‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণকে টেকসই করতে হলে সুশাসনের বিকল্প নেই’
Published: 31st, May 2025 GMT
কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় স্থানীয় কৃষি খাতকে আরো রপ্তানিমুখী করতে হবে।”
তিনি বলেন, “স্বল্পোন্নত দেশ হতে মসৃণ ও টেকসই উত্তরণে কৃষি, শিল্প এবং সুশাসনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণকে টেকসই করতে হলে সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই।”
শনিবার (৩১ মে) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে ‘লোকাল লেভেল স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন অন ইনক্লুসিভ স্মুথ অ্যান্ড সাস্টেইনেবল এলডিসি গ্রাজুয়েশন’ শীর্ষক কর্মাশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
রোগ প্রতিরোধে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
বিএনপিকে যমুনায় ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ তথা ইআরডির সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) এ কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ড.
কর্মশালায় শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “মুন্সীগঞ্জে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসমূহ বিকাশের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।”
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার উন্নয়ন অভিজ্ঞতার ওপর আলোকপাত করে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি শক্তিশালীকরণে গুরুত্ব আরোপ করেন।
উত্তরণের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের সক্রিয় উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বক্তব্য দেন ইআরডি সচিব মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী। তিনি বলেন, “মুন্সীগঞ্জ জেলায় একটি বায়োটেকনোলজি ভিলেজ স্থাপনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।”
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের সভাপতিত্বে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এএইচএম জাহাঙ্গীর।
কর্মশালায় ‘এন ওভারভিউ অব এলডিসি গ্রাজুয়েশন প্রসেস অ্যান্ড ইটস ইমপ্লিকেশন’-বিষয়ে একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন সরকারের প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের কম্পোনেন্ট ম্যানেজার ড. মো. রেজাউল বাসার সিদ্দিকী।
‘স্ট্যাটাটিজ ফর স্মুথ অ্যান্ড সাস্টেইনেবল গ্রাজুয়েশন অ্যান্ড দ্যা রুল অব লোকাল লেভেল স্টেকহোল্ডার’-শীর্ষক অপর আরেকটি উপস্থাপনা প্রদান করেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ও এসএসজিপি প্রকল্পের কম্পোনেন্ট ম্যানেজার ড. মোস্তাফা আবিদ খান।
কর্মশালায় প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন- সরকারের প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এক্সপার্ট নেছার আহমেদ, সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নাজমুন নাহার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মাহমুদুর রহমান খন্দকার, ইউনুছ খান মেমোরিয়াল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ফরিদুর রহমান খান, ইউনুস গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস, শিল্পপতি মোশারফ হোসেন পুস্তি, মুন্সীগঞ্জ ফাইভার নেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঈনউদ্দিন মাসুদ।
কর্মশালায় আলোচকরা উল্লেখ করেন- মুন্সীগঞ্জে কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও পর্যটন শিল্প বিকাশের অপরিসীম সুযোগ রয়েছে। সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, কলকারখানাসমূহে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ সুনিশ্চিতকরণ এবং স্থানীয় মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।
ঢাকা/রতন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট র রহম ন খ প রকল প র উপদ ষ ট সরক র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী চীন পাঠাচ্ছে কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল
চীনের সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য দেশটির কাছে ঋণও চেয়েছে ঢাকা। এ প্রকল্পে বেইজিংয়েরও আগ্রহ আছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সরেজমিনে তিস্তা প্রকল্প যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশে আসছে চীনের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল।
আজ সোমবার সকালে পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে আলোচনায় এ তথ্য জানান ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের কাছে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। আর এ ঋণের বিষয়ে ইতিবাচক দেশটি। তার পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রকল্পের বিষয়ে চীন যে তীব্র আগ্রহী, তা আসাদ আলম সিয়ামকে জানিয়েছেন ইয়াও ওয়েন। বাংলাদেশও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছে।
চীনের রাস্ট্রদূত জানান, তিস্তা প্রকল্পের বিষয়টিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে তারা কাজ করছেন।
এ ছাড়া বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণসহ অন্যান্য প্রকল্পের বিষয়েও আলোচনা হয়।
# পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে চীন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক # কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাচ্ছে চীনএ ছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেওয়া বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগে (জিজিআই) যোগ দিতে বাংলাদেশকে আগেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চীন। পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠকে জিজিআইয়ের বিস্তারিত এবং এ উদ্যোগ নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্টের আগ্রহের কথা জানানো হয়। আর জুলাই গণ–অভুত্থ্যানের পর বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ প্রায় ৮০ কোটি ডলারের ওপর এসেছে, যা সবচেয়ে বেশি বলেও জানিয়েছেন ইয়াও ওয়েন।
গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর তিস্তা প্রকল্প এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা কমিশনে মে মাসে একটি চিঠি দেয়। তাতে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের ঋণ নেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। পরে গত জুলাইয়ে চীনা দূতাবাসে চিঠি পাঠায় ইআরডি। চিঠিতে ‘কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন অব তিস্তা রিভার প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নে চীনের কাছে ৫৫ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা চলতি বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের আর্থিক চুক্তি সই করতে চায়। এ লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অতীতে আগ্রহ দেখিয়েছিল চীন ও ভারত। ২০২৪ সালের মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়েত্রা তিস্তা প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারও চেয়েছিল, প্রকল্পটিতে যেন ভারত অর্থায়ন করে।
চীন সফর নিয়ে ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘চীন তো রেডি, কিন্তু আমি চাচ্ছি যে এটা ইন্ডিয়া করে দিক, এই প্রজেক্টটা করলে এই প্রজেক্টটার জন্য যা দরকার, ইন্ডিয়া দিতেই থাকবে। ঠিক আছে? যা সাফ সাফ কথা, রাখঢাক নাই।’
তিস্তা প্রকল্পের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে চীন থেকে ঋণ চাওয়া হয়েছে ৫৫ কোটি ডলার। বাকিটা করা হবে সরকারি অর্থায়নে। ২০২৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২০২৯ সালে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।