ভিক্ষা করেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মেলে না স্বামীর ভাতা
Published: 30th, May 2025 GMT
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন কাটাচ্ছেন জোবেদা বেগম নামে এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। সরকারি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর স্বামীর নামে দেওয়া ভাতা সুবিধা পাচ্ছেন না তিনি। অভিযোগ উঠেছে, জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সেজে জোবেদার স্বামীর ভাতা তুলে নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর এলাকায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার ছেলে আব্দুল জব্বার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে জোবেদা বেগমের স্বামী মফিজুল ইসলাম ভারতের মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তাঁর ভারতীয় তালিকা নম্বর ৩৯৭০৩। প্রশিক্ষণ শেষে ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নেন মফিজুল। দেশ স্বাধীনের পরপরই তাঁকে নীলফামারীতে শেষবারের মতো দেখেছিলেন মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেওয়া সহযোদ্ধারা। এরপর আর তিনি বাড়িতে ফিরে আসেননি। ধারণা করা হয়, তিনি মারা গেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলামের বাড়িতে ফিরে না আসার সুযোগ নেন উত্তর দলদলিয়া ইউনিয়নের কুটিপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম।
আব্দুল জব্বার জানান, তাঁর বাবার ভারতীয় তালিকার ৩৯৭০৩ নম্বর ব্যবহার করে নিয়মিত ভাতা তুলছেন মফিজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। বিষয়টি তিনি জানতে পারেন তাঁর বাবার সঙ্গে ভারতে ট্রেনিং নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে। এরপর তিনি ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। তৎকালীন উলিপুর ইউএনওর নির্দেশে বিষয়টি তদন্ত করেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। কিন্তু সমাজসেবা কর্মকতা সে সময় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা দলদলিয়া ইউনিয়নের কুটিরপাড়া গ্রামের মফিজুল ইসলামের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দেন।
আব্দুল জব্বার জানান, ঠেলাগাড়ি চালিয়ে সন্তানদের নিয়ে কোনো রকমে তাদের দিন কাটছে। অনটনের সংসারে তাঁর মা আজও বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করেন। তিনি অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
উলিপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ, একই নাম ও বাবার নাম মিলে যাওয়ায় এবং দীর্ঘ সময় মুক্তিযোদ্ধার দাবিদার থাকার সুযোগ নিয়েছেন মফিজুল ইসলাম নামে অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। ভারতীয় তালিকার ঠিকানা অনুযায়ী অনন্তপুর হাতিয়া ইউনিয়নের মফিজুল ইসলাম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। অন্য ইউনিয়নের কেউ ভারতীয় তালিকার ওই নম্বর ব্যবহার করতে পারেন না।
ভারতে মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেওয়া চার মুক্তিযোদ্ধাও মফিজুল ইসলামের স্ত্রী ও সন্তানের পক্ষে সমকালকে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.
অভিযোগ অস্বীকার করে মফিজুল ইসলাম বলেন, তিনি ২০১০ সালে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ভোগ করে আসছেন। ২০২৩ সালে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী দাবিদার জোবেদা বেগম নামে একজন তাঁকে ভুয়া প্রমাণ করতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তিনি সঠিক মুক্তিযোদ্ধা বলে সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, তিনি কাগজপত্র ও ভাতাভোগী মফিজুল ইসলামের সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। তদন্তের সময় জোবেদার পক্ষে কেউ সাক্ষ্য দেয়নি।
উলিপুরের ইউএনও নয়ন কুমার সাহা বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত উল প র ব ষয়ট উপজ ল তদন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
বাংলাদেশে পুলিশে পেশাদারি মনোভাব গড়ে না ওঠার জন্য এই বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারকে দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, বিভাজিত সমাজে ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’—এমন নানা তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
নিজের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি দুই সরকারপ্রধানের (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই কাজ করেছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে একটা ভদ্রতা, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হয়। দেখা করলে অনেক কথার পরও বা অল্প কথার পরও ‘এ কি আমাদের?’—এমন কথা শুনলে প্রথমেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’
সরকারের পরিবর্তনে পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাবিত হওয়ার উদাহরণ দিয়ে মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বাড়ি ফরিদপুর যদি হয় বা ফরিদপুরের আশপাশে হয়, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে না। আবার আরেক সময় বগুড়ায় বাড়ি, ঝিনাইদহে বাড়ি, দিনাজপুরের বাড়ি, তাহলে চাকরিতে নেওয়া যাবে না বা ক্ষেত্রবিশেষে পদোন্নতি হবে না।’ এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার বা পেশাদারি মনোভাব ফেরানো কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘এক অদ্ভুত ব্যাপার। এখানে দুই হাজারের মতো লোক মারা গেল। অথচ বিহেভিয়ারে চেঞ্জ নেই।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার অন্তরায় হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতি এবং সমাজে বিভাজনকে চিহ্নিত করেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই যে প্রচুর সংখ্যার লোক পয়সা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে বা এখানে হলে...অনেক পয়সা হয়, এই অ্যাটিচিউড (আচরণ) থাকলে তো ল এনফোর্সমেন্ট (আইনশৃঙ্লা নিয়ন্ত্রণ) মুশকিল। আর ল এনফোর্সমেন্টের আরেকটা বড় জিনিস হচ্ছে আমি যে সমাজে কাজ করতে যাচ্ছি, সেই সমাজ কতখানি বিভাজিত।’
সংস্কারের পটভূমিতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কর্মপদ্ধতি জানতে চেয়েছেন নুরুল হুদা। পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম বৈঠকে অংশ নেন।