংস্থা ল ফর প্যালেস্টাইনের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য আনিশা প্যাটেল আলজাজিরাকে বলেন, আইসিজের শুনানি কেবল ফিলিস্তিনে কর্মরত জাতিসংঘ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর ভবিষ্যৎ নিয়েই নয়, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার এবং অস্তিত্বের ব্যাপার। একদিকে আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি চলেছে, অন্যদিকে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েই যাচ্ছে।  

আলজাজিরা জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ৫০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৮ মাসে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৫২ হাজার ৩৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯০৫ জন আহত হয়েছেন। 

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজায় ‘গণহত্যার লাইভ স্ট্রিমিং’ করছে। বেশির ভাগ জনসংখ্যাকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। ইচ্ছা করেই মানবিক বিপর্যয় তৈরি করা হয়েছে। 

আইসিজেতে সৌদি আরবের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সৌদ আল নাসের গাজায় ‘ইসরায়েলের জঘন্য আচরণের’ নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল আইসিজের রায় উপেক্ষা করার ঘোষণা দিয়ে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে বিবেচনা করছে। 

এদিকে বাইডেনের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, তারা কখনও ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেননি। বরং যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে ইসরায়েলি চ্যানেল-১৩-এর এক তদন্ত প্রতিবেদেন।  

গাজায় খাদ্যাভাবে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা নারী-শিশুর করুণ পরিণতি ডেকে আনছে। ৫৫ হাজার প্রসূতি নারীর ২০ শতাংশই অপুষ্টিতে ভুগছেন। ৬০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি কারাগারে আটক ৫০ জনের বেশি সাহায্যকর্মীকে নির্যাতন করা হয়েছে।  

এদিকে হামাসের সঙ্গে গাজায় পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ইসরায়েলের নেই বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। গাজায় হামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে মতবিরোধ ও দ্বন্দ্বের পর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের শীর্ষ নির্বাহী রোনেন বার।  


  
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল গণহত য আইস জ

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়াল

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের মোট সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার (১১ জুন) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ১২৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪৭৪ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় নিহত মোট ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৫৫ হাজার ১০৪ জনে পৌঁছেছে। একইসঙ্গে অবরুদ্ধ নগরীতে আহতের সংখ্যা এখন ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৯৪ জনে পৌঁছেছে।

মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

আরো পড়ুন:

গাজা নীতির বিরোধিতাকারী পররাষ্ট্র কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে বলল যুক্তরাজ্য

গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ ‘লজ্জাজনক কেলেঙ্কারি’: ম্যাক্রোঁ

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই হামলায় প্রায় ১২০০ নিহত ও দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধারা। এর জবাবে ওই দিনই গাজায় বিমান হামলা ও পরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। 

দীর্ঘ ১৫ মাস ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। তবে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

অব্যাহত হামলার পাশাপাশি ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ব্যাপক অবরোধ আরোপ করেছে, যার ফলে এর জনসংখ্যা, বিশেষ করে উত্তর গাজার বাসিন্দারা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় ৮৫ শতাংশ জনসংখ্যা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, দীর্ঘ এ সময় ধরে চলা সংঘাতের কারণে মানবিক সংকটে দিন পার করছেন ফিলিস্তিনিরা। খাবার, পানি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার অভাবে উপত্যকাটির ২৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দা চরম ক্ষুধা ও ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছেন।

গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যা বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে রায় উপেক্ষা করে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
  • সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • তেহরানে ইসরায়েলের বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
  • হামলার আগে ইরানে গোপন অভিযান চালায় মোসাদ
  • চার শতাধিক লেখক গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়াল