রাস্তাজুড়ে থই থই করছে জোয়ারের পানি। সেই পানিতে বেশ নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করছে একটি মায়া হরিণ। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকে জানতে চাইছেন, হরিণটি কীভাবে এল? জোয়ার বাড়তে থাকলে কী হবে প্রাণীটির?

দৃশ্যটি নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপের। আজ বৃহস্পতিবার সকালে দ্বীপের এক বাসিন্দা ভিডিও ধারণের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় তলিয়ে গেছে নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার এলাকার রাস্তাঘাট। আর সেই পানিতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে হরিণটিকে। বন বিভাগের লোকজন হরিণটির দেখাশোনা করেন। দ্বীপের নামার বাজার এলাকায় বন বিভাগের কার্যালয়ের নিচেই থাকে এটি। বেড়াতে আসা পর্যটকেরা হরিণটির সঙ্গে ছবিও তোলেন।

জোয়ারের পানিতে হরিণ ঘুরে বেড়ানো প্রসঙ্গে নিঝুম দ্বীপ বন বিটের কর্মকর্তা মো.

সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, হরিণটি এ রকম জোয়ারের পানিতে ঘুরে বেড়াতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। পানি খুব বেশি বেড়ে গেলে সে নিজেই উঁচু জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। আবার পানি কমে গেলে নেমে আসে। তাই হরিণটিকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার দরকার পড়ে না।

এদিকে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল বুধবার রাত থেকেই নোয়াখালী জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে বইছে প্রবল ঝোড়ো বাতাস। স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে গেছে জেলার হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপসহ বেশ কিছু এলাকা।

জানা গেছে, আজ সকাল থেকেই হাতিয়ার বিভিন্ন এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকতে থাকে। দুপুরের দিকে বাড়তে থাকে জোয়ারের উচ্চতা। নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার, বন্দরটিলা বাজারসহ বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি উঠেছে অনেক বাড়িঘরেও।

নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দা মো. জামসেদ প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুপুরে জোয়ারের পানিতে দ্বীপের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে দ্বীপের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র নামার বাজার ও বন্দরটিলা বাজারও। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে অনেক বাড়িঘর। এতে দ্বীপের মানুষজন সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।

এদিকে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে হাতিয়ার নলচিরা ঘাট। স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রবল বৃষ্টি ও নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে ঘাটের আশপাশের এলাকা তলিয়ে গেছে। তবে কোথাও কোনো প্রাণহানি কিংবা উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

জোয়ারে প্লাবিত হাতিয়ার নলচিরা ঘাট। আজ দুপুরে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল ব ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ