পুলিশ লাইনসগুলো গোপন কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছিল: নূর খান
Published: 1st, November 2025 GMT
মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশের বিভিন্ন জেলার পুলিশ লাইনসগুলো গোপন কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছিল। এসব গোপন কারাগারে বিভিন্ন জেলা ও বিভিন্ন জেল থেকে মানুষদের এনে নির্যাতন করা হতো।
মো. নূর খান বলেন, ‘পুলিশ লাইনস বলে একটা জিনিস আছে জেলায়। এই পুলিশ লাইনসগুলো গোপন কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছিল। কীভাবে এটা সম্ভব? কীভাবে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নানা জেলা থেকে মানুষকে নিয়ে টর্চার করা হতো।.
‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন মো. নূর খান। আজ শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মো. নূর খান উদাহরণস্বরূপ বগুড়া ও বাগেরহাটের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সাম্প্রতিককালে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে যেয়ে এসব তথ্য পেয়েছেন। এসব ঘটনার সঙ্গে বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও দেশ পরিচালনাকারীরা সরাসরি জড়িত ছিলেন।
পুলিশের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে পুলিশ সংস্কার কমিশনের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার ওপর জোর দেন নূর খান। তিনি বলেন, ‘পুলিশকে যদি আপনি তার মতো চলতে দিতে পারেন এবং সেখানে কমিশনের যদি একটা হস্তক্ষেপ থাকে অর্থাৎ কমিশন যদি বিষয়গুলো জানে ও তারা যদি পদক্ষেপ নিতে পারে, তাহলে এই জায়গাটায় কিছুটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স (ভারসাম্য রক্ষা) হবে। পদায়নের ক্ষেত্রে একই অবস্থা হবে।’
সুশীল সমাজের যারা পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো জানেন, বোঝেন ও সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন, তাঁদের পুলিশ সংস্কার কমিশনে যুক্ত করার পরামর্শ দেন এই মানবাধিকারকর্মী।
পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দেন মো. নূর খান। পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীতে সত্যিকারের পরিবর্তনের জন্য সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো পুলিশ বাহিনীর রাজনীতিকীকরণ করবে না, এমন প্রতিশ্রুতিও দিতে হবে।
শুরুতে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
গোলটেবিলে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী।
এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম এ বৈঠকে অংশ নেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
বাংলাদেশে পুলিশে পেশাদারি মনোভাব গড়ে না ওঠার জন্য এই বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারকে দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, বিভাজিত সমাজে ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’—এমন নানা তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
নিজের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি দুই সরকারপ্রধানের (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই কাজ করেছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে একটা ভদ্রতা, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হয়। দেখা করলে অনেক কথার পরও বা অল্প কথার পরও ‘এ কি আমাদের?’—এমন কথা শুনলে প্রথমেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’
সরকারের পরিবর্তনে পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাবিত হওয়ার উদাহরণ দিয়ে মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বাড়ি ফরিদপুর যদি হয় বা ফরিদপুরের আশপাশে হয়, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে না। আবার আরেক সময় বগুড়ায় বাড়ি, ঝিনাইদহে বাড়ি, দিনাজপুরের বাড়ি, তাহলে চাকরিতে নেওয়া যাবে না বা ক্ষেত্রবিশেষে পদোন্নতি হবে না।’ এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার বা পেশাদারি মনোভাব ফেরানো কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘এক অদ্ভুত ব্যাপার। এখানে দুই হাজারের মতো লোক মারা গেল। অথচ বিহেভিয়ারে চেঞ্জ নেই।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার অন্তরায় হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতি এবং সমাজে বিভাজনকে চিহ্নিত করেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই যে প্রচুর সংখ্যার লোক পয়সা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে বা এখানে হলে...অনেক পয়সা হয়, এই অ্যাটিচিউড (আচরণ) থাকলে তো ল এনফোর্সমেন্ট (আইনশৃঙ্লা নিয়ন্ত্রণ) মুশকিল। আর ল এনফোর্সমেন্টের আরেকটা বড় জিনিস হচ্ছে আমি যে সমাজে কাজ করতে যাচ্ছি, সেই সমাজ কতখানি বিভাজিত।’
সংস্কারের পটভূমিতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কর্মপদ্ধতি জানতে চেয়েছেন নুরুল হুদা। পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম বৈঠকে অংশ নেন।