২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটি থেকে প্রবাসী আয় প্রেরণের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করেছেন। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসা কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খাত–সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ।

আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেও বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, প্রবাসী আয় প্রেরণের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে বিশ্ববাজারে উৎস দেশের বড় বাঁকবদল হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে বড় বড় এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো তা যুক্তরাষ্ট্র থেকে গন্তব্য দেশে প্রেরণ করছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় প্রেরণে করারোপ করা হলে আবারও তা উৎস দেশ থেকে গন্তব্য দেশে প্রেরণ করা হবে।    

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ১৪৪ দশমিক ৪৯ কোটি মার্কিন ডলার, যা মোট প্রবাসী আয়ের প্রায় ১৮ শতাংশ। গত জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকে দেশে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছে ৮০১ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৬২৭ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ।

এদিকে গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ৩৩ কোটি ৭ লাখ ডলার। তাতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২৭ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের পর গত জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউএই থেকে। দেশটি থেকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এসেছে প্রায় ১০৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়। একই প্রান্তিকে সৌদি থেকে এসেছে প্রায় ১০৫ কোটি ডলার; যুক্তরাজ্য থেকে ৯৭ কোটি ডলার; মালয়েশিয়া থেকে ৬৩ কোটি ডলার; কুয়েত থেকে ৪৬ কোটি ডলার; ওমান থেকে ৪৪ কোটি ডলার; ইতালি থেকে ৪০ কোটি ডলার এবং কাতার থেকে এসেছে ৩১ কোটি ডলার।  

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির পেছনে যেসব বিষয় বড় ভূমিকা রেখেছে, তার মধ্যে অন্যতম হুন্ডি বা অনানুষ্ঠানিক পথের ব্যবহার কমে আসা, ব্যাংকগুলোর প্রতিযোগিতামূলক বিনিময় হার ও প্রণোদনার সহজলভ্যতা; ঈদুল ফিতরে প্রবাসীদের বাড়তি অর্থ পাঠানো। ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত ডলারের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বিনিময় হারের মধ্যে পার্থক্য কমে আসায় এই বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানো বেড়েছে।

গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে প্রবাসী আয় আসার দিক থেকে শীর্ষে উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্র। ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন প্রবাসী আয় প্রেরণকারী বৈশ্বিক বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন দেশের ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রবাসী আয় কিনে নেয়। পরে সেসব আয় একত্র করে নির্দিষ্ট একটি দেশ থেকে তা গন্তব্য দেশে পাঠায়। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান অ্যাগ্রিগেটেড (সমন্বিত) পদ্ধতিতে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে প্রেরণ করে।

বাংলাদেশে প্রবাসী আয় প্রেরণে শীর্ষে উঠে আসা যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে প্রবাসী আয় প্রেরণে করারোপের ঘোষণা দেওয়ায় তাই এ নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, দেশের অর্থনীতির ইতিবাচক দিকগুলোর একটি প্রবাসী আয়। এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসে। এমন সময়ে দেশটি যদি প্রবাসী আয় প্রেরণের ওপর কর আরোপ করে, তা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক হবে। তাই এখন থেকেই আমাদের বিকল্প চিন্তা করতে হবে, কীভাবে প্রবাসীদের প্রণোদনা দেওয়া যায়। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেও তার প্রভাব কম পড়বে।  

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় প্রেরণে কর
বাণিজ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের পর এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের ওপর ৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন। ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ নামে হাউস বাজেট কমিটিতে অনুমোদিত আইনের আওতায় এই কর আরোপ করা হবে।

এই আইনে মার্কিন নাগরিক ছাড়া সব অভিবাসীর পাঠানো প্রবাসী আয়ে করারোপ করা হবে। গ্রিন কার্ডধারী ও এইচ-১বি ভিসাপ্রাপ্তরাও এর আওতায় পড়বেন। কর আরোপের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সীমা নির্ধারণ করা হয়নি, অর্থাৎ ছোট অঙ্কের অর্থ পাঠালেও কর প্রযোজ্য হবে। ফলে বাংলাদেশিদের প্রেরিত প্রবাসী আয়েও এই কর প্রযোজ্য হবে। সিএনবিসি টিভি ১৮ ডট কমের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র প রথম র প রব আয় র প কর র প র প কর প রব স

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন