বিশ্বনেতাদের সতর্ক দৃষ্টির সামনেই ঘটছে গণহত্যা
Published: 30th, April 2025 GMT
হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানিতে আলোচকরা বিশ্বনেতাদের সমালোচনা করেছেন। তারা মনে করেন, বিশ্বনেতাদের সতর্ক দৃষ্টির সামনেই ইসরায়েল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। মানুষ হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞকে তারা অপরাধ বলে স্বীকারই করে না। কোনো দেশ, সংস্থা এমনকি জাতিসংঘই যদি ইসরায়েলি নিকৃষ্ট হামলার প্রতিবাদ করে, তাহলে তাদের দখলদারদের রোষানলে পড়তে হয়। এমনকি আইসিজেও ইসরায়েলের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
বিবিসি বলেছে, গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিভাগের প্রধান জেন ডাঙ্গর আইসিজেতে দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বিশ্বের নজরদারির অধীনে, ফিলিস্তিনিরা নৃশংসতা, অপরাধ, নিপীড়ন, বর্ণবাদ এবং গণহত্যার শিকার হচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাচ্ছে না।
মানবাধিকার সংস্থা ল ফর প্যালেস্টাইনের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য আনিশা প্যাটেল আলজাজিরাকে বলেন, আইসিজের শুনানি কেবল ফিলিস্তিনে কর্মরত জাতিসংঘ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর ভবিষ্যৎ নিয়েই নয়, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার এবং অস্তিত্বের ব্যাপার। একদিকে আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি চলেছে, অন্যদিকে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েই যাচ্ছে।
আলজাজিরা জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ৫০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৮ মাসে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৫২ হাজার ৩৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯০৫ জন আহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজায় ‘গণহত্যার লাইভ স্ট্রিমিং’ করছে। বেশির ভাগ জনসংখ্যাকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। ইচ্ছা করেই মানবিক বিপর্যয় তৈরি করা হয়েছে।
আইসিজেতে সৌদি আরবের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সৌদ আল নাসের গাজায় ‘ইসরায়েলের জঘন্য আচরণের’ নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল আইসিজের রায় উপেক্ষা করার ঘোষণা দিয়ে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে বিবেচনা করছে।
এদিকে বাইডেনের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, তারা কখনও ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেননি। বরং যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে ইসরায়েলি চ্যানেল-১৩-এর এক তদন্ত প্রতিবেদেন।
গাজায় খাদ্যাভাবে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা নারী-শিশুর করুণ পরিণতি ডেকে আনছে। ৫৫ হাজার প্রসূতি নারীর ২০ শতাংশই অপুষ্টিতে ভুগছেন। ৬০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি কারাগারে আটক ৫০ জনের বেশি সাহায্যকর্মীকে নির্যাতন করা হয়েছে।
এদিকে হামাসের সঙ্গে গাজায় পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ইসরায়েলের নেই বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। গাজায় হামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে মতবিরোধ ও দ্বন্দ্বের পর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের শীর্ষ নির্বাহী রোনেন বার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল গণহত য আইস জ
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ