“কয়েকদিন পর আমার পরীক্ষা ছিল। তাই, আমি পড়া বুঝতে স্যারের চেম্বারে যায়। সেখানে সকালে যাওয়ার কথা থাকলেও স্যার একটু ব্যস্ত থাকায় আমি বিকেলে গিয়েছিলাম। স্যারের কাছে পড়া বুঝতে বুঝতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এ সময় হঠাৎ কয়েকজন স্যারের চেম্বারে নক করে। পরে স্যার দরজা খুলে দেন।“

শনিবার (১৭ মে) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পরিবহন মার্কেটের আমচত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান শিক্ষকের চেম্বার থেকে আটক হওয়া ফাইন্যান্স বিভাগের ছাত্রী।

আরো পড়ুন: চেম্বারে ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় রাবি শিক্ষক, ভিডিও ভাইরাল

আরো পড়ুন:

পাবিপ্রবিতে নতুন হল খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জবিতে ৪ বছর পর নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি, ক্লাস শুরু ২২ জুন

সংবাদ সম্মেলনে ওই ছাত্রী বলেন, “রুমে ঢুকে তারা প্রথমে আমার শরীরে হাত দেয়। এতে আমার শরীর থেকে ওড়না পড়ে যায়। তারা আমাকে ধর্ষণ করার হুমকি দেয় এবং মোবাইলে ভিডিও করার কথা বললে আমি টেবিলের নিচে গিয়ে লুকাই। পরে তারা বের হওয়ার জন্য জোর করলে আমি গামছা মাথায় নিয়ে বের হই।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “তারা প্রথম ৫ লাখ টাকা দাবি করে। স্যার আমার নিরাপত্তার ভয়ে একপর্যায়ে টাকা দিতে রাজি হন এবং চেম্বার থেকে বের হয়ে জুবেরী ভবনের দিক থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে দেন। পরদিন তাদের আরো ২ লাখ টাকা দিতে হয়।”

এ সময় তিনি ক্যাম্পাসের দুজন সাংবাদিকসহ চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এ অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ আনেন। তারা হলেন, কালবেলার রাবি প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন সজীব, খবরের কাগজের রাবি প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম সুমন, আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব, আইবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশের) রাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শনিবার বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমচত্বরে সংবাদ সম্মেলন করেন সাংবাদিক সাজ্জাদ ও সুমন।

সম্মেলন তারা বলেন, গত ১১ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এক স্যারের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, হেদায়েত উল্লাহ স্যার তার চেম্বারে এক ছাত্রীসহ অবস্থান করছেন। খবর পাওয়ার পর আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রক্টর স্যারের অনুমতিক্রমে ওই চেম্বারের সামনে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, রুমের লাইট বন্ধ। আমরা নক করলে স্যার নিজেই দরজা খুলে দেন। তখন আমরা রুমে প্রবেশ করি। স্যারের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে টেবিলের নিচে ওই নারী শিক্ষার্থীকে লুকিয়ে থাকতে দেখি।

তারা আরো বলেন, পরে স্যার নিজেই ছাত্রীকে টেবিলের নিচ থেকে বের করে আনেন। এ সময় ছাত্রীটি অনুরোধ করে বলেন, যেন ভিডিও বা সংবাদ প্রকাশ না করা হয়। অন্যথায় তিনি আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে হুমকি দেন। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা প্রক্টর স্যারকে কল করি বিষয়টি জানানোর জন্য। পরে হেদায়েত উল্লাহ স্যারের অনুরোধে আমরা প্রক্টর স্যারকে আর ঘটনা খুলে বলিনি। এ সময় ওই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা তখন ভিডিও প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেই।

আরো পড়ুন: চেম্বারে ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষক: স্থায়ী বহিষ্কার দাবিতে রাবিতে বিক্ষোভ

এ দুই সাংবাদিক বলেন, পরবর্তীতে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারকে জানানো হয়। স্যারের পক্ষ থেকে আমাদের একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয় এবং জানানো হয়, অভিযোগকারীদের পরিচয় গোপন রেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এরই মধ্যে আমাদের অজ্ঞাতে একটি সোর্সের মাধ্যমে ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আমরা লক্ষ্য করি, ওই শিক্ষক ও ছাত্রী আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলেন—যেখানে আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর গুজব ছড়ানো হয়েছে।

এ দুই সাংবাদিক আরো বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়নি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল কেবল একটি অনৈতিক ঘটনার যথাযথ প্রতিবাদ ও প্রশাসনকে অবহিত করা। ঘটনার সত্যতা আড়াল করতে কেউ যেন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা না করে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।

টাকা লেনদেনের বিষয়ে তারা বলেন, সেখানে টাকা লেনদেনের কোনো কথাই আসেনি। আমরা ওই মেয়ের আত্মহত্যার হুমকির কারণে ভিডিও আগে প্রকাশ করিনি।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ আম দ র ল নদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে

একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অপ্রত্যাশিত চাপ আর হতাশাকে দূর করেছে একটি সংবাদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিলেছে সহযোগিতা, পরিশোধ হয়ে গেছে বিকেএসপির বকেয়া।

এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা। তাঁদের ওপর থেকে নেমে গেছে বড় ধরনের আর্থিক চাপ।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেএসপি প্রতিমার অভিভাবককে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ের বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সেই চিঠিতেই সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে। অর্থাভাবে যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল প্রতিমার ভবিষ্যৎ, ঠিক সেই সময় ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় তাঁদের পরিবারের সংগ্রামের গল্প।

আরও পড়ুনবকেয়া বেতন চেয়ে বিকেএসপির চিঠি, ফুটবলার প্রতিমার পড়াশোনা বন্ধের পথে ১১ অক্টোবর ২০২৫

প্রতিবেদনটি পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী সহায়তা করেন আরও ১০ হাজার টাকা। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার দেন পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল।

সহায়তা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে। মুঠোফোনে প্রতিমা বলেন, ‘এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিকেএসপির পাওনা ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ভালো আছি, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা আর অনুশীলন করছি।’

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রতিমা মুন্ডা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ