শিক্ষার্থীদের জন্য স্মার্ট কার্ড চালু করা দরকার
Published: 1st, June 2025 GMT
একজন ছাত্রী হিসেবে আমি শুধু পড়তেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসিনি, একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে উঠতে এসেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রতিদিন আমার চিন্তা করতে হয় যে পরের দিন কী খাব, কীভাবে অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করব, সেগুলো নিয়ে। শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ বাড়িয়ে শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীদের অর্থসহায়তা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
উন্নত বিশ্বের তুলনায় গবেষণা খাতে আমরা যোজন যোজন পিছিয়ে রয়েছি। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে গবেষণাকাজে যুক্ত হন। আমাদের সেই সুযোগ হয় না। কারণ, এ বাবদ তহবিল বা অর্থায়নের সংকট। পর্যাপ্ত অর্থায়ন পেলে দেশেই অনেকে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ নেবেন। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব স্তরে শিক্ষাবৃত্তি বাড়ানো দরকার। বর্তমানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বছরে ছয় হাজার টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হয়। প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে পান এসব শিক্ষার্থী। এই অর্থ দিয়ে এক সপ্তাহের খাবার ব্যয়ই পূরণ হয় না।
বর্তমানে শুধু বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার সুবিধা রয়েছে। দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের সুবিধা আরও কিছু ক্ষেত্রে দেওয়া প্রয়োজন। আমার প্রস্তাব হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট মেয়াদি স্মার্ট কার্ড করা যেতে পারে। এই কার্ড দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ওষুধ, বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সেবা সাশ্রয়ী মূল্যে (ভর্তুকি) নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশির ভাগ হলের অবস্থা মানসম্মত নয়। হলগুলো উন্নত করা প্রয়োজন। শুধু অবকাঠামো নয়, হলে খাবারের মান, ইন্টারনেটসহ অন্যান্য সেবাও উন্নত করা দরকার। দেশে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খুব বেশি কাজ করা হয় না। অথচ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার মনে হয় শিক্ষা খাতের বাজেটেও এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকা উচিত। আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি খুব বেশি কর্মসংস্থান সহায়ক নয়। চীন, জাপানের মতো দেশ কারিগরি বা ভোকেশনাল শিক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। আমাদেরও এ-সংক্রান্ত নীতিকাঠামো তৈরি করা দরকার।
জুলাই আন্দোলনটা হয়েছে মূলত বৈষম্য সামনে রেখে। ফলে এই বাজেট যেন আবার বৈষম্য বাড়িয়ে না দেয়, সেটি মনে রাখা জরুরি। এ জন্য শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। জুলাই-পরবর্তী সময়ের এই বাজেটে যেন একটা সরকারি দলিল হয়ে থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই আন্দোলন সরকার কাঠামোর কাছে অনেক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিল। এই বাজেটে যেন সেসব প্রশ্নের উত্তর থাকে। ভবিষ্যতে আবার যেন শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামতে না হয়।
সুমাইয়া তাবাসসুম, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ বব দ য ল ব শ বব দ য দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৮৯তম একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে সার্বিকভাবে আসন সংখ্যা কমানোসহ অর্গানোগ্রামে আরো ১৮টি নতুন বিভাগের অন্তর্ভুক্তি, চারটি ইনস্টিটিউট চালু এবং ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ল্যাবভিত্তিক বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা ৪০টি এবং ল্যাববিহীন বিভাগগুলোতে ৫০টি আসন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন ১৮টি বিভাগ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত গুলো হলো—ইসলামিক স্টাডিজ ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ এবং দর্শন বিভাগ। ব্যবসায় অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যবসায়িক তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগ এবং লজিস্টিক ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ। প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, পুরকৌশল বিভাগ এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগ। আইন অনুষদভুক্ত বিভাগটি হলো— অপরাধবিদ্যা বিভাগ।
পাশাপাশি চারটি ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র। এগুলোর গঠন কাঠামোও সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, নিয়মিত অধ্যাপক দুইজন, তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার বা ম্যানেজার একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং একজন ক্লিনার।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্রের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, একজন অতিথি অধ্যাপক, অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার অথবা ম্যানেজার হিসেবে একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং ক্লিনার একজন।
১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২৬ জন করে শিক্ষক রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, “আমরা মিটিংয়ে এগুলো সুপারিশ করেছি। অর্গানোগ্রাম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ডিপার্টমেন্টের জন্য ছাড়পত্র চায়, তারপর কমিশন (ইউজিসি) যদি অনুমোদন দেয়, তখন সেটা অর্গানাগ্রামে যুক্ত হয়। অর্গানোগ্রামে থাকলেই যে বিভাগ হয়ে যাবে, এমন না। একটা অনুমোদন দিয়ে রাখে। এই অনুমোদনের আলোকে আবার যখন দরখাস্ত দেওয়া হয়, তখন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।”
তিনি আরো বলেন, “ইউজিসি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে আসন সংখ্যা কমাতে, যাতে কোয়ালিটি এডুকেশনের নিশ্চিত হয়। তারা ল্যাববেজড বিভাগের জন্য ৪০টি আসন এবং ল্যাববিহীন বিভাগের জন্য ৫০টি আসন বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেছেন, “অনেকগুলো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তবে, এখনই না দেখে বলা যাচ্ছে না। রেজ্যুলেশন পাস হলে বিস্তারিত বলতে পারব।”
ঢাকা/এমদাদুল/রফিক