পুঁজিবাজারের সদস‌্যভুক্ত পাঁচটি ব্রোকারেজ হাউজের সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ‌্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে তিন সদস‌্যের পৃথক ৫টি পরিদর্শন কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত পরিদর্শন কমিটিকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ‌্যে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ব্রোকারেজ হাউজগুলোর নাম হলো- বিডি সানলাইফ সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ব্লুচিপ সিকিউরিটিজ লিমিটেড, গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেড, হেফাজতুর রহমান অ্যান্ড কো.

লিমিটেড এবং হলমার্ক সিকিউরিটিজ লিমিটেড।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গঠিত পরিদর্শন কমিটি ব্রোকারেজ হাউজগুলোর স্টক-ব্রোকার এবং স্টক-ডিলারের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিদর্শন করবে। সেই সঙ্গে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে কি না, তা যাচাই করে দেখা হবে। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে পরিদর্শন কমিটি।

মার্জিন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, নেগেটিভ ইক্যুইটিসহ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, নেতিবাচক ইক্যুইটি, প্রভিশনস (মার্জিন অ্যাকাউন্টের বিপরীতে রক্ষিত তহবিল), প্রভিশনসের ঘাটতি, অনুমোদন ছাড়া লেনদেনসহ আরো বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখবে গঠিত পরিদর্শন কমিটি।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ‌্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিএসইসির জারি করা আদেশ পাঁচটি ব্রোকারেজ হাউজের ব‌্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে।

বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারীর ব্যবস্থা নিয়েছে।

গঠিত পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা হলেন

বিডি সানলাইফ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক অনু দে, সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম ও আমিরুল ইসলাম।

ব্লুচিপ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক সুলতানা পারভিন, সহকারী পরিচালক মো, ইব্রাহীম আলী ও মোহাম্মদ নুরুজ্জামান।

গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির উপ-পরিচালক জিয়াউর রহমান, সহকারী পরিচালক আবু মেহেদি আকবর ও মো. মারুফ হানান।

হেফাজতুর রহমান অ্যান্ড কো. লিমিটেডের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মিথুন চন্দ্র নাথ ও মো. শহীদুল ইসলাম।

হলমার্ক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল্লাহ খান ও মাকসুদা মিলা।

বিএসইসির পরিদর্শনের আদেশ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে যে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে বিডি সানলাইফ সিকিউরিটিজ লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নং- ২৪৮), ব্লুচিপ সিকিউরিটিজ লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নং- ৪৭), গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নং- ৬০), হেফাজতুর রহমান অ্যান্ড কো. লিমিটেড (সিএসই ট্রেক নং- ৪৬) এবং হলমার্ক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের (সিএসই ট্রেক নং- ১১৭) সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুল ১৭ এবং সিকিউরিটিজ অ‌্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০ এর বিধি ১৫ ও ১৬ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন উল্লিখিত বোকারেজ হাউজগুলোর জন্য পৃথক পৃথক তিনজন করে কর্মকর্তাকে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হলো। কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পরিদর্শন সম্পন্ন করবেন এবং কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন। একইসঙ্গে পরিদর্শন প্রতিবেদনের দুইটি হার্ড কপি এবং একটি সফট কপি কমিশনে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

গঠিত পরিদর্শন কমিটি যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে-

গঠিত পরিদর্শন কমিটি ব্রোকারেজ হাউজগুলোর স্টক-ব্রোকার এবং স্টক-ডিলারের সামগ্রিক কার্যাবলী খতিয়ে দেখবে। সেখানে কোনো অসঙ্গতি ঘটেছে কি-না তা যাচাই-বাছাই করবে। 

সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখবে পরিদর্শন কমিটি।

ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক সমস্যা থাকলে সেটাও চিহ্নিত করবে গঠিত পরিদর্শন কমিটি।

মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী গঠিত পরিদর্শন কমিটি ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শেষ হওয়া সময়ের জন্য এএমএল/সিএফটি (অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং/কাউন্টার-টেরোরিজম ফাইন্যান্সিং) সিস্টেম চেক করবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ব্রোকারেজ হাউজগুলো তাদের কার্যক্রম সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী সঠিকভাবে পরিপালন করছে কি-না দেখভালের জন্য পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এটা আমাদের একটা রুটিন ওয়ার্ক। তবে এ পরিদর্শন কার্যক্রমে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে কমিশন আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

ঢাকা/এনটি/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব র ক র জ হ উজগ ল র এসই ট র ক ন ব এসইস র কর মকর ত ক উন ট র ল ইসল ম র রহম ন র জন য করব ন সহক র যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।  

এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর  মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।

এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব  হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।

সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ