‘তুমি রবে নীরবে’– এক মা-মেয়ের গল্প। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী এ গান এবার রূপ পাচ্ছে একটি মিউজিক ভিডিওতে। এই ভিডিওটি নির্মাণ করছেন চলচ্চিত্র ও নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। তিনি নিজ হাতে গড়েছেন এক নিঃসঙ্গ মায়ের অন্তর্জগৎ ও হারিয়ে যাওয়া মেয়ের ফিরে আসার করুণ বাস্তবতা।
দেশের কিংবদন্তি মডেল, নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌ প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ গল্পভিত্তিক মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করছেন। যেখানে তিনি তুলে ধরেছেন নিঃশব্দ ভালোবাসা, প্রতীক্ষা ও মাতৃত্বের ব্যথা। কানাডার টরন্টো প্রবাসী, যিনি বর্তমানে ফ্লোরিডায় বসবাসরত একজন গজল সংগীতশিল্পী শিরিন চৌধুরীর গানটি গেয়েছেন, যাঁর প্রতিটি সুরে লুকিয়ে আছে ব্যক্তিগত বাস্তবতার ছোঁয়া।
প্রযোজনা সংস্থা সিংগিস্টিক-এর ব্যানারে ভিডিওটি নির্মিত হয়েছে। নতুন প্রতিভাবান মডেল নিদ্রিতা সরকার থাকছেন মৌয়ের মেয়ের চরিত্রে। ভিডিওটি চিত্রগ্রহণ করেছেন সুমন হোসেন। এটি মুক্তি পাবে আসছে ১১ মে আন্তর্জাতিক মা দিবসে। চয়নিকা চৌধুরী বলেন, ‘তুমি রবে নীরবে’ সব মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এক চিরন্তন উৎসর্গ। মডেল মৌয়ের অনবদ্য অভিনয় কাজটিকে আরও প্রাণবন্ত করেছে। আশা করছি, মিউজিক ভিডিওটি সবার ভালো লাগবে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে একটি শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মডেলিংয়ে পা রাখেন মৌ। এখন পর্যন্ত তিনিই বাংলাদেশের সর্বাধিক পারিশ্রমিক পাওয়া নারী মডেল। মডেলিংয়ের পাশাপাশি টিভি নাটকে মাঝেমধ্যে তাদের দেখা যায়। গত ঈদে তিনি অভিনয় করেছিলেন ‘কোনো একদিন’ নাটকে। ফারিয়া হোসেনের লেখা নাটকটি পরিচালনা করেছেন চয়নিকা চৌধুরী। এতে মৌয়ের বিপরীতে দেখা গেছে আফজাল হোসেনকে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স দ য় ইসল ম ম
এছাড়াও পড়ুন:
দুপুর ১টা বাজলেই ছুটির ঘণ্টা
ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১টা পেরোলেই ঢংঢং করে বেজে ওঠে ছুটির ঘণ্টা। খানিক বাদেই স্কুলের শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কোলাহলের পরিবর্তে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। এটি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিদিনকার চিত্র।
শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে ক্লাস শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় ছুটি দেওয়ার কথা। কিন্তু হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলে প্রধান শিক্ষকের খেয়ালখুশিমতো। সেখানে নিয়মিতভাবে দুপুর ১টা বাজলেই পড়ে ছুটির ঘণ্টা। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হাসিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা
বিদ্যালয়ে এসে ক্লাসে না গিয়ে কার্যালয়ে বসে থাকেন। দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি দিয়ে চলে যান যে যাঁর মতো।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রাহুল হোসেন জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাম ডাকে। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে স্কুল ছুটি হয়ে যায়।
নবম শ্রেণির ছাত্রী শাকিলা খাতুনের ভাষ্য, প্রতিদিনই একটা-দুটো ক্লাস নেন শিক্ষকরা। দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি দেওয়া হয়। সামনে পরীক্ষা তবুও অন্যান্য ক্লাস হয় না। একই ভাষ্য ওই শ্রেণির অনন্যা খাতুনেরও।
অভিভাবক মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে আগের মতো লেখাপড়া হয় না। শিক্ষকরা সবাই দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।
বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩০ গজ দূরে ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমের দোকান। তাঁর মেয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আব্দুর রহিম জানান, স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। প্রতিদিন দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি হয়ে যায়। এসব দেখার যেন কেউ নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য হাসানুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়মে জড়িত। স্কুলের বিষয়ে কিছু বলতে গেলে দুর্ব্যবহার করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি শিগগিরই ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেবেন।
বিদ্যালয়ের পাশেই সহকারী শিক্ষক আবু খোকনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন দুপুর ১টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি হয়। এটা প্রধান শিক্ষকের ব্যাপার।’
গত রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী। পরিচ্ছন্নতাকর্মী পতাকা নামাচ্ছেন। শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলছে। শিক্ষক কক্ষে শূন্য চেয়ার-টেবিল।
বিকেল ৪টার আগে ছুটি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক আশরাফুল আলম বলেন, ‘ছুটির বিষয়ে হেড স্যারের (প্রধান শিক্ষক) সঙ্গে কথা বলেন।’
এসএসসি পরীক্ষার অজুহাত দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রতিদিন বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক মো. নুর উদ্দিন।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, বিকেল ৪টার আগে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।