নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দ বাড়ল ২ হাজার কোটি টাকা
Published: 5th, June 2025 GMT
নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা জানিয়েছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী বছরের জুনের মধ্যে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেটি পড়বে ২০২৫–২৬ অর্থবছরে। এ কারণে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
গত সোমবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ যে বাজেট ঘোষণা করেছেন, তাতে আগামী অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা পরিচালন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ আর ২২৯ কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৭১৬ কোটি টাকা পরিচালন বরাদ্দ ও ৪২৬ কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দ বেড়েছে ১ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা বা ১৫৯ শতাংশ।
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের এই বরাদ্দ নিয়ে অবশ্য কোনো কথা বলেননি। তবে বাজেটের মন্ত্রণালয় ও খাতভিত্তিক বরাদ্দ তালিকায় নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দের এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বরাদ্দের তথ্য অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার সিংহভাগই পরিচালন খরচ বাবদ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে নির্বাচন কমিশনের পরিচালন বাবদ বরাদ্দ ছিল ৭১৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের সেই বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ পরিচালন খরচ বাবদ আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ২ হাজার ১১ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখেই নির্বাচন কমিশনের জন্য পরিচালন বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। যার বড় অংশই খরচ হবে নির্বাচন আয়োজনের কাজে।
দেশে সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি। সেটি ছিল ২০২৩–২৪ অর্থবছর। ওই বছর নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। যার মধ্যে পরিচালন খরচ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ ছিল ২০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২৪ সালের সর্বশেষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের জন্য পরিচালন খরচ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এ বাবদ বরাদ্দ ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর দ দ ব ড় বর দ দ ছ ল বর দ দ র
এছাড়াও পড়ুন:
‘রাষ্ট্রীয় শোক’ প্রত্যাখ্যান
গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন–নিপীড়ন–হয়রানি চলছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ক তখনো আটক ছিলেন ডিবি কার্যালয়ে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারি উদ্যোগে লোকদেখানো ‘রাষ্ট্রীয় শোক’ পালন করা হচ্ছিল ৩০ জুলাই। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের এই কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে সেদিন ‘মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং তা অনলাইনে প্রচারের কর্মসূচি’ পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলি ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে ২৯ জুলাই রাত (২০২৪ সাল) থেকেই ফেসবুকের প্রোফাইলে লাল রঙের ফ্রেম ব্যবহার শুরু হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, লেখক, সাংবাদিক, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানান।
ফেসবুকে অভূতপূর্ব সাড়ার পাশাপাশি নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এবং হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ৩০ জুলাই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস ও সড়কে মিছিল করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দিতে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকার করা রিটের শুনানিতে ৩০ জুলাই হাইকোর্ট মন্তব্য করেন ‘এসব মৃত্যু আমাদের সবার জন্যই দুঃখজনক’।
সেদিন দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা)। অধ্যাপক আসিফ নজরুল (বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা), টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মানবাধিকারকর্মী
শিরীন হক, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর যে মাত্রায় বলপ্রয়োগ ও সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমণ করা হয়েছে, তা দেশের জনগণ ও বিশ্ববিবেককে স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করেছে।’
অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ দেওয়া ও আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ৩০ জুলাই বিবৃতি দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গণ–অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলো সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের (বর্তমানে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক) চলতি জুলাই মাসের ৬ তারিখ রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ২৯ জুলাই (২০২৪ সাল) সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় শোক এবং কালো ব্যাজ ধারণের ঘোষণা দেওয়ার পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। নাছির উদ্দীন তাঁকে রাষ্ট্রীয় কালো ব্যাজের বিপরীতে লাল ব্যাজ ধারণের প্রস্তাব দেন। পরে মো. আবু সাদিক কায়েমকে (ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা) ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন আবদুল কাদের। সাদিকও সম্মতি দেন। নাছির উদ্দীন ও আবু সাদিকের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেই মুখে–চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা ও তা অনলাইনে প্রচার করার কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছিল।