স্যারের চেম্বারে পড়া বুঝতে গিয়েছিলাম, দাবি সেই ছাত্রীর
Published: 17th, May 2025 GMT
“কয়েকদিন পর আমার পরীক্ষা ছিল। তাই, আমি পড়া বুঝতে স্যারের চেম্বারে যায়। সেখানে সকালে যাওয়ার কথা থাকলেও স্যার একটু ব্যস্ত থাকায় আমি বিকেলে গিয়েছিলাম। স্যারের কাছে পড়া বুঝতে বুঝতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এ সময় হঠাৎ কয়েকজন স্যারের চেম্বারে নক করে। পরে স্যার দরজা খুলে দেন।“
শনিবার (১৭ মে) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পরিবহন মার্কেটের আমচত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান শিক্ষকের চেম্বার থেকে আটক হওয়া ফাইন্যান্স বিভাগের ছাত্রী।
আরো পড়ুন: চেম্বারে ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় রাবি শিক্ষক, ভিডিও ভাইরাল
আরো পড়ুন:
পাবিপ্রবিতে নতুন হল খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
জবিতে ৪ বছর পর নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি, ক্লাস শুরু ২২ জুন
সংবাদ সম্মেলনে ওই ছাত্রী বলেন, “রুমে ঢুকে তারা প্রথমে আমার শরীরে হাত দেয়। এতে আমার শরীর থেকে ওড়না পড়ে যায়। তারা আমাকে ধর্ষণ করার হুমকি দেয় এবং মোবাইলে ভিডিও করার কথা বললে আমি টেবিলের নিচে গিয়ে লুকাই। পরে তারা বের হওয়ার জন্য জোর করলে আমি গামছা মাথায় নিয়ে বের হই।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “তারা প্রথম ৫ লাখ টাকা দাবি করে। স্যার আমার নিরাপত্তার ভয়ে একপর্যায়ে টাকা দিতে রাজি হন এবং চেম্বার থেকে বের হয়ে জুবেরী ভবনের দিক থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে দেন। পরদিন তাদের আরো ২ লাখ টাকা দিতে হয়।”
এ সময় তিনি ক্যাম্পাসের দুজন সাংবাদিকসহ চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এ অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ আনেন। তারা হলেন, কালবেলার রাবি প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন সজীব, খবরের কাগজের রাবি প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম সুমন, আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব, আইবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশের) রাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শনিবার বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমচত্বরে সংবাদ সম্মেলন করেন সাংবাদিক সাজ্জাদ ও সুমন।
সম্মেলন তারা বলেন, গত ১১ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এক স্যারের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, হেদায়েত উল্লাহ স্যার তার চেম্বারে এক ছাত্রীসহ অবস্থান করছেন। খবর পাওয়ার পর আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রক্টর স্যারের অনুমতিক্রমে ওই চেম্বারের সামনে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, রুমের লাইট বন্ধ। আমরা নক করলে স্যার নিজেই দরজা খুলে দেন। তখন আমরা রুমে প্রবেশ করি। স্যারের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে টেবিলের নিচে ওই নারী শিক্ষার্থীকে লুকিয়ে থাকতে দেখি।
তারা আরো বলেন, পরে স্যার নিজেই ছাত্রীকে টেবিলের নিচ থেকে বের করে আনেন। এ সময় ছাত্রীটি অনুরোধ করে বলেন, যেন ভিডিও বা সংবাদ প্রকাশ না করা হয়। অন্যথায় তিনি আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে হুমকি দেন। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা প্রক্টর স্যারকে কল করি বিষয়টি জানানোর জন্য। পরে হেদায়েত উল্লাহ স্যারের অনুরোধে আমরা প্রক্টর স্যারকে আর ঘটনা খুলে বলিনি। এ সময় ওই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা তখন ভিডিও প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেই।
আরো পড়ুন: চেম্বারে ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষক: স্থায়ী বহিষ্কার দাবিতে রাবিতে বিক্ষোভ
এ দুই সাংবাদিক বলেন, পরবর্তীতে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারকে জানানো হয়। স্যারের পক্ষ থেকে আমাদের একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয় এবং জানানো হয়, অভিযোগকারীদের পরিচয় গোপন রেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এরই মধ্যে আমাদের অজ্ঞাতে একটি সোর্সের মাধ্যমে ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আমরা লক্ষ্য করি, ওই শিক্ষক ও ছাত্রী আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলেন—যেখানে আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর গুজব ছড়ানো হয়েছে।
এ দুই সাংবাদিক আরো বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়নি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল কেবল একটি অনৈতিক ঘটনার যথাযথ প্রতিবাদ ও প্রশাসনকে অবহিত করা। ঘটনার সত্যতা আড়াল করতে কেউ যেন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা না করে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।
টাকা লেনদেনের বিষয়ে তারা বলেন, সেখানে টাকা লেনদেনের কোনো কথাই আসেনি। আমরা ওই মেয়ের আত্মহত্যার হুমকির কারণে ভিডিও আগে প্রকাশ করিনি।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ আম দ র ল নদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীর নাক ফাটালেন সহকারী শিক্ষক
পাবনার চাটমোহরে তুচ্ছ ঘটনায় সোয়াদ হোসেন নামে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর নাক ফাটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
বুধবার (২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের কানাইয়েরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান ওরফে জিয়া হাফিজ ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক।
আহত শিক্ষার্থী কানাইয়েরচর গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে। তাকে আহত অবস্থায় চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ক্লাস চলাকালীন হাফিজুর রহমানের অনুমতি নিয়ে বাইরে যায় সোয়াদ। কিন্তু ফিরে আসতে দেরি হওয়ায় শ্রেণিকক্ষে ঢোকার সাথে সাথে সোয়াদের গালে চড় দেন হাফিজুর রহমান। এ সময় নাকে লেগে জখম হয় সোয়াদ। পরে স্বজনরা খবর পেয়ে সোয়াদকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে রক্ত বন্ধ না হলে পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সোয়াদের বাবা মুকুল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘শিক্ষক মারধর করুক। সেটা নিয়ে আমার আপত্তি নাই। লেখাপড়ার জন্য যদি মারতো তবে আমার কোনো অভিযোগ থাকতো না। কিন্তু মারারও তো ধরণ আছে। এভাবে রক্তাক্ত জখম করবে আমি বাবা হিসেবে এটা মেনে নিতে পারছি না। আমি এর বিচার চাই।’’
কানাইয়েরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ‘‘আমি ওই সময় অফিসে ছিলাম। ঘটনা জানতে পেরে ক্লাসে গিয়ে শুনি সোয়াদ বাড়ি চলে গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’
অভিযুক্ত শিক্ষক কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে মৌখিক ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে গেছে।’’
হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘ক্লাস চলাকালীন বারবার বাইরে যাচ্ছিল আর আসছিল। চড় মারতে গিয়ে বাচ্চাটার নাকে লেগে রক্ত বেরিয়েছে। এটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। এ জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’’
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চাটমোহর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘বিষয়টি দুঃখজনক। আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’
শাহীন//